সুন্দরবন! এর functionality শুধুই কি বাংলাদেশীদের জন্য? এটি বিশ্ববাসীর জন্য রব্বুল আলামিনের এক অপরূপ-অপরিহার্য নেয়ামত! বিপর্যয় ঠেকাবে কে বা কারা? দায়িত্ব কার? অন্যের অপরাধের দায় কি আমার? কী বলেন আমাদের রব?

আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শন হিসাবে নদী- বৃষ্টি (Rivers-Rain as signs of  Rab's creation:):

নদ-নদীর কথা আল কোরআনে প্রায়ই আশীর্বাদ এবং জান্নাতের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলিকে righteous-দের জন্য জীবিকা, সৌন্দর্য এবং পুরস্কারের উত্স হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।  আল কোরআন বিশ্বাসীদেরকে বন ও নদীর মতো প্রাকৃতিক উপাদানের আন্তঃনির্ভরতা (interconnectedness) সম্পর্কে চিন্তা করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এই আন্তঃসংযুক্ত ব্যবস্থাগুলি জীবনকে টিকিয়ে রাখে এবং রব্বুল আলামিনের প্রজ্ঞা এবং সৃজনশীল শক্তির প্রমাণ প্রদান করে। এই উপাদানগুলির উপর চিন্তা-ভাবনা করার মাধ্যমে, বিশ্বাসীদের তাদের বিশ্বাসের অংশ হিসাবে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সম্মান করার জন্য তাদের কর্তব্য স্বীকার করতে উত্সাহিত করা হয়েছে। উদাহরণ অন্তর্ভুক্ত:

প্রফেসর ড. মো: আবদুল্লাহেল বাকী (প্রাণীবিদ্যা বিভাগ, জাবি)-এর আকর্ষনীয় তথ্যমূলক বক্তব্য-এর একটি ভিডিও দেখুন পোষ্টের নিচের দিকে- 

উলিল আলবাবদের ভাবনায় যা থাকছে (Thinking of Intellectual bodies):

নদী জীবনকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে (Rivers sustaining life):

• তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি নাযিল করেছেন, এরপর পৃথিবীর মধ্যে সেটাকে স্রোতধারারূপে প্রবাহিত করেছেন, তারপর সেটা দ্বারা বিচিত্র বর্ণের শস্য উৎপাদন করেন, তারপর সেটা শুকিয়ে যায়। এরপর তুমি সেটাকে হলদেটে দেখতে পাও, তারপর তিনি সেটাকে খড়কুটায় পরিণত করেন। নিশ্চয়ই সেটার মধ্যে অবশ্যই বোধসম্পন্নদের জন্য শিক্ষা রয়েছে-আল কোরআন 39:21

জান্নাতে নদী: নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা নিরাপদ আবাসস্থলের মধ্যেই; বাগানসমূহ ও ঝর্ণাধারার মধ্যেই;-আল কোরআন 44:51-52 (e.g., 2:25, 3:15, 9:72) 

আয়াত: বন-গাছ-বাগান (Garden-Forests and Trees in the Quran):

• আর তিনিই, যিনি আকাশ থেকে পানি নাযিল করেন, এরপর এর মাধ্যমে আমরা সকল প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করি, এরপর তা হতে সজীবতা বের করি। আমরা তা হতে বের করি সন্নিবিষ্ট দানা। এবং খেজুর গাছের, তার মঞ্জরি থেকে ঝুলন্ত কাদি এবং সদৃশ ও বিসদৃশ আঙ্গুরের ও যাইতুনের এবং আনারের উদ্যান। তোমরা লক্ষ করো সেগুলোর ফলের দিকে যখন তা ফলবান এবং পরিপক্ক হয়। নিশ্চয়ই সেসবের মাঝে এমন জনগোষ্ঠীর জন্য অবশ্যই নিদর্শনসমূহ রয়েছে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে- আল কোরআন 6:99 (24:35)

• নিশ্চয়ই আমরা, আমরাই পানি বর্ষণ করেছি, পর্যাপ্ত বর্ষণ। তারপর আমরা ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি, সম্পূর্ণ বিদীর্ণ। এরপর আমরা তার মধ্যে উৎপন্ন করেছি শস্য; এবং আঙুর ও শাক—সবজি; এবং যাইতুন ও খেজুর; এবং ঘন গাছপালা বিশিষ্ট বাগানসমূহ; আর ফলমূল ও তৃণ; তোমাদের জন্য ও তোমাদের গৃহপালিত পশুদের জন্য ভোগ্যসামগ্রী হিসাবে-আল কোরআন 80:25-32

• এবং আমরা আকাশ থেকে বরকতময় পানি নাযিল করি। এরপর তা দিয়ে বাগানসমূহ ও কর্তনযোগ্য শস্যদানা উৎপন্ন করি। এবং সুউচ্চ খেজুর গাছ, যার রয়েছে থোকা থোকা শীষ। বান্দাদের জন্য রিযিকস্বরূপ। এবং আমরা তা দিয়ে মৃত বাসভূমিকে জীবন দান করি। ওভাবেই উত্থান- আল কোরআন 50:9-12 

অপরাধী-ধ্বংসাত্ত ককর্মকান্ডের অংশীদারদের এহেন কার্যকলাপ বিশেষ করে পাহাড়-টিলা কাঁটা, গাছ কাঁটা, বন-জঙ্গল উজাড় করা-নদী ভরাট, উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিক জলাভুমি ভরাট করে ফেলা ঠেকাতে হবে এই কারনে যে- আল্লাহ সু.তা. আমাদেরকে বলেন-

আল-কোরআনে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সৃষ্টিজগতের প্রতি যত্নশীল হওয়ার বিষয়ে বহু আয়াতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ যেমন গাছপালা, পাহাড়, নদী, এবং পুরো পরিবেশের সংরক্ষণকে ইসলামের মূলনীতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এখানে কয়েকটি প্রাসঙ্গিক আয়াত এবং ইসলামী দৃষ্টিকোণ উল্লেখ করা হলো:

• তিনিই, যিনি তোমাদেরকে পৃথিবীর মধ্যে স্থলাভিষিক্ত (খলিফা নিযুক্ত) করেছেন- আল কোরআন 35:39 

সুন্দরবনে গোপনে হরিণ শিকার বাড়ছে- 

পড়ার জন্য ক্লিক করুন: https://www.ittefaq.com.bd/714761

১. সৃষ্টিজগতের ভারসাম্য রক্ষা:

আল্লাহ সৃষ্টিজগতকে এক সুনির্দিষ্ট ভারসাম্যের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন এবং তা রক্ষা করার দায়িত্ব মানুষের ওপর অর্পণ করেছেন:

• আল-কোরআন, সুরা আর-রহমান (৫৫:৭-৯):

• "তিনি আকাশকে উন্নত করেছেন এবং তিনি ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। তোমরা যেন ভারসাম্যে বিঘ্ন সৃষ্টি না করো। এবং ওজন সঠিকভাবে করো এবং ওজনে কম দিও না।"

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করা যেমন অকারণে বন উজাড়, নদী ভরাট, বা পাহাড় ধ্বংস করা, এটি আল্লাহর নির্দেশনার বিরোধিতা।

২. পৃথিবী ধ্বংস না করা:

ইসলাম স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছে পৃথিবীকে ধ্বংস করার বা এতে অকারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার বিষয়ে:

• আল-কোরআন, সুরা আল-আরাফ (৭:৩১):

  "খাও এবং পান কর, তবে অপচয় করো না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।"

• সুরা আল-বাকারাহ (২:২০৫):

  "যখন সে চলে যায়, তখন পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, এবং শস্য ও বংশ ধ্বংস করতে চায়। অথচ আল্লাহ বিশৃঙ্খলাকে পছন্দ করেন না।"

এই আয়াতগুলো পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণে মানুষের দায়িত্বের প্রতি গুরুত্বারোপ করে।

3. সৃষ্টিজগতের প্রতি যত্নশীলতা:

প্রকৃতির প্রতিটি সত্তা আল্লাহর প্রশংসা করে, যা কোরআনে উল্লেখ আছে:

• সুরা আল-ইসরা (১৭:৪৪):

  "সাত আকাশ, পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যা আছে, সবই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে।"

  এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি সহিংসতা বা ধ্বংস করার অর্থ আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করা।

ইসলামের বার্তা:

পরিবেশ রক্ষা করা এবং প্রকৃতির প্রতি সহনশীল আচরণ করা ইসলামের একটি মৌলিক নীতি। অকারণে বন উজাড়, নদী ভরাট, গাছ কাটা বা দূষণের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টির ভারসাম্য নষ্ট করা গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য। সুতরাং, প্রকৃতি রক্ষায় সচেতন হওয়া প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব। 

------------------------

সমষ্টিগত জবাবদিহিতা: বিপর্যয় ঠেকানোর ব্যবস্থাপনা: Collective Accountability:

নীচের এই আয়াতটি বিশ্বাসীদের মনে করিয়ে দেয় যে, তারা যদি পদক্ষেপ না নিয়ে অন্যায়, দুর্নীতি বা মন্দকে জয়ী হতে দেয়, তাহলে ফলাফল শুধু অপরাধীদের নয়, সবাইকে প্রভাবিত করতে পারে, ভুক্তভোগী হতে হবে সবাইকে। অন্যায়ের মুখে নীরবতা বা নিষ্ক্রিয়তা ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

• আর তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা তোমাদের মধ্য থেকে যারা অবিচার করেছে বিশেষ করে তাদেরকেই আক্রান্ত করে না। আর জেনে রাখ যে, আল্লাহ‌ শাস্তিদানে কঠোর- আল কোরআন 8:25

এখানে "ফিতনা-fitnah" শব্দটি নৈতিক, সামাজিক বা আধ্যাত্মিক দুর্নীতির কারণে উদ্ভূত পরীক্ষা, দুর্দশা বা ঝামেলাকে বোঝায়।  এই বিচার বা শাস্তি শুধুমাত্র অন্যায়কারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ব্যর্থ হলে সমগ্র সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করবে।

• তোমরা আল্লাহর রিযিক থেকে খাও এবং পান করো। আর বিপর্যয়কারী হয়ে পৃথিবীর মধ্যে তোমরা অনাচার কোরো না- আল কোরআন 2:60

• তোমরা জুলুম করবে না আর তোমরা জুলুমের শিকার হবে না- আল কোরআন 2:279 

অন্যায়-অপরাধ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেন সোচ্চার হতে হবে? কারন আল্লাহ সু. তা. এর নির্দেশ এমনটিই-

• অতএব, তোমাদের পূর্বের প্রজন্ম থেকে অবশিষ্টরা কেন ছিল না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় করা থেকে নিষেধ করত? অল্পসংখ্যক ছাড়া, তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে আমরা রক্ষা করেছিলাম! আর যারা জুলুম করেছিল তাদেরকে সেখানে যে ভোগবিলাস দেয়া হয়েছিল, তারা সেসবেরই অনুসরণ করেছিল। আর তারা ছিল অপরাধী-আল কোরআন 11:116

[এখানে, আল কুরআনে "بَقِيَّة" (বাক্বিয়াহ) শব্দটির ব্যবহার করা হয়েছে। যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাঁদের গুরুত্বের উপর জোর দেওয়ার জন্য]

 Video

প্রাকৃতিক জগতের অংশ হিসেবে বন ও নদীকে আল কোরআনে রবের সৃষ্টির প্রকাশ, মানবতার জন্য আশীর্বাদ এবং জান্নাতের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়েছে। তারা আল্লাহর শক্তি এবং পৃথিবীর যত্ন নেওয়ার জন্য মানবতার দায়িত্বের অনুস্মারক (humanity's responsibility to care) হিসাবে কাজ করে।

আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন!

সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের রব আল্লাহর জন্য-

Al Quran 10:10