পাত্র-পাত্রী নির্বাচন: মুসলিমদের বিবাহ-সাদী – কে কার সাথে? উত্তম বিবাহ ও সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য কুরআনি দোয়া🤲

✨ আল-কুরআনে মুসলিমদের বিবাহ: উত্তম বিবাহ ও সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য কুরআনি দোয়া💍


📌 বিবাহের নিষেধাজ্ঞা যে বা যার সংঙ্গে   


✅সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য কুরআনি দোয়া 🤲


💕পরিবার শুদ্ধা জান্নাতের অফার যাদের জন্য!


🔥 সঠিক জীবনসঙ্গী নির্বাচন করুন, আল কুরআনিল হাকীমের  আলোকে সুখী দাম্পত্য জীবন গড়ুন! 💕✨


📌তবে, মুসলিম কাকে বলে? মুসলিমের সংজ্ঞা কী? 
 আল কুরআন ভিত্তিক ঈমান আনতে হবে?



📌পাত্র-পাত্রীর যোগ্যতা: পাত্র-পাত্রীর শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা কেমন হওয়া উচিত, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমরা আল-কোরআনের এক কাহিনী থেকে শিক্ষা নিতে পারি (বিস্তারিত জানতে দেখুন পোষ্টের শেষের অংশ)।


🔥বিবাহের সামর্থ: আর যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে না তারা যেন বিরত থাকে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে অভাবমুক্ত করেন-সূরা আন নূর ২৪:৩৩

(অনুগ্রহ (ফাডল) চাইতে বলা হয়েছে এবং শর্ত জানতে দ্র: আয়াত ২:২৬৮, ৭১:১০-১২, ৪৬:৩১, ৯:২৮, ৪২:২৮, ২:১৫৩, ২:৪৫, সামর্থ চেয়ে দুআ-দ্র:)
✨🌿 · · · ✦ · · · 🌿✨

💡বৈবাহিক জীবন  তথা দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক understanding এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর সঙ্গে ইবাদত, তাকওয়া তথা সাওম (ছিয়াম)-এর সম্পর্ক গভীরভাবে জুড়ে দেয়া আছে (দ্র: সূরা আল-বাকারা ২:১৮৭, ৪৩:৭০)।  তাইতো বিবাহ ও দাম্পত্য জীবনের ভাবনার বিষয়ে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তা করা অপরিহার্য, একজন মুসলিম/মুসলিমা হিসাবে পরিবারশুদ্ধা।

💡চারিদিকে যখন পরকীয়া আর সীমা লংঘনের ছড়াছড়ি তখন বিবাহের আগে ও পরে, একজন মুসলিম নর বা নারীর জন্য আত্মসংযম ও আত্মসংগ্রাম (জিহাদ) অপরিহার্য, যা তাকে সুরক্ষা প্রদান করে (দ্র: সূরা আন-নূর ২৪:৩০, ২৪:৩১)। এ জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন আল-কুরআনুল হাকীমের সঠিক জ্ঞান ও উপলব্ধি।

বিবাহের নিষেধাজ্ঞা যে বা যার সংঙ্গে 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা স্পষ্টভাবে মুশরিকদের (যারা শিরক করে একমাত্র আল্লাহর সাথে, নাঝিলকৃত বিধানের সাথে) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ করেছেন।

🔹 আল-বাকারা (২:২২১) আয়াতে বলা হয়েছে:

আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে কোরো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর অবশ্যই একজন মুমিন দাসী একজন মুশরিক নারীর চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে আকৃষ্ট করে। এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে বিয়ে দিও না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর অবশ্যই একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, আর যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা আগুনের দিকে ডাকে আর আল্লাহ তাঁর ইচ্ছায় জান্নাত ও ক্ষমার দিকে ডাকেন। এবং তিনি মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে, কোনো মুসলিম পুরুষ বা নারী মুশরিকদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। 

🔹ব্যভিচারী বিয়ে করবে না ব্যভিচারিণীকে অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া আর ব্যভিচারিণী, তাকে বিয়ে করবে না ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষ ছাড়া। আর সেটা মুমিনদের ওপর হারাম করা হয়েছে-সূরা আন নূর 24:3

খারাপ নারীরা খারাপ পুরুষদের জন্য এবং খারাপ পুরুষরা খারাপ নারীদের জন্য আর ভাল নারীরা ভাল পুরুষদের জন্য এবং ভাল পুরুষরা ভাল নারীদের জন্য-সূরা আন নূর 24:26

👉তবে, বড় ভাবনার বিষয় হচ্ছে- সমাজে অধিকাংশের পরিস্থিতি এমন, যেমনটি আল্লাহ সু. তা. জানিয়ে দিয়েছেন আমাদের:  ’আর তাদের অধিকাংশ তো কেবল আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে, এমতবস্থায় যে তারা মুশরিক’-(সূরা ইউসুফ ১২:১০৬)। তাহলে উপায়?

✨🌿 · · · ✦ · · · 🌿✨

আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান) নারীদের সাথে বিবাহের শর্তসাপেক্ষ অনুমতি!

মুসলিম পুরুষের জন্য আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান) নারীদের সাথে বিবাহের কিছু শর্তসাপেক্ষ অনুমতি রয়েছে।

🔹 সূরা আল-মায়িদাহ (৫:৫) আয়াতে বলা হয়েছে:

আজ তোমাদের জন্য হালাল করা হলো, যাবতীয় উপযোগী বস্তু। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাবার তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাবার তাদের জন্য হালাল আর মুমিন নারীদের মধ্য থেকে সৎচরিত্রারা এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্য থেকে সৎচরিত্রারা, যখন তোমরা তাদেরকে বিয়ের উদ্দেশ্যে তাদের প্রাপ্য প্রদান করবে, ব্যভিচারী হিসাবে নয় আর না প্রেমিক হিসাবে। আর যে ঈমানের বিষয়ে কুফর করে, তাহলে অবশ্যই তার আমল নষ্ট হয়ে গেছে। আর আখিরাতের মধ্যে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।

🔸 তবে মুসলিম নারীর জন্য আহলে কিতাব পুরুষদের সাথে বিবাহের অনুমতি নেই, কারণ স্বামীর প্রভাব স্ত্রীর ওপর বেশি থাকে এবং মুসলিম স্ত্রী ইসলামের শিক্ষাগুলো পালন করতে সমস্যায় পড়তে পারে।


সংক্ষেপে কুরআনের বিবাহসংক্রান্ত বিধান

যাদের সাথে বিবাহ করা জায়েয:

  1. মুসলিম পুরুষ-মহিলা পরস্পরের সাথে।

  2. মুসলিম পুরুষ আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিস্টান) নারীদের সাথে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে।

যাদের সাথে বিবাহ করা নিষেধ:

  1. মুশরিক (যারা আল্লাহর সাথে অন্যকে শরিক করে) - পুরুষ হোক বা নারী।

  2. আহলে কিতাব পুরুষের সাথে মুসলিম নারীর বিয়ে।

  3. নিকটাত্মীয়দের (মাহরাম) সাথে বিবাহ-(সূরা আন-নিসা ৪:২৩)


মুসলিমের সংজ্ঞা: যারা সত্যিকারভাবে আল্লাহর আয়াতে ঈমান আনে, তারা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)। প্রমাণ-

🔹 যারা ঈমান এনেছে আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি আর যারা ছিল মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী); তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো, তোমরা ও তোমাদের দাম্পত্যসাথীরা, তোমরা আনন্দিত হবে-সূরা আয যুখরুফ, আয়াত ৪৩:৬৯-৭০ 


🔹 আর তুমি অন্ধদের তাদের বিভ্রান্তি থেকে পথ দেখাতে সক্ষম নও। তুমি কেবল তাদেরই শোনাতে পারো, যারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান আনে এবং তারাই মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)-সূরা রূম (৩০:৫৩)


🔹আর তুমি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে পথপ্রদর্শনকারী নও। যারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে তাদেরকে ছাড়া তুমি শুনাতে পারবে না। কেননা তারা মুসলিম-সূরা আন নামল 27:81


"মুসলিম" মানে "আত্মসমর্পণকারী" প্রমাণ-দ্র: আয়াত ২৭:৩৮ (যারা আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে সমর্পণ করে)

📌আল কুরআন প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোন ভাবেই ভাবেই মুসলিম পরিচয়ে পরিচিত হওয়া যাবে না-দ্র: ৫:৬৮



📌"আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান এনেছে"পরিবার শুদ্ধা জান্নাতের অফার  দ্র: আল কুরআন ৪৩:৭০, ৫২:২১


🔹 ঈমান আনার জন্য কী করতে হবে?

📌অবশ্যই ঈমান আনতে হবে আল কোরআন ভিত্তিক: দ্র: ৪:১৩৬, ২:১৩৬, ৩:৫৩, ৩:৮৪, ৫:৮৩, ৩৭:৩৫, ৪৭:১৯, ২:২৮৫, ২:২-৫ (২:৮-১৫)।

📌ঈমান ও আমল এক ও অভিন্ন: ৩:৫৭, ১৮:৮৮, ১৮:১০৭, ৯৫:৬, ১০৩:৩।

📌 এই আয়াতসমূহ থেকে বোঝা যায়, শুধু মুখে ঈমান আনা যথেষ্ট নয়, বরং তা কাজে প্রতিফলিত হওয়া জরুরি।

উত্তম বিবাহ ও সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য কুরআনি দোয়া:

১. নেক জীবনসঙ্গী ও সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া

🔹 সূরা আল-ফুরকান (২৫:৭৪):

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

👉 উচ্চারণ: Rabbana hablana min azwajina wa dhurriyyatina qurrata a’yunin waj‘alna lil-muttaqina imama.

👉 অর্থ: "হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রীগণ ও সন্তানদেরকে আমাদের চোখের শীতলতা করো এবং আমাদেরকে মুত্তাকিদের জন্য আদর্শ বানাও।"

📌 এই দোয়াটি পারিবারিক শান্তি ও সৎ জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য উপকারী।


২. কল্যাণকর জীবনসঙ্গী ও দাম্পত্য সুখের জন্য দোয়া

🔹 সূরা আল-আম্বিয়া (২১:৮৯):

رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ

👉 উচ্চারণ: Rabbi la tadharni fardan wa anta khayrul waritheen.

👉 অর্থ: "হে আমার রব! আমাকে একাকী রেখো না, তুমি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।"

📌 বিবাহের আগে উত্তম জীবনসঙ্গীর জন্য এই দোয়া পড়া যেতে পারে।


৩. দাম্পত্য জীবনে কল্যাণ ও বরকতের জন্য দোয়া

🔹 সূরা আর-রূম (৩০:২১):

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً

👉 উচ্চারণ: Wa min ayatihi an khalaqa lakum min anfusikum azwajan litaskunu ilaiha wa ja‘ala bainakum mawaddatan wa rahmah.

👉 অর্থ: "আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য যুগল সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও। এবং তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।"

📌 এই আয়াত দাম্পত্য জীবনে শান্তি, ভালোবাসা ও দয়া বজায় রাখার জন্য উপযোগী।


৪. দাম্পত্য জীবন ও পার্থিব কল্যাণের জন্য দোয়া

🔹 সূরা আল-বাকারা (২:২০১):

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

👉 উচ্চারণ: Rabbana atina fid-dunya hasanah wa fil-akhirati hasanah waqina ‘adhaban-nar.

👉 অর্থ: "হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দাও, আখিরাতে কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।"

📌 এই দোয়া দাম্পত্য জীবনসহ পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ কামনার জন্য সর্বজনীন ও উপকারী।


সামর্থহীনদের সামর্থ চেয়ে দুআ:

 رَبِّ اِنِّیۡ لِمَاۤ اَنۡزَلۡتَ اِلَیَّ مِنۡ خَیۡرٍ فَقِیۡرٌ ﴿۲۴

হে আমার রব! আপনি আমার কাছে কল্যাণ থেকে যা অবতীর্ণ করেছেন, নিশ্চয়ই আমি সেটার জন্য মুখাপেক্ষী(সূরা আল-কাসাস ২৮:২৪)


উত্তম জীবনসঙ্গী ও সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য কুরআনের নির্দেশনা ও দোয়াগুলো পালন করা উচিত।

  رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ وَتُبْ عَلَيْنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ 

👉 উচ্চারণ: Rabbana taqabbal minna innaka Antas-Sami‘ul-‘Alim. Watub ‘alayna innaka Antat-Tawwabur-Rahim. 

🤲 “হে আমাদের রব! তুমি আমাদের পক্ষ থেকে (আমাদের কাজ) কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আর তুমি আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হও। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। সূরা আল-বাকারা (২:১২৭-১২৮) 

✨🌿 · · · ✦ · · · 🌿✨

নবী মুসা (সা.)-এর বিয়ের ঘটনা

সালামুন আলা মুসা-এর বিয়ের পূর্বাপর ঘটনা কোরআনে সূরা আল-কাসাস (২৮:২৩-২৮) আয়াতে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। এই ঘটনাটি পর্দা, শালীনতা, বিনয়, দায়িত্বশীলতা, এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।


🔹 বিয়ের পূর্বে সালামুন আলা মুসা এবং মাদিয়ানের দুই নারীর সাক্ষাৎ

সালামুন আলা মুসা যখন মিশর থেকে নির্জনপ্রায় মাদিয়ান অঞ্চলে পৌঁছান, তখন তিনি একটি কূয়ার কাছে উপস্থিত হন, যেখানে কিছু রাখাল তাদের পশুকে পানি পান করাচ্ছিল। সেখানে তিনি দেখতে পান, দুই যুবতী তাদের পশুকে পানি পান করাতে অপেক্ষা করছে।


"আর যখন সে মাদইয়ানের পানির কাছে পৌঁছল, সে সেখানে লোকদের মধ্য থেকে একটি দল পেল, যারা পানি পান করাচ্ছিল, এবং তাদের ছাড়াও সে দুজন নারী পেল, উভয়ে আগলে রাখছিল। সে বলল, ‘তোমাদের দুজনের বক্তব্য কী?’ তারা দুজন বলল, ‘আমরা পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না রাখালরা সরিয়ে নিয়ে যায়। আর আমাদের বাবা অতিবৃদ্ধ।’" 
 (সূরা আল-কাসাস ২৮:২৩)


🔹 সালামুন আলা মুসা-এর সহানুভূতি ও নির্লোভ সাহায্য

মুসা (আ.) তাদের অসহায়তা দেখে নিজেই তাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে দেন, কিন্তু এর বিনিময়ে কোনো কিছু প্রত্যাশা করেননি। (এরপর তিনি ছায়ায় গিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন)

📖"তখন সে তাদের দুজনকে পানি পান করাল। তারপর সে ছায়ার কাছে ফিরে গেল। এরপর সে বলল-

 رَبِّ اِنِّیۡ لِمَاۤ اَنۡزَلۡتَ اِلَیَّ مِنۡ خَیۡرٍ فَقِیۡرٌ ﴿۲۴

হে আমার রব! আপনি আমার কাছে কল্যাণ থেকে যা অবতীর্ণ করেছেন, নিশ্চয়ই আমি সেটার জন্য মুখাপেক্ষী(সূরা আল-কাসাস ২৮:২৪)

এরপর ওই নারীদের একজন লজ্জাশীলভাবে সালামুন আলা  মূসা -এর কাছে আসেন এবং তাকে তাদের পিতার সঙ্গে দেখা করার আমন্ত্রণ জানান।


🔹 শালীনতার সঙ্গে বিবাহের প্রস্তাব

এরপর সেই দুই নারীর একজন লজ্জাশীলভাবে সালামুন আলা মুসা-এর কাছে আসেন এবং বলেন যে, তাদের পিতা তাকে ডেকেছেন তার সাহায্যের বিনিময়ে পুরস্কার দিতে।

📖 (সূরা আল-কাসাস ২৮:২৫)
"এরপর তার কাছে তাদের দুজনের একজন শালীনতার সাথে হেঁটে এলো। সে নারী বলল, ‘নিশ্চয়ই আমার বাবা তোমাকে ডাকছেন, তুমি আমাদের পক্ষে যে পান করিয়েছ তোমাকে সেটার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য।’ এরপর যখন সে তার কাছে এলো এবং তার উদ্দেশে সব বৃত্তান্ত বর্ণনা করল..."

এই ঘটনায় নারীর শালীনতা ও নম্রতা প্রকাশিত হয়েছে, কারণ তিনি যথাযথ পর্দা ও বিনয় বজায় রেখে কথা বলেছেন।


পাত্র-পাত্রীর যোগ্যতা:

قَالَتۡ اِحۡدٰىہُمَا یٰۤاَبَتِ اسۡتَاۡجِرۡہُ ۫ اِنَّ خَیۡرَ مَنِ اسۡتَاۡجَرۡتَ الۡقَوِیُّ الۡاَمِیۡنُ 

তাদের দুজনের একজন বলল, ও পিতাজি! তুমি তাকে কাজে নিয়োগ করো, নিশ্চয়ই তুমি যাকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছ সে উত্তম, শক্তিশালী, বিশ্বস্ত-সূরা আল ক্বাসাস 28:26

🔹 বিবাহের প্রস্তাব ও চুক্তি

সালামুন আলা মুসা-এর সততা, বিনয় ও দায়িত্বশীলতায় সন্তুষ্ট হয়ে ঐ নারীর পিতা তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন।


শশুড়/পিতা/অভিভাবক কেমন!

"সে (পিতা) বলল, ‘আমি চাই যে, আমার এই দুই কন্যার একজনকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিই, এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার খেদমত করবে, আর যদি দশ বছর পূর্ণ করো, তবে তা তোমার পক্ষ থেকে (উত্তম)। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। ইনশাআল্লাহ তুমি আমাকে সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত পাবে।’"  (সূরা আল-কাসাস ২৮:২৭)

সালামুন আলা মুসা এই শর্ত গ্রহণ করেন এবং এক চুক্তির মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হয়।


"সে (মূসা) বলল, ‘এটা আমার ও তোমার মধ্যে চুক্তি। এই দুই মেয়াদের যে কোনো একটি আমি পূরণ করব, এবং আমার প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না। আর আমরা যা বলছি, তার জন্য আল্লাহই সাক্ষী।’" 
 (সূরা আল-কাসাস ২৮:২৮)


🔹 মূল শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা

এই ঘটনা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে:

1️⃣ যুবক-যুবতীর সাক্ষাতে পর্দা ও শালীনতা:

  • দুই নারী সংযম ও পর্দা বজায় রেখে অপেক্ষা করছিলেন।
  • তারা বিনয়ের সঙ্গে সংক্ষিপ্তভাবে প্রয়োজনীয় কথোপকথন করেছেন।

2️⃣ সালামুন আলা মুসা-এর সততা ও দায়িত্বশীলতা:

  • বিনিময়ের আশা না করে সাহায্য করা।
  • আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল থাকা।

3️⃣ একজন যোগ্য জীবনসঙ্গী নির্বাচন:

  • পাত্র-পাত্রীর যোগ্যতা:
  • পাত্রের সততা, দায়িত্বশীলতা ও চরিত্রের মাধুর্য বিবেচনা করা হয়েছে।
  • পারস্পরিক সম্মতি ও চুক্তির ভিত্তিতে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।

4️⃣ আল্লাহর উপর নির্ভরতা:

  • দুঃসময়ে আল্লাহর উপর ভরসা করলে, তিনি উত্তম ব্যবস্থা করেন।

🔹 উপসংহার

নবী সালামুন আলা মুসা-এর এই ঘটনা কেবল একটি বিবাহের বিবরণ নয়; এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনপাঠ। কোরআন এখানে শালীনতা, বিনয়, সততা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভের শিক্ষা দিয়েছেন। যদি কেউ আল্লাহর বিধান মেনে চলে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য উত্তম ব্যবস্থা করেন, যেমনটি তিনি সালামুন আলা মুসা-এর জন্য করেছিলেন।

📖 "যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ বৃদ্ধি করব।" (সূরা ইবরাহীম ১৪:৭)


আল্লাহ আমাদের সকলকে কোরআনের শিক্ষা মেনে চলার তাওফিক দান করুন! 🤲

Powered by Blogger.