ভূমিকম্প: তাওবা, ইস্তেগফার, দুআ, তাসবিহ ও করণীয়—আল-কুরআনের আলোকে
✨🌿 · · · ✦ · · · 🌿✨
ভূমিকম্প: তাওবা, ইস্তেগফার, দুআ, তাসবিহ ও করণীয়—আল-কুরআনের আলোকে
ভূমিকম্পসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জন্য একটি পরীক্ষা ও সতর্কবার্তা। কুরআনে আল্লাহ আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন কীভাবে এই সময় তাওবা (অনুতাপ), ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা), দুআ, তাসবিহ ও যিকির করতে হবে। এই পোস্টে আমরা কুরআনের আলোকে ভূমিকম্পের সময় করণীয় বিষয়গুলো আলোচনা করব।
(ভূমিকম্প: বিশেষ দু’আ: পোষ্টের নিচের দিকে দ্র:)
১. ভূমিকম্প—আল্লাহর নিদর্শন ও সতর্কবার্তা: ভূমিকম্পের কারণ সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত:
আল্লাহ বলেন:
📖 “আর পৃথিবীর মধ্যে তিনি স্থাপন করেছেন পর্বতমালা যেন, তোমাদের নিয়ে সেটা স্থির থাকে এবং নদনদী ও পথসমূহ, যেন তোমরা সঠিকপথ পাও” (সূরা আন-নাহল ১৬:১৫)
তাহলে অতি বিলাসিতার লোভে প্রাকৃতিক স্থাপনা (পাহাড়-পর্বত-টিলা-নদ নদী) ধ্বংস করার জন্য দায়ী কে? এটা যে পাপ-অন্যায়-অপরাধ তা কি আমরা বিশ্বাসীরাও বুঝি?
📖 "তোমরা কি নিশ্চিত যে, তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দেবেন না অথবা তোমাদের উপর পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করবেন না?" (সূরা আল-মুলক ৬৭:১৬-১৭)
📖মানুষের বাড়াবাড়ি/অপরাধের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়:
"জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের নিজ হাতের কামাইয়ের কারণে, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে"-(সূরা আর-রূম ৩০:৪১)
শাস্তি ও পরীক্ষার মাধ্যম:
"অতঃপর আমি তাদের প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি; কারো প্রতি আমি প্রেরণ করেছি প্রচণ্ড বাতাস, আর কাউকে পেয়েছি বজ্রাঘাতে; কাউকে করেছি ভূগর্ভে প্রোথিত এবং কাউকে করেছি নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুম করেননি; বরং তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল।" সূরা আনকাবূত (২৯:৪০)এই আয়াতগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা ও সতর্কবার্তা হতে পারে, যাতে মানুষ আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।
ভূমিকম্প থেকে বাঁচার উপায় (আল্লাহর দয়া কামনা ও আত্মশুদ্ধি):
২. তাওবা ও ইস্তেগফার (অনুতাপ-আত্মশুদ্ধি ও ক্ষমা প্রার্থনা) করা:
ভূমিকম্পের সময় ও পরে আমাদের আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতে হবে।
📖"হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাঁর প্রতি ফিরে আসো, তিনি তোমাদের ওপর আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। তোমরা অপরাধীদের মতো মুখ ফিরিয়ে নিও না।" সূরা হূদ (১১:৫২)
📖 "তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি হলেন ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বর্ষণধারী আকাশ প্রেরণ করবেন। আর তোমাদেরকে ধন—সম্পদ ও সন্তান—সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগানসমূহ তৈরি করবেন আর তোমাদের জন্য নহরসমূহ সৃষ্টি করবেন" (সূরা নূহ ৭১:১০-১৩)
📌আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা ও তাঁর কাছে নিরাপত্তা চাওয়া:
📌আর আল্লাহ তাদের শাস্তিদাতা নন, যখন তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে-8:33
📌কী করবেন আল্লাহ তোমাদের শাস্তি দিয়ে, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো আর তোমরা ঈমান আনো!-4:147
📌আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া ও ভালো কাজ করা:
"আর নিয়ামতের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে যতটুকু আছে, তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই। তারপর যখন তোমাদেরকে দুর্দশা স্পর্শ করে তখন তাঁর কাছেই তোমরা অনুনয় বিনয় করো। " সূরা আন-নাহল (১৬:৫৩)তাওবা ও ইস্তেগফারের দোয়া:
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ۞
إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ۞
سُبْحَانَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُؤْمِنِينَ
📌পবিত্রতা আপনারই, আমি আপনার কাছে তওবা করলাম এবং আমি অগ্রবতীর্ মুমিন- 7:143 (20:82-84)|
إِنِّي
تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
📌নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে তওবা করলাম। আর নিশ্চয়ই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। -46:15
وَ تُبۡ عَلَیۡنَا ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۲۸
📌এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি, আপনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু-2:128
رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
রব্বানা- ইন্নানা- আ-মান্না-
ফাগফির লানা- যুনূবানা-ওয়া ক্বিনা-‘আযা-বান্নার-।
📌হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদের জন্য আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন আর আগুনের শাস্তি থেকে আমাদের রক্ষা করুন-আল কুরআন ৩:১৬।
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
📌রব্বানা- আ-তিনা-ফিদ্ দুন্ইয়া-হাসানাতাওঁ অফিল্ আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ অক্বিনা-‘আযা-বান্না-র।
হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়ার মধ্যে কল্যাণ ও আখিরাতের মধ্যে কল্যাণ দিন। এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন-আল কুরআন ২:২০১
رَبَّنَا
إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ۞
"রব্বানা- ইন্নানা- আ-মান্না- ফাগফির লানা- যুনূবানা-ওয়া ক্বিনা-‘আযা-বান্নার।"
📌হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদের জন্য আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন আর আগুনের শাস্তি থেকে আমাদের রক্ষা করুন!-3:16
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا
وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ
الْكَافِرِينَ۞
رَبِّ نَجِّنِى وَأَهْلِى مِمَّا يَعْمَلُونَ۞
📌হে আমার রব! তারা যা করছে তা থেকে আমাকে ও আমার পরিবারকে রক্ষা করুন!-26:169
رَّبِّ اغۡفِرۡ وَ ارۡحَمۡ وَ اَنۡتَ خَیۡرُ الرّٰحِمِیۡنَ
রব্বিগফির ওয়ারহাম অআংতা খইরুর র-হিমীন্।
📌 হে আমার রব! ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন, আপনিইতো দয়ালুদের শ্রেষ্ঠ-আল কুরআন ২৩:১১৮ ।
لَئِن لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
লায়িল্লাম্ ইয়ারহামনা-ওয়া ইয়াগফিরলানা- লানাকূনান্না মিনাল্ খা-সিরীন্।
📌অবশ্য যদি না আমাদের রব আমাদের ওপর রহমত করেন ও আমাদের জন্য ক্ষমা করেন, অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব-আল কুরআন ৭:১৪৯ ।
❖ ভুমিকম্পের বিশেষ দুআ: তবে শর্ত প্রযোজ্য:
হে আমার রব! আপনি যদি চাইতেন পূর্বেই তাদেরকে ও আমাকে ধ্বংস করতে পারতেন। আমাদের মধ্য থেকে নির্বোধরা যা করেছে সে কারণে কি আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন? নিশ্চয়ই সেটা কেবল আপনার পরীক্ষা। সেটা দিয়ে যাকে চান আপনি পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান আপনি হিদায়েত করেন। আপনিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে অনুগ্রহ করুন। আর আপনিই ক্ষমাশীলদের উত্তম। আর আমাদের জন্য এই দুনিয়ার মধ্যে ও আখিরাতের মধ্যে কল্যাণ লিখে দিন। নিশ্চয়ই আমরা, আমরাই আপনার দিকে পথ ধরেছি-(সূরা আল-আ'রাফ ৭:১৫৫-156)
যারা, যখন বিপদ তাদের আক্রান্ত করে, তারা বলে-
নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য আর নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী-2:256
৫. সাদাকাহ (দান-খয়রাত) করা:
📖 "তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।" (সূরা আল-বাকারা ২:১৯৫)
🔹 কি করা যেতে পারে?
✅ গরীব ও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা।
✅ এতিম- দুঃস্থদের জন্য দান করা।
৬. মানুষকে সাহায্য করা ও ধৈর্য ধারণ করা:
ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো এবং ধৈর্য ধারণ করা জরুরি।
📖 "আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যখন তাদের কোনো বিপদ আসে, তখন তারা বলে:
🔹 اِنَّا لِلّٰہِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡہِ رٰجِعُوۡنَ
"ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন"
📌 ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী’" (সূরা আল-বাকারা ২:১৫৫-১৫৬)ভূমিকম্পের সময় করণীয়:
ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগ আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসার সুযোগ। তাই আমাদের উচিত:
✅ আর কাল ক্ষেপণ না করে এখনই তাওবা করে আল কোরআন ভিত্তিক ঈমান এনে দোয়া ও ইস্তিগফার করা, বিরতিহীন আয়াত অনুশীলণ করা।
✅ সাদাকাহ (দান-খয়রাত) করা, যা বিপদ থেকে বাঁচতে সহায়ক।
✅ তওবা করা ও আল্লাহর নিকট রহমত প্রার্থনা করা।
✅ মানুষকে সহায়তা করা, বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা।
আল্লাহ আমাদের ভূমিকম্প এবং অন্যান্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের ওপর দয়া করুন। 🤲
📌 শেয়ার করুন যাতে অন্যরাও উপকৃত হয়!
✍ আপনার মতামত ও অভিজ্ঞতা কমেন্টে জানাতে জানাতে পারেন!
Leave a Comment