📢 যানবাহনে আরোহন ও অবতরণের দু'আ 🤲 যাত্রাপথেও অহীর (আল্লাহর নাজিলকৃত) অনুশীলন এবং তাঁর সাথে সংযোগ স্থাপন: কিন্তু কিভাবে?
নিম্নোক্ত সকল প্রকার যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য:
🚌 বাস
🚗 গাড়ী / প্রাইভেট কার
🏍️ মটরসাইকেল
🛺 অটো / সিএনজি
🚢 জাহাজ / স্টিমার
🛶 নৌকা
✈️ প্লেন
(এবং অন্যান্য সকল যানবাহন)
১. যেকোনো ধরনের যানবাহনে – যেমন গাড়ি, মোটরসাইকেল, সাইকেল, প্লেন, স্টিমার, লঞ্চ ইত্যাদি – অর্থাৎ স্থলপথ, জলপথ বা আকাশপথের যেকোনো বাহনে আরোহণের পর যে সাধারণ দোয়াটি পাঠ করার জন্য সূরা আয-যুখরুফ-এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেটি হলো:
এটি ভ্রমণের জন্য কুরআনে উল্লেখিত সবচেয়ে ব্যাপক দোয়া, যা কোনো যানবাহনে (ঐতিহাসিকভাবে পশু, আধুনিক পরিবহনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য) আরোহণের সময় পাঠ করা হয়:
🔖সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত ৪৩:১৩-১৪
...এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এমন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু যার ওপর তোমরা আরোহণ করো। যাতে তোমরা তার পিঠে স্থির হয়ে বসতে পারো, তারপর যখন তোমরা এর ওপর ঠিকভাবে বসবে, তখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিয়ামত স্মরণ করবে এবং বলবে: দুআ নং-১
سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ، وَإِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ
সুবহানাল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা ওয়ামা কুন্না লাহূ মুক্বরিনীন। ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবূন।
"পবিত্রতা তাঁরই, যিনি আমাদের জন্য এটা অধীন করে দিয়েছেন আর আমরা সেটার জন্য নিয়ন্ত্রণকারী নই। আর নিশ্চয়ই আমরা আমাদের রবের দিকে অবশ্যই প্রত্যাবর্তনকারী" -সূরা আয-যুখরুফ ৪৩:১৩-১৪
🔗সংযুক্ত আয়াত Link: ১৭:৭০, ৩৬:৪০, ২২:৬৫, ৪৫:১২-১৩, ১১:৪১
দুআ: ভিডিও/অডিও-১
═══════ • ❖ • ═══════
২. নৌকা-লঞ্চ-জাহাজ-স্পীডবোর্ড-শীপ যেকোন জনযান-ভাসমানযান (৩৬:৪০): [জাহাজে আরোহণের সময় সালামুন আলা নূহ-এর দোয়া (সাগর-নদী-জল পরিবহনে ভ্রমণের জন্য): দুআ নং-2
بِسْمِ اللَّهِ مَجْرَاهَا وَمُرْسَاهَا ۚ إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
বিসমিল্লাহি মাজরেহা ওয়া মুরসাহা, ইন্না রাব্বী লাগাফূরুর রাহীম।
"আল্লাহর নামে তার চলা ও তার থামা। নিশ্চয়ই আমার রব অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়ালু"-সূরা হুদ ১১:৪১
দুআ: ভিডিও/অডিও-২
═══════ • ❖ • ═══════
🚗 🏍️ 🚲🚢 ⛵⚓🛫 🛩️ 🚀🚠🛸
৩. নিরাপদ ও কল্যাণকর অবতরণের জন্য দোয়া: দুআ নং-3
رَّبِّ أَنزِلْنِي مُنزَلًا مُّبَارَكًا وَأَنتَ خَيْرُ الْمُنزِلِينَ
রাব্বি আন্ঝিলনী মুনঝালাম মুবারাকান ওয়া আনতা খাইরুল মুনঝিলীন।
"হে আমার রব! আপনি আমাকে বরকতময় অবতরণস্থলে অবতরণ করান। আর আপনিই উত্তম অবতরণকারী" সূরা আল-মুমিনুন ২৩:২৯
দুআ: ভিডিও/অডিও-৩
═══════ • ❖ • ═══════
4. নিরাপত্তার জন্য কৃতজ্ঞতা: দুআ নং-5
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي نَجَّانَا مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী নাজ্জা-না মিনাল ক্বাওমিজ্জা-লিমীন।
"সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে যালেম সম্প্রদায় থেকে উদ্ধার করেছেন" সূরা আল মুমি’নুন 23: 28 দুআ: ভিডিও/অডিও-5
এগুলোই হলো কুরআনে সরাসরি উল্লেখিত প্রধান দোয়া যা পরিবহন, আরোহণ এবং নিরাপদ ও কল্যাণকর যাত্রা ও অবতরণের সাথে সম্পর্কিত।
═══════ • ❖ • ═══════
رَّبِّ اغۡفِرۡ وَ ارۡحَمۡ وَ اَنۡتَ خَیۡرُ الرّٰحِمِیۡنَ
রব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রা-হিমীন।
হে আমার রব! ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন। আর আপনিই দয়ালুদের শ্রেষ্ঠ-২৩:১১৮
এটি একটি অত্যন্ত সুন্দর এবং শক্তিশালী দোয়া, যা আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা ও রহমত চাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।
দুআ: ভিডিও/অডিও-6
এই দোয়াটি বিশেষভাবে পরিবহণ বা যাত্রার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, যেমনটি আগে উল্লেখ করা সূরা আয-যুখরুফ (৪৩:১৩-১৪), সূরা হুদ (১১:৪১) বা সূরা আল-মুমিনুনের (২৩:২৯) দোয়াগুলো ছিল, যেখানে বাহন, নৌকা বা অবতরণের কথা উল্লেখ আছে।
তবে, এই দোয়াটি যেকোনো সময়, যেকোনো অবস্থায় পাঠ করা যেতে পারে, কারণ আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া সর্বদাই আমাদের প্রয়োজন। ভ্রমণের সময়ও এটি পাঠ করা অত্যন্ত উত্তম, কারণ তখন আমরা আল্লাহর উপর আরও বেশি নির্ভরশীল থাকি এবং তাঁর ক্ষমা ও করুণা কামনা করি।
এটি একটি ব্যাপক (general) দোয়া যা আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর সাহায্য ও করুণা প্রার্থনার জন্য উপযোগী।
সুতরাং, যদিও এটি সরাসরি 'পরিবহণের দোয়া' হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত নয়, ভ্রমণের সময় এটি পাঠ করলে অবশ্যই সওয়াব ও আল্লাহর রহমত লাভ হবে।
═══════ • ❖ • ═══════
একটু বিস্তারিত জানা: ঐতিহাসিকভাবে কুরআনে যখন "الْأَنْعَامِ" (আল-আনআম - চতুষ্পদ জন্তু, যেমন উট, ঘোড়া ইত্যাদি) এর কথা বলা হয়েছে, তখন এগুলো ছিল মানুষের জন্য স্থলপথে বিচরণের প্রধান মাধ্যম।
আর "الْفُلْكِ" (আল-ফুলক - ভাসমান যান (৩৬:৪০) বলতে প্রধানত তৎকালীন জলযান যেমন নৌকা বা জাহাজকেই বোঝানো হতো, যা ছিল তখনকার দিনে জলপথে পরিবহনের মূল উপায়।
যুক্তিতে একটি বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন:
কুরআন নাযিলের সময় "الْفُلْكِ" শব্দটি দ্বারা সরাসরি আকাশযান, রকেট বা স্পেসযানের ধারণা ছিল না, কারণ সেগুলো তখন আবিষ্কৃত হয়নি বা মানুষের ধারণার অতীত ছিল। "الْفُلْكِ" শব্দটি মূলত পানির উপর ভাসমান বা চলাচলকারী যানকেই নির্দেশ করে।
এই দোয়াটির মূলনীতি সব ধরনের আধুনিক যানবাহনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এর কারণ হলো:
আল্লাহর সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ: যদিও কুরআন নাযিলের সময় শুধু পশু এবং জলযানের উল্লেখ আছে, কিন্তু আল্লাহ তা'আলা সবকিছুর স্রষ্টা। আধুনিক যুগের গাড়ি, ট্রেন, বিমান, রকেট বা যেকোনো অত্যাধুনিক যানবাহনও তাঁরই দেওয়া জ্ঞান এবং উপকরণ দ্বারা মানুষ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। যে প্রাকৃতিক নিয়মাবলী অনুসরণ করে এগুলো চলে, সেগুলোর স্রষ্টাও আল্লাহ।
"তাসখীর" (অধীন করে দেওয়া): দোয়ায় "سَخَّرَ لَنَا" (আমাদের জন্য অধীন করে দিয়েছেন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা তাঁর অসীম করুণায় প্রকৃতির বহু শক্তি ও বস্তুকে মানুষের কল্যাণে অধীন করে দিয়েছেন। তাই, যে কোনো বাহন, যা মানুষের উপকারে আসে এবং মানুষের নিয়ন্ত্রণে চলে, তা আল্লাহর এই "তাসখীর"-এরই অংশ।
কৃতজ্ঞতা ও স্মরণ: এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমরা বাহন ব্যবহারের সময় আল্লাহর এই বিশাল নিয়ামতের কথা স্মরণ করি এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। এটি যেকোনো বাহনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
চূড়ান্ত গন্তব্যের স্মরণ: "وَإِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ" (আর আমরা অবশ্যই আমাদের রবের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী) – এই অংশটি আমাদের জীবনের চূড়ান্ত সত্য ও গন্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা যেকোনো ভ্রমণের সময়ই প্রাসঙ্গিক।
সুতরাং, যদিও "الْفُلْكِ" এর শাব্দিক অর্থ তৎকালীন জলযান (ভাসমান দ্র: ৩৬:৪০), তবে দোয়াটির আবেদন এবং তাৎপর্য আধুনিক যুগের সকল প্রকার যানবাহন, এমনকি ভবিষ্যতে আবিষ্কৃত হতে পারে এমন যানবাহনের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। কারণ, সব কিছুই আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁরই ইচ্ছায় আমাদের অধীন হয়েছে।
Leave a Comment