আঙ্গুলের ছাপ (Fingerprint): ইউটিউব, ফেসবুক বা প্রিন্ট মিডিয়া: আপনার 'আঙ্গুলের ছাপ' কি জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত?

আল-কুরআনের আলোকে জবাবদিহিতা ও আঙ্গুলের ছাপের  (Fingerprint) রহস্য!!

আজকের এই দ্রুত পরিবর্তনশীল ডিজিটাল যুগে, যেখানে তথ্যের অবাধ প্রবাহে আমরা ভেসে চলেছি, সেখানে একটি বিষয় প্রায়শই আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় – আর তা হলো আমাদের প্রতিটি কর্মের জন্য জবাবদিহিতা। আমরা যা বলছি, লিখছি, শেয়ার করছি, এমনকি যা ভাবছি, তার সবকিছুই যে এক অমোঘ হিসাবের আওতায় রয়েছে, সে বিষয়ে আমরা কতটুকু সচেতন?

✨ নিশ্চয়ই কান ও চোখ ও অন্তর, সেগুলোর প্রত্যেকটি সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে-বনি ইসরাইল 17:36

আল-কুরআন আমাদের এই জবাবদিহিতার বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছে। বিশেষ করে সূরা আল-কিয়ামাহ 75:৩-৬ -এ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা এক গভীর সত্য উন্মোচন করেছেন:

"أَيَحْسَبُ الْإِنسَانُ أَلَّن نَّجْمَعَ عِظَامَهُ ﴿٣﴾ بَلَىٰ قَادِرِينَ عَلَىٰ أَن نُّسَوِّيَ بَنَانَهُ ﴿٤﴾ بَلْ يُرِيدُ الْإِنسَانُ لِيَفْجُرَ أَمَامَهُ ﴿٥﴾ يَسْأَلُ أَيَّانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ ﴿٦﴾"

"মানুষ কি মনে করে যে আমরা তার অস্থিসমূহ একত্র করতে পারব না? অবশ্যই (পারব)! আমরা তার আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত সঠিকভাবে পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম। বরং মানুষ চায় তার ভবিষ্যতেও পাপকাজ অব্যাহত রাখতে। সে প্রশ্ন করে, ‘কখন সে কিয়ামত দিবস আসবে?’" (সূরা আল-কিয়ামাহ, ৭৫: ৩-৬)


এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ তায়ালা শুধু যে পুনরুত্থানের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন তাই নয়, বরং এর থেকেও সূক্ষ্ম একটি বিষয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন – "আঙ্গুলের অগ্রভাগসমূহ (بَنَانَهُ - বানানা)"।


আঙ্গুলের অগ্রভাগ (বানানাহু) ও তার তাৎপর্য:

১. আল্লাহর অসীম ক্ষমতা: আল্লাহ তা'আলা শুধু মানুষের বিশালাকার হাড়গুলোই নয়, বরং আঙ্গুলের ডগার মতো অতি ক্ষুদ্র ও জটিল অংশগুলোকেও নিখুঁতভাবে পুনর্গঠন করতে সক্ষম। এটি তাঁর অসীম কুদরতের এক জ্বলন্ত প্রমাণ।

২. স্বতন্ত্র পরিচয় ও আঙ্গুলের ছাপ: আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে, প্রতিটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপ (Fingerprint) সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও অদ্বিতীয়। কোটি কোটি মানুষের মধ্যে কারো আঙ্গুলের ছাপের সাথে অন্য কারো ছাপ হুবহু মেলে না। কোরআনের এই "বানানাহু" শব্দটিকে তাই অনেক আধুনিক গবেষক ও চিন্তাবিদ আঙ্গুলের ছাপের প্রতি ইঙ্গিত হিসেবে দেখেছেন। এর অর্থ, আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষকে তার স্বতন্ত্র আঙ্গুলের ছাপসহ পুনরুত্থিত করবেন, যা তার পরিচয়ের এক অকাট্য দলিল।

৩. কর্মের সূক্ষ্ম হিসাব: আঙ্গুলের অগ্রভাগ, যা দিয়ে আমরা লিখি, ধরি, স্পর্শ করি এবং অসংখ্য কাজ সম্পাদন করি, তার উল্লেখ এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এটি যেন এক প্রতীকী বার্তা দেয় যে, আমাদের প্রতিটি কর্ম, যা আমরা আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে করি, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রেকর্ড করা হচ্ছে। ঠিক যেমন আঙ্গুলের ছাপ সূক্ষ্ম ও জটিল, তেমনি আমাদের কর্মের হিসাবও হবে সূক্ষ্ম ও নিখুঁত।

🔗"বরং মানুষ চায়, তার ভবিষ্যতেও কুকর্ম করতে" -75:6

এই আয়াতে মানুষের এক দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। পরকালের প্রতি উদাসীনতা এবং জবাবদিহিতার ভয় না থাকার কারণে মানুষ পাপকাজে লিপ্ত হতে চায়। সে মনে করে, তার অপকর্মের কোনো হিসাব নেওয়া হবে না, অথবা সে শাস্তিকে এড়িয়ে যেতে পারবে।

আমাদের করণীয়:

আল-কুরআনের এই আয়াতগুলো আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে:

সচেতনতা বৃদ্ধি: আমাদের বুঝতে হবে যে, আমরা যা কিছুই করছি, তা বৃথা নয়। প্রতিটি কথা, কাজ, এমনকি নিয়তেরও হিসাব নেওয়া হবে। সামাজিক মাধ্যমে একটি লাইক, একটি শেয়ার, একটি মন্তব্য – সবকিছুই আমাদের আমলনামায় (কর্মবিবরণীতে) লিপিবদ্ধ হচ্ছে।

দায়িত্বশীল আচরণ: আমাদের কথা ও কাজে দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা এমন কিছু বলব না বা করব না, যা অন্যের ক্ষতির কারণ হয় বা আল্লাহর বিধানের পরিপন্থী।


পাপ থেকে বেঁচে থাকা: "মানুষ চায় তার ভবিষ্যতেও কুকর্ম করতে" – এই প্রবণতা থেকে আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে। আল্লাহর কাছে তওবা করে, সৎ পথে চলার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে।

জবাবদিহিতার অনুভূতি: সর্বক্ষণ এই অনুভূতি জাগ্রত রাখতে হবে যে, একদিন আল্লাহর সামনে আমাদের দাঁড়াতে হবে এবং আমাদের প্রতিটি কাজের হিসাব দিতে হবে। এই অনুভূতিই আমাদের অন্যায় থেকে বিরত রাখবে এবং ভালো কাজে উৎসাহিত করবে।

আঙ্গুলের ছাপের মতো আমাদের প্রত্যেকের আমলনামাও স্বতন্ত্র। আল্লাহ তা'আলা যেমন আমাদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত নিখুঁতভাবে পুনর্গঠন করতে সক্ষম, তেমনি তিনি আমাদের সকল কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাবও সংরক্ষণ করছেন। তাই, আসুন! আমরা আমাদের জীবনকে এমনভাবে পরিচালিত করি, যেন কিয়ামতের দিন আমাদের লজ্জিত হতে না হয়, বরং আমরা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি নিয়ে জান্নাতের অধিকারী হতে পারি।


Powered by Blogger.