বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা:📜বিয়ে পড়ানোর আনুষ্ঠানিক পর্ব (উক্দাতুন্ নিকাহ)–আল-কুরআনের আলোকে অনুধাবন
📜 বিয়ে পড়ানোর আনুষ্ঠানিক পর্ব (উক্দাতুন্ নিকাহ):
📜আনুষ্ঠানিক কুরআনভিত্তিক বিবাহ রূপরেখা (উকদাতুন্ নিকাহ) [বিবাহের বন্ধন বা চুক্তি ২:২৩৫, ২:২৩৭]: ইসলামী নিকাহ একটি পারস্পরিক সম্মতিচুক্তি। |
||||||||||||||||||
🗣️ সূচনাবাক্য: 🌟 রবের
প্রতি কৃতজ্ঞতাসহ প্রশংসা-1 (এই
খুতবার সূচনা অংশে কেবল আল্লাহর প্রশংসা রয়েছে — তা কুরআনের বিশুদ্ধ ও সরাসরি আয়াত দ্বারা। এটি আপনি যে কোনো খুতবার শুরুতে পাঠ করতে পারেন।) سَلَامٌ عَلَيْكُمْ وَسَلَـٰمٌ عَلَى ٱلْمُرْسَلِينَ
وَٱلْـحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ رَّبِّ اَعُوۡذُ بِکَ مِنۡ
ہَمَزٰتِ الشَّیٰطِیۡنِ وَ اَعُوۡذُ بِکَ رَبِّ اَنۡ یَّحۡضُرُوۡنِ بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ
ٱلرَّحِيمِ آلْـحَمْدُ لِلَّهِ وَسَلَامٌ عَلَىٰ عِبَادِهِ ٱلَّذِينَ ٱصْطَفَىٰ رَّبِّ ٱشْرَحْ لِى صَدْرِى وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى وَٱحْلُلْ عُقْدَةًۭ مِّن
لِّسَانِى يَفْقَهُوا۟ قَوْلِى
إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى
وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُۥ ۖ وَبِذَٰلِكَ
أُمِرْتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلْمُسْلِمِينَ সালামুন
আলাইকুম (৬:৫৪)। আর রসূলগণের ওপর সালাম। এবং সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের রব আল্লাহরই জন্য-৩৭:১৮০-১৮২ আর বলো!
হে আমার রব! আমি আপনার কাছে শয়তানদের প্ররোচনা থেকে আশ্রয় চাই। আর হে আমার রব!
আমি আমার কাছে তাদের উপস্থিত হওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই-23:97-98 সব প্রশংসা
আল্লাহর, আর শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর মনোনীত বান্দাদের উপর-27:59 হে আমার
রব! আমার জন্য আমার অন্তর প্রশস্ত করে দিন। আর আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দিন। আর
আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন; তারা
আমার কথা বুঝতে পারে-20:25-28 নিশ্চয়ই আমার সলাত ও আমার ত্যাগ এবং আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের রব আল্লাহর জন্য। তাঁর জন্য শরীক নেই। এবং আমি ওটারই নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছি। আর আমিই অগ্রবর্তী মুসলিম-6:162-163 “সম্মানিত
উপস্থিতি, আমার প্রিয় মুসলিম, মুমিন, মুমিনাত ভাই ও বোনেরা! যে যেখান থেকে শুনছেন বা অংশ নিচ্ছেন, আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হলো — বিষয়: বিবাহের
ভিত্তি - ঈমান ও পরিচয় ❝ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا ❞ (হে
মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো—সূরা আহযাব: ৭০ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُم مُّسْلِمُونَ
“হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো যথাযথ ভয় করার মতো এবং মৃত্যুবরণ করো ইসলাম ছাড়া
অন্য কোনো অবস্থায় নয়।”— (সূরা আলে ইমরান: ১০২)
এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে বিবাহ, হতে হবে ঈমান ও তাকওয়ার ভিত্তিতে। কেননা, একটি পরিবার শুধু দুনিয়ার বন্ধন নয়, বরং আখিরাতের পথচলার এক মৌলিক সঙ্গ। বিবাহের তাৎপর্য: "وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ
لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم
مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ" “আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো — তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই জোড়া সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও; এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়ালুতা সৃষ্টি করেছেন। নিঃসন্দেহে এতে চিন্তাশীল জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (সূরা আর-রূম, ৩০:২১) 🔹 বিবাহের মূল শর্ত: উক্দাতুন্ নিখাহ
(বিবাহ-চুক্তি) আল-কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা বিবাহকে শুধুমাত্র একটি সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং এক গম্ভীর, পবিত্র ও দৃঢ় অঙ্গীকার হিসেবে চিত্রিত করেছেন। তিনি বলেন: "وَأَخَذْنَ مِنكُم مِّيثَٰقًا غَلِيظًا" অর্থ:“...তারা তোমাদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছিল এক দৃঢ় অঙ্গীকার।” (সূরা আন-নিসা, ৪:২১) ➡️ এই আয়াত আমাদের সামনে অত্যন্ত স্পষ্ট করে তুলে ধরে যে বিবাহ একটি চুক্তি, যা কেবল আবেগ কিংবা সমাজকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান নয়—বরং এটি এমন একটি দায়িত্বশীল সম্পর্ক, যার প্রতি তাকওয়া, আস্থা এবং নৈতিকতা বজায় রাখা আবশ্যক। 📌 ‘মীসাকান গালীযা’ (দৃঢ় অঙ্গীকার) শব্দদ্বয়ের মধ্যেই নিহিত আছে এর গভীরতা ও পবিত্রতা। 🔹 ৫. বিবাহে তাকওয়া ও সদাচরণ: "فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْـًٔا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا"
“তোমরা যদি তাদের (স্ত্রীদের) অপছন্দ
করো, হতে পারে যে, তোমরা যা অপছন্দ করো তাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন” (সূরা
আন-নিসা, ৪:১৯) আল
কোরআনের বিধান মতে বিবাহের জন্য পাত্র ও পাত্রী-উভয়কেই ঈমানদার,
মুমিন হওয়া আবশ্যক, যদি তারা একজন আরেকজনের উপযুক্ত সঙ্গী হিসেবে বিবাহ করতে চায়। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে
তুলে ধরা হয়েছে। 🟩
মুশরিকদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ — কারণ তারা আগুনের দিকে ডাকে 📖 সূরা আল-বাকারা ২:২২১ "আর
তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে কোরো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। অবশ্যই একজন মুমিন
দাসী একজন মুশরিক নারীর চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে আকৃষ্ট করে।
এই আয়াত পরিষ্কারভাবে
জানিয়ে দিচ্ছে যে, বিবাহের পূর্বশর্ত হলো — উভয়ের ঈমানদার হওয়া। এখানে স্পষ্টভাবে
জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে নারী বা পুরুষ ঈমানদার নয়, তার সাথে বিবাহ বৈধ নয়। এমনকি
সে যদি আকর্ষণীয়ও হয়, তবুও মুমিন দাস বা দাসী তার চেয়ে উত্তম। ⚠️ কেন তাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ? ➤ কারণ: “تدعوا إلى النار – তারা আগুনের দিকে ডাকে” — অর্থাৎ,
ঈমানহীন জীবনসঙ্গী আপনাকে ঈমানহীনতার পথে টেনে নিতে পারে। ঈমানহীন পরিবেশে পরিবার
ও সন্তানদের ঈমান নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ৫️⃣ শিরক ক্ষমাযোগ্য নয় — ঈমান ছাড়া কোনো
সম্পর্ক গ্রহণযোগ্য নয় 📖 "নিশ্চয়ই
আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করবেন না, যে তাঁর সাথে শরীক করে। আর তিনি যাকে ইচ্ছা এর চেয়ে
কম (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে তো গুরুতর পথভ্রষ্ট হয়েছে"-সূরা আন-নিসা ৪:১১৬ ⚠️ কুরআনের
আলোকে মুশরিক কে বা কারা?-বিশ্লেষণ: 💠 মুশরিক সে-ই, যে
আল্লাহর সাথে কোনোভাবে শরীক করে। বিধান
কেবল আল্লাহর — তা অমান্য করাই শিরক: 📌 সৃষ্টি
ও
হুকুম
কেবল
আল্লাহর- ৭:৫৪ 📌 আল্লাহর
রাসূল
সালামুন
আলা
মুহাম্মদ
নিজেই
বলেন,
"হুকুম
কেবল
আল্লাহর"-১২:৬৭ 📌 আল্লাহর সাথে অন্যকে বিধানদাতা (হুকুমদাতা)
মানা = শিরক-১২:৪০ 📌 আলেম ও রাহিবদের হালাল-হারাম মানা
= শিরক-৯:৩১ 📌
আল্লাহ ছাড়া যারা শরীআহ (বিধান) তৈরি করে, তারা শরীক-৪২:২১ 📌 আর অধিকাংশ মানুষ মুমিন নয়, অধিকাংশ
মানুষ ঈমান আনে, কিন্তু শিরকসহ-12:103, ১২:১০৬ ❓ তাহলে কি সব মানবীয় আইন মানা শিরক? 🔍 না — যদি সেই আইন আল্লাহর বিধানের
বিপরীতে না হয়। ✅ হালাল: যে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক আইন আল্লাহর বিধানের সাথে
সাংঘর্ষিক নয় — যেমন ট্রাফিক আইন, কর আইন, প্রশাসনিক বিধান — এগুলো মানা শিরক নয়। ❌ শিরক: যখন কেউ হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল মনে করে
আল্লাহ ছাড়া অন্যের নির্দেশে, তখনই তা শিরক হয়ে যায়। 📌 সারাংশ: ✅ মানুষ আইন বানাতে পারে — কিন্তু তা হতে হবে আল্লাহর
বিধানের অধীন ও বিরোধিতা ছাড়া। তাই এমন
মুশরিকদের সাথে বিবাহ মানে হলো আগুনের পথে পা বাড়ানো। ২️⃣
ব্যভিচার ও শিরক দুটোই নিষিদ্ধ — ঈমানের বিপরীত 📖 সূরা
আন-নূর
২৪:৩ "ব্যভিচারী
পুরুষ
ব্যভিচারিণী
অথবা
মুশরিক
নারীরই
উপযুক্ত;
আর
ব্যভিচারিণী
নারীর
উপযুক্ত
ব্যভিচারী
অথবা
মুশরিক
পুরুষ;
এটা
মুমিনদের
জন্য
হারাম
করা
হয়েছে।" 🧩 এখানেও মুশরিকদের প্রসঙ্গ কেন এসেছে? ব্যভিচার
ও শিরক—দুটোই আল্লাহর বিধান অমান্য করার ফল। 🔗 শিরক ও ব্যভিচার — উভয়ই আল্লাহর বিধান অমান্য করার চিহ্ন। এই দুটি কাজের মধ্যে এক গভীর মানসিকতা-সংযোগ রয়েছে: আল্লাহর বিধানের বাইরে চলার প্রবণতা।
🧭
এ আয়াত শিক্ষা দেয়: নৈতিকতা ও ঈমান বিবাহের ভিত্তি হতে হবে, না যে শুধু সৌন্দর্য
বা বিত্ত। 📖 বিবাহের
বৈধতা ঈমানের উপর নির্ভরশীল: ঈমানই সম্পর্কের মানদণ্ড: ঈমান যাচাইয়ের নির্দেশ: সুরা মুমতাহিনা (৬০:১০) “তারা
ওদের জন্য হালাল নয় এবং হালাল হবে না ওরা তাদের জন্য।” — একজন মুমিন নারী কাফির পুরুষের স্ত্রী
হতে পারে না, এবং এর বিপরীতটাও ঠিক। "হে যারা ঈমান এনেছ! যখন মুমিন নারীরা তোমাদের কাছে আসে, তখন তোমরা তাদের যাচাই করে নিও… সুতরাং যদি তোমরা তাদেরকে মুমিনা হিসাবে জানতে পারো, তাহলে তাদেরকে কাফিরদের কাছে ফিরিয়ে দিও না। তারা ওদের জন্য হালাল নয় এবং ওরা তাদের জন্য হালাল নয়…
আর তোমরা কাফিরদের বন্ধন ধরে রেখো না। … এই আয়াত প্রমাণ করে, শুধু মুখের কথায় “মুসলিম” হওয়া যথেষ্ট নয় — বরং প্রকৃত ঈমান থাকা চাই।
☑️
যাচাইযোগ্য ঈমান ছাড়া বিবাহ বৈধ নয়। ☑️ মুমিন নারীদের কাফিরদের কাছে ফেরত নয় — ঈমানই সম্পর্কের
মানদণ্ড ☑️ কাফিরদের সাথে বন্ধন রাখা যাবেনা। ৭️⃣ ইসলামের সীমার বাইরে
থাকা মানেই শিরক — বিবাহের আগেই ঈমান আনা ও তা ঘোষণা করা জরুরি 📖সূরা আন-নিসা ৪:১৩৬ 📖সূরা আল-বাকারা ২:41 📖সূরা আল-বাকারা ২:১৩৬ 📖সূরা আলে ইমরান ৩:৮৪ 📖সূরা আল-বাকারা ২:২৮৫ 📖সূরা আলে ইমরান ৩:৫৩ ✅ কুরআন
অনুসারে,
মুসলিমদের
মধ্যে
বৈবাহিক
সম্পর্ক
স্থাপনের
পূর্বশর্ত
হলো
ঈমান। "খারাপ নারীরা খারাপ পুরুষদের জন্য এবং খারাপ পুরুষরা খারাপ নারীদের জন্য। আর ভালো নারীরা ভালো পুরুষদের জন্য এবং ভালো পুরুষরা ভালো নারীদের জন্য। তারা যা বলে (অর্থাৎ বদনাম বা অপবাদ, দ্র: ২৪:৩, ২৪:২৩, 33:58, ১০৪:১, ৮৫:১০) তার থেকে তারা মুক্ত। তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত (ক্ষমা) ও সম্মানজনক রিযিক"- ২৪:২৬
🎯 চরিত্রে মিল
না থাকলে, জীবনে শান্তি আসে না। 📖 গোপন বিবাহ নিষিদ্ধ — কুরআনের ভাষায় ৩. সির্রান (গোপন সঙ্গিনী) নিষিদ্ধ
ঘোষণা 📖 সূরা নিসা ৪:২৫ "...না
যেন তারা ব্যভিচারিণী হয়, না যেন গোপন সঙ্গিনী হয় (بِغَيْرِ سِرٍّ)..." 🔍 এখানে স্পষ্টভাবে গোপন সম্পর্ক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ✦ অধ্যায় ৩: স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক দায়িত্ব ও আচরণ 📖 সূরা নিসা ৪:১৯ “...তোমরা নারীদের সঙ্গে সুন্দরভাবে বসবাস করো...” 📖 সূরা বাকারা ২:১৮৭ “...তারা তোমাদের জন্য আবরণ, আর তোমরা তাদের জন্য আবরণ... 📖...তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের কেউ কেউ তোমাদের শত্রু হতে পারে, সুতরাং তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকো...64:4, 2:36, 20:123, 7:24 📌 🕋
শেষ
কথা
ও
দো‘আ: প্রিয় মুমিন-মুমিনাত, মুসলিম ভাই ও বোনেরা,
বিবাহ কেবল
দৈহিক
সম্পর্ক
নয়,
বরং
এটি
একটি
আধ্যাত্মিক
ও
নৈতিক
বন্ধন।
ঈমানই সম্পর্কের
আসল বন্ধন। বিবাহ শুধু সামাজিক চুক্তি নয় — এটা এক ইবাদত, এক আখিরাতের প্রস্তুতি। তাই পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ের সময় ‘দ্বীন’ ও ‘ঈমান’ হোক প্রথম বিবেচ্য। فَإِمْسَاكٌۢ بِمَعْرُوفٍ
أَوْ تَسْرِيحٌۢ بِإِحْسَٰنٍۢ “অথবা তাকে ভালোভাবে
রাখা, অথবা তাকে ভালোভাবে বিদায় দেওয়া” -সূরা বাকারা: ২:২২৯
কুরআনের
নির্দেশনা
হলো: ঈমান
ব্যতীত
কোনো
স্থায়ী
দাম্পত্য
সম্পর্ক
গড়ে
উঠতে
পারে
না-সূরা
মুহাম্মদ
৪৭:১৯ "জেনে
রাখো,
আল্লাহ
ছাড়া
কোনো
ইলাহ (মান্যকারী)
নেই,
অতএব
তুমি
ক্ষমা
চাও..."-৩:৫৩ رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنزَلْتَ وَٱتَّبَعْنَا ٱلرَّسُولَ فَٱكْتُبْنَا مَعَ ٱلشَّـٰهِدِينَ
"হে
আমাদের
রব!
আমরা
ঈমান
এনেছি,
আপনি
যা
নাযিল
করেছেন,
এবং
আমরা
রাসূলের
অনুসরণ
করেছি।
আমাদেরকে
সাক্ষ্যদানকারীদের
অন্তর্ভুক্ত
করুন।" 🤲 দুআ: رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍۢ وَٱجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًۭا
খুতবা
শেষে কবুলিয়াতের জন্য দুআ হিসেবে আল-কুরআনের আরও
কিছু দোআ সংযুক্ত করা যায়, যেগুলো বিশুদ্ধ, আরবি, অর্থবহ এবং নবীদের মুখনিঃসৃত — অর্থাৎ সর্বোত্তম দোআ। নিচে কিছু উপযুক্ত কুরআনি দোআ দেওয়া হলো, যেগুলো খুতবার শেষে সুন্দরভাবে ব্যবহার করা যায়: 🌟 ১. দোআ: আল্লাহ আমাদের কবুল করে নিন رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ ۚ وَ تُبۡ عَلَیۡنَا ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۲۸
হে আমাদের রব! আপনি আমাদের পক্ষ
থেকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি, আপনিই সর্বস্পন্দনগ্রাহী, বিস্তৃত জ্ঞানসম্পন্ন।
এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি,
আপনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা
আল-বাকারা ২:১২৭-128) 🕊️ ২. ক্ষমা ও দয়া চাওয়া: رَبَّنَا اغۡفِرۡ لَنَا وَ لِاِخۡوَانِنَا
الَّذِیۡنَ سَبَقُوۡنَا بِالۡاِیۡمَانِ وَ لَا تَجۡعَلۡ فِیۡ قُلُوۡبِنَا غِلًّا
لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا رَبَّنَاۤ اِنَّکَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ ﴿ হে আমাদের
রব! আমাদেরকে ও আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করে দিন, যারা ঈমানের সাথে আমাদের আগে চলে
গিয়েছে। আর যারা ঈমান এনেছে, তাদের জন্য আমাদের অন্তরগুলোর মধ্যে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন
না। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আপনি স্নেহপরায়ণ দয়ালু। (সূরা আল-হাশর ৫৯:১০) 🌈 ৩. দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ: رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِى ٱلدُّنْيَا حَسَنَةًۭ وَفِى ٱلْـَٔاخِرَةِ حَسَنَةًۭ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ হে আমাদের
রব! আমাদেরকে দুনিয়ার মধ্যে কল্যাণ ও আখিরাতের মধ্যে কল্যাণ দিন। এবং আমাদেরকে আগুনের
শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সূরা
আল-বাকারা ২:২০১) 💫 ৪. পথ প্রদর্শনের দোআ: رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلْوَهَّابُ “হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে পথ প্রদর্শনের পর
অন্তরগুলোকে টলিয়ে দিয়েন না, এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা (সূরা আলে ইমরান ৩:৮)
══❁🌸❁══ 💠 আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল ﷺ এর অনুসরণে: আল কোরআনের খুতবা বা আয়াতসমূহ উপস্থিত
স্বাক্ষীগণসহ সকলে শুনেছেন এবং স্বাক্ষীগণ পাত্রীর কাছ থেকেও শুনেছেন এবং নিশ্চিত হয়েছেন যে পাত্রী সম্মত: ‘سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا،
غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ (আমরা শুনলাম ও মানলাম; হে আমাদের প্রভু! আমরা তোমার ক্ষমা চাই, এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করব-(২:২৮৫)”)?” 🗣️ নিকাহ প্রস্তাব (ইজাব) — পাত্রীর অভিভাবক কর্তৃক, সূরা আল-কাসাস ২৮:২৭ অনুসারে পাত্রীর অভিভাবকের বক্তব্য: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ আমি, [নাম], [ঠিকানা], আমার কন্যা [পাত্রীর নাম]-এর অভিভাবক হিসেবে আল্লাহর বিধান মোতাবেক, সূরা আন-নিসা ৪:৪ অনুসারে একটি সম্মানজনক মাহর নির্ধারণ করে নগদ এক লক্ষ টাকা মাহর প্রদান সাপেক্ষে নিম্নলিখিত প্রস্তাব রাখছি। আমি এটি করছি আল্লাহর শেখানো ভাষা ও সালামুন আলা মুহাম্মদ ও সালামুন ‘আলা আল-মুরসালিনদের পদ্ধতির অনুসরণে: আল-কোরআনের সূরা কাসাস ২৮:২৭ আয়াতের অনুরূপভাবে, আমি — [নাম ও ঠিকানা], পিতা [অভিভাবকের নাম], পাত্র [পাত্রের নাম] — পিতা [পাত্রের পিতার নাম] এর কাছে, তার আর্থিক সামর্থ্য ও সূরা আন্-নিসা ৪:৪ অনুসারে সম্মানজনক এবং পরিমিত একটি উযরাত (মাহর) নির্ধারণ করে নগদ এক লক্ষ টাকা উযরাত প্রদান সাপেক্ষে নিম্নলিখিত প্রস্তাব রাখছি। আমি
বলছি: إِنِّى أُرِيدُ أَنْ أُنكِحَكَ
إِحْدَى ٱبْنَتَىَّ 📖 "নিশ্চয়ই আমি আমার কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই..."-(সূরা আল-কাসাস ২৮:২৭) আমি আমার কন্যা [পাত্রীর নাম]-কে আপনার সঙ্গে বিবাহ দিতে ইচ্ছুক ও প্রস্তাব করছি। 🤝 নিকাহ গ্রহণ (কবুল)
— পাত্র কর্তৃক, কুরআনের নির্দেশনার ভিত্তিতে: পাত্রের সম্মতিসূচক ঘোষণা: আমি — [নাম], পিতা [নাম], ঠিকানা [ঠিকানা],
আল্লাহর কিতাব আল-কোরআনুল কারিমের বিধান জেনে, বুঝে এবং মেনে সূরা আন্-নিসা ৪:৪ অনুযায়ী
— "وَآتُوا ٱلنِّسَآءَ
صَدُقَٰتِهِنَّ نِحْلَةً" 📖 "তোমরা নারীদেরকে তাদের মাহর আনন্দের সাথে দাও।" এবং সূরা আহযাব ৩৩:৫০ ও সূরা কাসাস ২৮:২৭ অনুসারে বিধান মেনে, আমি নগদ এক লক্ষ টাকা উযরাত (মাহর) পরিশোধ সাপেক্ষে [পাত্রীর নাম, কন্যা [পাত্রীর পিতার নাম], ঠিকানা] — তাকে আল্লাহর বিধান অনুসারে বিবাহে গ্রহণ করছি। আমি বলছি: سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا،
غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ 📖 “আমরা শুনলাম ও মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা তোমার ক্ষমা চাই এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করব” — (সূরা বাকারা ২:২৮৫) وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا — “আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়িত হয়েই থাকে” — (সূরা আহযাব ৩৩:৩৮) 📖 বিজনিল্লাহ ! আল্লাহর বিধান অনুযায়ী এবং তাঁর রাসূলদের অনুসরণে আমি এই বিবাহের প্রস্তাব গ্রহণ করলাম। ইনশাআল্লাহ, আমি এতে সত্য ও স্থির। 🧔 শ্বশুর/অভিভাবকের সমাপ্তি উক্তি (সূরা কাসাস ২৮:২৭ অনুযায়ী) أُرِيدُ أَنْ أُنكِحَكَ — আমি বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছি এবং আপনি তা কবুল করেছেন। সুতরাং আমি সাক্ষীগণের সামনে বলছি: سَتَجِدُنِي إِن شَاءَ اللَّهُ
مِنَ الصَّالِحِينَ 📖 "ইনশাআল্লাহ! তুমি আমাকে পাবে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত" — (সূরা কাসাস ২৮:২৭) আমি আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এই চুক্তি স্বেচ্ছায়, উযরাত নির্ধারিত করে, পূর্ণ সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত করুন। 🤲 উভয়ের সম্মিলিত ঘোষণা (আল্লাহকে সাক্ষী রেখে, চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার
পর) اللَّهُ عَلَىٰ مَا نَقُولُ وَكِيلٌ 📖“আমরা যা বললাম, আল্লাহ তার রক্ষক (ওকীল)।” — (সূরা কাসাস
২৮:২৮) 📖 وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَكِيلًا — “আল্লাহই যথেষ্ট কর্মবিধায়ক।” — (সূরা আহযাব ৩৩:৩)
🔖 অতঃপর, আমরা একসঙ্গে
বলি: 📖 سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا، غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ — (২:২৮৫) 📖 رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّآ ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ — (২:১২৭) 📖 رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَآء — (১৪:৪০)
"...আমরা শুনলাম এবং মান্য করলাম। হে আমাদের রব! তোমার ক্ষমা চাই। আর তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন আমাদের- ২:২৮৫ (প্রয়োগযোগ্যতা:বিবাহে বা যেকোনো চুক্তিতে আল্লাহর হুকুম মেনে নেওয়ার ঘোষণা হিসেবে এটি উপযুক্ত)। "... হে আমাদের রব! আমাদের পক্ষ থেকে (আমাদের কাজটি) কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী- ২:১২৭ " হে আমাদের রব! আমাদের দোয়া কবুল করো- ১৪:৪০। 🖋️ চুক্তিপত্র স্বাক্ষর
পর্ব:
“صَدَقَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُ” “سُبْحَٰنَكَ ٱللَّهُمَّ
وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَـٰمٌۭ ۚ وَءَاخِرُ دَعْوَىٰهُمْ أَنِ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ
رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ” 📖 আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সত্য বলে প্রমাণ করেছেন-48:27 “হে আল্লাহ! পবিত্রতা আপনারই । আর তাদের অভ্যর্থনা হবে ‘সালাম’। আর তাদের শেষ কথা হবে: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সকল জগতের প্রতিপালক-(১০:১০)।
(প্রয়োগযোগ্যতা: চুক্তিপত্রে, বিবাহে, বিজয় বা প্রতিজ্ঞার পর, কিংবা আল্লাহর বিধান মেনে নেওয়ার পর পাঠযোগ্য আয়াত)। (এই আয়াতটি ব্যবহার করা যায় খুতবা, দোয়া, চুক্তিপত্র বা যেকোনো দ্বীনি অনুষ্ঠান শেষে কৃতজ্ঞতার চিহ্ন হিসেবে) ✅ বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই
রূপরেখাটি কুরআনের স্পষ্ট আয়াতের ভিত্তিতে রচিত এবং এতে মাহর, সম্মতি, প্রস্তাব-গ্রহণ, স্বাক্ষী, ও দুআর মতো সকল প্রয়োজনীয় উপাদান সন্নিবেশিত। এটি সংযুক্ত। বাংলাভাষী মুসলিম সমাজে এটি একটি কুরআনসম্মত, পাঠযোগ্য এবং বাস্তবায়নযোগ্য বিবাহ স্ক্রিপ্ট হিসেবে কাজ করতে পারে। |
Leave a Comment