🔖 বিয়ের খুতবা: দাম্পত্য জীবন ও সন্তান প্রতিপালনে 📖 আল-কুরআনুল হাকিম অনুধাবনে

📌 সারাংশ:

এই খুতবাটি কুরআনের আয়াতসমূহের ভিত্তিতে দাম্পত্য জীবন ও সন্তান প্রতিপালনের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ তুলে ধরে। এতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে শয়তানের ধোঁকা ও তার সন্তান-সন্ততি ও সম্পদে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে, যাতে আমাদের সচেতন থাকতে হয়। পাশাপাশি কুরআনের প্রাসঙ্গিক দো‘আসমূহের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে।

এই খুতবা উপস্থাপন করা যেতে পারে:
- বিয়ের বা নিকাহের সময়
- সন্তান জন্মের পর (নামকরন উপলক্ষে)
- পারিবারিক সভা বা উপদেশমূলক মাহফিলে

👉 উদ্দেশ্য: পরিবারকে কুরআনের আলোকে গঠন ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
👉 মূল থিম: সতর্কতা, শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা, সন্তানদের জন্য দো‘আ।

🗣️ সূচনাবাক্য

🌟 রবের প্রতি কৃতজ্ঞতাসহ প্রশংসা-1

এই খুতবার সূচনা অংশে কেবল আল্লাহর প্রশংসা রয়েছে — তা কুরআনের বিশুদ্ধ ও সরাসরি আয়াত দ্বারা। এটি আপনি যে কোনো খুতবার শুরুতে পাঠ করতে পারেন।

سَلَامٌ عَلَيْكُمْ ۝

وَسَلَـٰمٌ عَلَى ٱلْمُرْسَلِينَ ۝ وَٱلْـحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ

رَّبِّ اَعُوۡذُ بِکَ مِنۡ ہَمَزٰتِ الشَّیٰطِیۡنِ    وَ اَعُوۡذُ بِکَ رَبِّ اَنۡ یَّحۡضُرُوۡنِ

بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
آلْـحَمْدُ لِلَّهِ وَسَلَامٌ عَلَىٰ عِبَادِهِ ٱلَّذِينَ ٱصْطَفَىٰ
رَّبِّ ٱشْرَحْ لِى صَدْرِى ۝ وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى ۝ وَٱحْلُلْ عُقْدَةًۭ مِّن لِّسَانِى ۝ يَفْقَهُوا۟ قَوْلِى

إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ ۝ لَا شَرِيكَ لَهُۥ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلْمُسْلِمِينَ

সালামুন আলাইকুম (৬:৫৪)। আর রসূলগণের ওপর সালাম। এবং সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের রব আল্লাহরই জন্য-৩৭:১৮০-১৮২

হে আমার রব! আমি আপনার কাছে শয়তানদের প্ররোচনা থেকে আশ্রয় চাই। আর হে আমার রব! আমি আমার কাছে তাদের উপস্থিত হওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই-23:97-98

সব প্রশংসা আল্লাহর, আর শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর মনোনীত বান্দাদের উপর-27:59

হে আমার রব! আমার জন্য আমার অন্তর প্রশস্ত করে দিন। আর আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দিন। আর আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন; তারা আমার কথা বুঝতে পারে-20:25-28

নিশ্চয়ই আমার সলাত ও আমার ত্যাগ এবং আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের রব আল্লাহর জন্য। তাঁর জন্য শরীক নেই। এবং আমি ওটারই নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছি। আর আমিই অগ্রবর্তী মুসলিম-6:162-163

“সম্মানিত উপস্থিতি, আমার প্রিয় মুসলিম, মুমিন, মুমিনাত ভাই ও বোনেরা! যে যেখান থেকে শুনছেন বা অংশ নিচ্ছেন, আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হলো-দাম্পত্য জীবন ও সন্তান প্রতিপালনে কুরআনের আলোকে-

শয়তানের প্রভাব থেকে দাম্পত্য জীবন ও সন্তানদের হেফাজত:

সূরা আল-আ‘রাফ (৭:১৭), সূরা বনি ইসরাঈল (১৭:৬৪), এবং সূরা আন-নিসা (৪:১১৯)-এর আলোকে বোঝানো হয়েছে, কিভাবে শয়তান মানুষের সন্তান ও সম্পদে অংশ নিতে চায়, এবং পারিবারিক জীবনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

📖 ১. দাম্পত্য জীবনে শয়তানের হস্তক্ষেপ: সূরা আল-আ‘রাফ (৭:১৭)

"ثُمَّ لَآتِيَنَّهُم مِّنۢ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْ

وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَـٰكِرِينَ"

🔹 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

• শয়তান মানবজীবনের সবদিক থেকে প্রবেশ করে: সামনে (ভবিষ্যৎ), পেছনে (অতীত), ডানে (সৎ কাজ), বামে (অপকর্ম)।
• দাম্পত্য জীবনে এই প্ররোচনার প্রকাশ ঘটে: অবিশ্বাস, দম্ভ, অবজ্ঞা, সম্পর্কচ্ছেদ।

---

📖 ২. সন্তান ও সম্পদে শয়তানের প্রভাব: সূরা বনি ইসরাঈল (১৭:৬৪)

"وَشَارِكْهُمْ فِى ٱلْأَمْوَٰلِ وَٱلْأَوْلَـٰدِ وَعِدْهُمْ ۚ وَمَا يَعِدُهُمُ ٱلشَّيْطَـٰنُ إِلَّا غُرُورًا"

🔹 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

• শয়তান মানুষকে এমন পথে পরিচালিত করে যাতে তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান বিকৃত হয়ে পড়ে।
• পরিবারে হালাল-হারাম অবজ্ঞা, সন্তানদের অবাধ্যতা — এই আয়াতের বাস্তবতা।

---

📖 ৩. আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃতি করা: সূরা আন-নিসা (৪:১১৯)

"وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ ٱللَّهِ"

🔹 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

• শয়তান মানুষের স্বভাব, শরীর, মন, ও পারিবারিক কাঠামোকে পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়।
• দাম্পত্য সম্পর্ক, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব, সন্তান প্রতিপালন — সব ক্ষেত্রেই বিকৃতি ঘটাতে চায়।

---

1.     📖 ৪. দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য: সূরা আর-রূম (৩০:২১)

"وَمِنْ ءَايَـٰتِهِۦٓ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَٰجًۭا لِّتَسْكُنُوٓا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةًۭ وَرَحْمَةً"

🔹 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

• আল্লাহ স্বয়ং দাম্পত্য সম্পর্কে রেখেছেন "সুকুন" (শান্তি), "মওদ্দাহ" (ভালবাসা), ও "রাহমাহ" (দয়া)।
• এই শান্তি তখনই থাকবে যখন শয়তানের প্ররোচনা থেকে দূরে থাকা যায়।

---

📖 ৫. দাম্পত্যের সফলতা কীভাবে? – সূরা আল-ফুরকান (২৫:৭৪)

"رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَٰجِنَا وَذُرِّيَّـٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍۢ وَٱجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا"

🔹 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

• আল্লাহর কাছে চাওয়া উচিত: "আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের চোখের শীতলতা করো।"
• কুরআনেই শিখায় কী চাওয়া উচিত দাম্পত্য জীবনে।

📖 Qur’anic Duas: Care & Share 🤲🏼 (WhatsApp group)

📜 সন্তান প্রতিপালনে সতর্কতা ও আল্লাহর শরণাপন্নতা: দাম্পত্য ও সন্তানের জন্য কুরআনের দো‘আসমূহ:

"رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَٰجِنَا وَذُرِّيَّـٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍۢ وَٱجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا"

হে আমাদের রব! আপনি আমাদের দাম্পত্যসাথীদের ও আমাদের প্রজন্মের মধ্য থেকে আমাদের জন্য চক্ষুসমূহ শীতলকারী দান করুন। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য ইমাম বানিয়ে দিন-25:74

وَرَبِّ لَا تَذَرْنِى فَرْدًۭا وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْوَٰرِثِينَ

আমাকে একা রেখো না, তুমি শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারী। সূরা আম্বিয়া (২১:৮৯)

رَبِّ ہَبۡ لِیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ ذُرِّیَّۃً طَیِّبَۃً ۚ اِنَّکَ سَمِیۡعُ الدُّعَآءِ ﴿۳۸

হে আমার রব! আপনি আমাকে আপনার কাছ থেকে উত্তম এক বংশধর দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি দুআ শ্রবণকারী। সূরা আলে ইমরান (৩:৩৮)

رَبِّ هَبْ لِى مِنَ ٱلصَّـٰلِحِينَ

হে আমার রব! আপনি আমার জন্য সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে দান করুন। সূরা আস-সাফফাত (৩৭:১০০)

 

رَبَّنَا وَ اجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَیۡنِ لَکَ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِنَاۤ اُمَّۃً مُّسۡلِمَۃً لَّکَ ۪ وَ اَرِنَا مَنَاسِکَنَا وَ تُبۡ عَلَیۡنَا ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۲۸

হে আমাদের রব! আর আমাদের উভয়কে আপনার জন্য মুসলিম এবং আমাদের বংশধারা থেকে আপনার জন্য একটি মুসলিম উম্মত বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদতের কার্যক্রম দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি, আপনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু-সূরা বাকারা (২:১২৮)

 رَبِّ اجۡعَلۡ ہٰذَا الۡبَلَدَ اٰمِنًا وَّ اجۡنُبۡنِیۡ وَ بَنِیَّ اَنۡ نَّعۡبُدَ الۡاَصۡنَامَ ﴿ؕ۳۵

হে আমার রব! এই নগরীকে আপনি নিরাপদ করুন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিসমূহের উপাসনা করার ক্ষেত্রে দূরে রাখুন। সূরা ইব্রাহিম (১৪:৩৫-৩৬)

 رَبَّنَا لِیُـقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ فَاجۡعَلۡ اَفۡئِدَۃً مِّنَ النَّاسِ تَہۡوِیۡۤ اِلَیۡہِمۡ وَارۡ زُقۡہُمۡ مِّنَ الثَّمَرٰتِ لَعَلَّہُمۡ یَشۡکُرُوۡنَ

হে আমাদের রব! যাতে তারা সলাত প্রতিষ্ঠা করে। অতএব, আপনি কিছু মানুষের অন্তরগুলো তাদের দিকে অনুরাগী করে দিন এবং তাদেরকে ফল—ফলাদির থেকে জীবিকা দান করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। সূরা ইব্রাহিম (১৪:৩৭)

رَبِّ اجۡعَلۡنِیۡ مُقِیۡمَ الصَّلٰوۃِ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ ٭ۖ رَبَّنَا وَ تَقَبَّلۡ دُعَآءِ ﴿۴۰

হে আমার রব! আমাকে এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকে সলাত প্রতিষ্ঠাকারী বানান। হে আমাদের রব! আর আপনি আমার দুআ কবুল করুন। সূরা ইব্রাহিম (১৪:৪০-৪১)

رَبِّ اجۡعَلۡ ہٰذَا بَلَدًا اٰمِنًا وَّ ارۡزُقۡ اَہۡلَہٗ مِنَ الثَّمَرٰتِ مَنۡ اٰمَنَ مِنۡہُمۡ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ

হে আমার রব! আপনি একে নিরাপদ শহর বানান এবং এর অধিবাসীদেরকে ফল-ফসলাদির মধ্য থেকে রিযিক দান করুন, তাদের মধ্য থেকে যে আল্লাহর ও শেষদিনের প্রতি ঈমান এনেছে। সূরা বাকারা (২:১২৬)

 

আর আমরা মানুষকে অসিয়ত করেছি তার বাবা-মায়ের সাথে উত্তম আচরণ করতে। তার মা তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছিল এবং তাকে কষ্ট করে প্রসব করেছিল। আর তার গর্ভধারণ এবং তার দুগ্ধত্যাগ ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তি-সামর্থ্যে পৌঁছল এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হলো, সে বলল!

رَبِّ اَوۡزِعۡنِیۡۤ اَنۡ اَشۡکُرَ نِعۡمَتَکَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ وَ عَلٰی وَالِدَیَّ وَ اَنۡ اَعۡمَلَ صَالِحًا تَرۡضٰہُ وَ اَصۡلِحۡ لِیۡ فِیۡ ذُرِّیَّتِیۡ ۚؕ اِنِّیۡ تُبۡتُ اِلَیۡکَ وَ اِنِّیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿۱۵

হে আমার রব! আপনি আমাকে আপনার সে নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের যোগ্যতা দিন, যে নিয়ামত আপনি আমার প্রতি এবং আমার বাবা-মায়ের প্রতি দিয়েছেন এবং আমলে সলেহ করার, যা আপনি পছন্দ করেন। আর আপনি আমার জন্য আমার প্রজন্মের মধ্যে পরিশুদ্ধি দান করুন। নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে তওবা করলাম। আর নিশ্চয়ই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত- সূরা আহকাফ (৪৬:১৫) 

إِنِّىٓ أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ ٱلشَّيْطَـٰنِ
নিশ্চয়ই আমি তাকে ও তার বংশধরকে বিতাড়িত শয়তান হতে আপনার কাছে আশ্রয়ে দিচ্ছি-সূরা আলে ইমরান (৩:৩৬)