মানুষের মৃত্যু মুহূর্তে কি জান্নাত-জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে যায়? তাহলে শেষ বিচারের (জানাযা, হিসাব-নিকাশ) ভূমিকা কী?-সুপার ডিজিটাল হিসাব-নিকাশ System!

মৃত্যুর সাথেসাথেই ফেরেশতারা কারো জন্য শান্তি ও জান্নাতের সুসংবাদ দেন, আবার কারো ওপর শাস্তি নাযিল করতে শুরু করেন।

সহজভাবে বুঝুন — এটি “সুপার ডিজিটাল হিসাব-নিকাশ”

👉 মৃত্যুর মুহূর্তেই ভারডিক্ট ঘোষণা হয়ে যায় (Fast Preview Result)
👉 কিয়ামতের দিন পাবলিকলি রায় পড়া হবে (Official Declaration)

এটি অনেকটা এরকম:

একজন অপরাধীকে পুলিশ ধরার সময়ই বলে— “তুমি গ্রেপ্তার, জেলে যাচ্ছ!”
কিন্তু কোর্টে গিয়ে পুরো বিচার শেষ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক সাজা ঘোষণা হয়।

-এতে  “ইন্সট্যান্ট প্রিভিউ জাজমেন্ট” প্রমাণ করে-

---

তাহলে জানাযা / দোয়া / সদকা ইত্যাদি কী কাজে লাগে?

📌 এগুলো হলো "Appeal System" — মুমিনরা দোয়ার মাধ্যমে জীবিত থাকাকালীণ যা করার করে নিতে হয় (একমাত্র নাযিলকৃত আয়াত অনুযায়ী), আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, যাতে আল্লাহ তার অবস্থান আরও উন্নত করেন। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের অনুসরণে আয়াতে বিশ্বাসী, মানুষের মৃত্যুর মুহূর্তটি একটি টার্নিং পয়েন্ট। এই সময় থেকেই পরকালীন জীবনের প্রথম ধাপ শুরু হয় এবং জান্নাত বা জাহান্নামের একটি আভাস পাওয়া যায়। আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলার হিসাব-নিকাশ এতটাই দ্রুত ও নিখুঁত যে, আমরা তাকে "সুপার ডিজিটাল" বলতে পারি, যেখানে কোনো বিলম্ব নেই, কোনো ত্রুটি নেই।

মুত্তাকীদের মৃত্যুর মুহূর্ত:

মৃত্যুর সময় একমাত্র নাযিলকৃত অহীর অনুশীলনে আয়াতে বিশ্বাসী মুসলিমের জন্য ফেরেশতারা ওয়েলকামের বার্তা ’সালামুন আলাইকুম’ বলে জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে হাজির হন। তাদের প্রশান্তির সাথে গ্রহণ করা হয়। আল-কুরআনে এই বিষয়টি সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে:

"তারা (ফেরেশতারা) যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র  (ত্বায়্যিবিন) অবস্থায় , তারা (ফেরেশতারা) বলবে, তোমাদের ওপর সালাম। তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো সে কারণে, যা তোমরা করতে/আমল করতে-সূরা আন-নাহল ১৬:৩২ (16:30-32)

এটিই সেই ক্ষণ যখন বান্দা রবের দিকে ফিরে আসে সন্তুষ্টচিত্তে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

"ফিরে এসো তোমার রবের দিকে সন্তুষ্টচিত্তে, সন্তোষভাজন হয়ে। এরপর তুমি অন্তর্ভুক্ত হও আমার বান্দাদের মধ্যে। এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।"
— সূরা আল-ফাজর ৮৯:২৮-৩০

এই আয়াতগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, মৃত্যুর মুহূর্তেই নেককার বান্দা তার জান্নাতের পথ দেখতে পায় এবং ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়।

অন্যদিকে, যারা নাযিলকৃত আয়াতের ব্যাপারে কুফর করে-জুলুম করে তাদের জন্য মৃত্যুর মুহূর্তটি:

ফেরেশতারা তাদের আত্মাকে কঠোরভাবে টেনে বের করেন (79:1) এবং তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তির পূর্বাভাস দেন।

"আর যদি তুমি দেখতে, যারা কুফর করেছে ফেরেশতারা যখন তাদের রূহ কবজ করে, তারা তাদের চেহারায় ও তাদের পিঠে আঘাত করে, (আর বলে) ‘তোমরা জ্বলন্ত আগুনের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করো’; সেটা সে কারণে, যা তোমাদের হাত পূর্বে পাঠিয়েছিল।"
— সূরা আল-আনফাল ৮:৫০ (16:18)

এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো ফিরআউন ও তার অনুসারীদের ক্ষেত্রে। যদিও মূল বিচার কিয়ামতের দিন হবে, তবুও কবরের জীবনে তাদের জন্য আগুনের মুখোমুখি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।

"আগুন, তার ওপর সকাল ও সন্ধ্যায় তাদেরকে উপস্থিত করা হবে। আর যেদিন মহাক্ষণ সংঘটিত হবে; (বলা হবে) ‘ফিরআউনের অনুসারীদের কঠোর শাস্তিতে প্রবেশ করাও’।"
— সূরা আল-মু'মিন (৪০): ৪৬

 

প্রতীকী ছবি

 সুপার ডিজিটাল হিসাব-নিকাশ: কিয়ামতের ময়দানে কি হবে?

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, মৃত্যুর পরই জান্নাত বা জাহান্নামের একটি প্রারম্ভিক অবস্থা বা পূর্বাভাস শুরু হয়ে যায় (যা বারযাখের জীবন নামে পরিচিত)। কিন্তু চূড়ান্ত ফয়সালা, আমলনামা ওজন করা এবং সকলের সামনে সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে কিয়ামতের দিন।

আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা হিসাব গ্রহণে এতটাই দ্রুত যে, কোটি কোটি মানুষের হিসাব এক মুহূর্তে সম্পন্ন করা তাঁর জন্য কঠিন নয়। তাঁর এই ক্ষমতাকে "সুপার ডিজিটাল" ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়!

"এদেরই জন্য রয়েছে তাদের উপার্জনের অংশ। আর আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।"
— সূরা আল-বাকারা (২): ২০২

"তারপর তাদেরকে তাদের প্রকৃত মালিক আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে আনা হবে। জেনে রাখো, বিধান তাঁরই, আর তিনিই দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।"
— সূরা আল-আন'আম (৬): ৬২

"আর কত জনপদ তাদের রবের আদেশ ও তাঁর রাসূলগণের আদেশ লঙ্ঘন করেছিল, ফলে আমি তাদেরকে কঠিন হিসাবের মাধ্যমে পাকড়াও করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি এক বীভৎস শাস্তি।"
— সূরা আত-ত্বালাক (৬৫): ৮

"অতএব, যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে, তার হিসাব সহজেই হয়ে যাবে।"
— সূরা আল-ইনশিকাক (৮৪): ৭-৮

এই আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, আল্লাহর হিসাব গ্রহণ এত দ্রুত ও নির্ভুল যে, কোনো মানুষের পক্ষেই তা কল্পনা করা সম্ভব নয়। মৃত্যুর পর বারযাখের জীবন এবং কিয়ামতের চূড়ান্ত বিচার — উভয় স্থানেই তাঁর অসীম ক্ষমতা ও ন্যায়বিচারের প্রকাশ ঘটবে।

---