পর্দা ও পোশাক: নারী-পুরুষের ড্রেস-কোড: তাকওয়ার পোশাক: একজন রোল-মডেল। A Dress of Piety.

এই কন্টেন্টটি আল-কোরআন ভিত্তিক চিন্তা-ভাবনায় আপনাকে সহায়তা করতে পারে যে বিষয়গুলি: 

  • পুরুষ ও নারীর পর্দা রক্ষার মূলনীতি এবং একজন আদর্শ নারীর পর্দা পালনের পদ্ধতি, যিনি বিশ্ব নারীদের জন্য রোল-মডেল।

  • বিয়ের পূর্বে যুবক-যুবতীর পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ বিষয়ে  আল কোরআনের একটি উদাহরণ। 

  • আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নির্ধারিত পর্দার সীমারেখা ও মাপকাঠি, এবং আমরা তা পালনে যে কম-বেশি করি, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা।

  • সমাজে পরকীয়া ও অশ্লীলতার প্রসার কেন এত ব্যাপক এবং এটি প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠার কারণ।

  • পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ধ্বংসের অন্যতম কারণ হিসেবে অশ্লীলতার ভূমিকা—কোরআনিক উদাহরণসহ বিশ্লেষণ।
  • ইহুদিদের পর্দা প্রথা কেমন? (তাওরাত বা তোরাহ অনুযায়ী)/ বাইবেল অনুযায়ী খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পর্দা প্রথা:

  • অশ্লীলতা ও ফাহেশা কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে গুনাহ করে ফেললে আল-কোরআন ভিত্তিক তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার দুআর ভাষা/দরখাস্তের নির্ধারিত ফরমেট:

যেহেতু আল্লাহ রব্বুল আলামিন নিজেই বলেছেন—

📖"আমি কিতাবে কোনো কিছুই বাদ দেইনি" (সূরা আল-আনআম :৩৮📖"আমরা কোরআনে সবকিছু বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছি"-১৬:৮৯ 📖আর অবশ্যই আমরা মানুষের জন্য এই কুরআনের মধ্যে প্রতিটি দৃষ্টান্ত থেকে বহুভাবে বর্ণনা করেছি। তবে অধিকাংশ মানুষ কেবল অস্বীকারহেতু প্রত্যাখান করেছে-সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:৮৯। সুতরাং আর আমরা যারা সত্যিকার অস্বীকারহেতু প্রত্যাখানকারীদের অর্ন্তভুক্ত নই, তাহারাই আসুন  আল-কোরআন থেকেই অনুসন্ধান করে দেখি, মানার জন্য জানি-

ছবিটি প্রতীকী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।

Chapter-1

তাকওয়ার পোশাক: রোল-মডেল

একজন তাকওয়াবান, পর্দানশীল চরিত্রবান মায়ের পক্ষেই চরিত্রবান সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব! ইসলামী ইতিহাস বাস্তব জীবনেও এর বহু প্রমাণ উদাহরণ পাওয়া যায়

প্রমাণ:

. পিতা-মাতার দরখাস্ত যদি এমন হয়:

রব্বুল আল আমিন বলেন-

📖তারা বলে, ‘হে আমাদের রব ! আমাদের স্ত্রী সন্তানদেরকে আমাদের চোখের শীতলতা করে দাও এবং আমাদেরকে মুত্তাকিদের জন্য আদর্শ বানাও(সুরা আল-ফুরকান: ৭৪)

এই আয়াতে বোঝানো হয়েছে, তাকওয়াবান বাবা-মায়ের জন্য সন্তানও আশীর্বাদস্বরূপ হয় এবং তাদের আদর্শ অনুযায়ী বেড়ে ওঠে

. সৎ উত্তরাধিকার:

📖"আর যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সন্তানদেরও তাদের সঙ্গে মিলিত করব, এবং তাদের কৃতকর্মের কোনো ঘাটতি ঘটাব না; প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কর্মের বদলি" (সুরা আত-তূর: ২১)

মায়ের চরিত্র তাকওয়ার প্রভাব সন্তানদের ওপর পড়ে, কারণ তারা নৈতিক আধ্যাত্মিকভাবে একে অপরের সাথে সংযুক্ত

3. সূরা নূহ (৭১:২৭) বলা হয়েছে যে এই জাতির লোকেরা নিজেদের সন্তানদেরকেও অবিশ্বাসী বানিয়েছে? 

আর নূহ বলল! হে আমার রব! কাফিরদের মধ্য থেকে কোনো গৃহবাসীকে আপনি পৃথিবীর ওপর ছাড় দেবেন না। অবশ্য আপনি যদি তাদের ছেড়ে দেন, তারা আপনার বান্দাদের বিভ্রান্ত করবে। আর তারা কাফির পাপাচারী  (ফাঝীর) ছাড়া জন্ম দেয় না- সূরা নূহ 71:27-28  

(আরও জানতে-বুঝতে দ্র: সূরা নূহ, আয়াত ৭১:৫-২৭, দ্র: সূরা ইয়াছিন ৩৬:৫-১১)। 


সালামুন আলা মারইয়াম: পর্দা ও তাকওয়ার  অনন্য  এক আদর্শ (a role-model):

সালামুন আলা মারইয়াম নিজের সতীত্ব তাকওয়া রক্ষা করেছিলেন বলেই আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছিলেন। প্রমাণস্বরূপ, কুরআনে বলা হয়েছে:

"আর স্মরণ করো কিতাবের মধ্যে মারইয়ামকেযিনি তার লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করেছিলেন, ফলে আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম। তিনি তাঁর রবের বাণী কিতাবসমূহকে সত্য বলে মেনে নিয়েছিলেন এবং তিনি ছিলেন অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত" (সুরা আত-তাহরিম: ১২)  

[তাকওয়া: সজাগ-সচেতন-সাবধানতা অবলম্বন১৯:১৬-১৮, 33:32, (অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত-33:35, 4:34)]

 সালামুন আলা মারইয়াম-এর পর্দাশীলতা তাকওয়ার ফলে তিনি সালামুন আলা ঈসা এর মতো একজন সচ্চরিত্রবান মানুষ তথা নবীর মা হতে পেরেছিলেন

তাছাড়া, মারইয়ামের মাও ছিলেন একজন সৎ, চরিত্রবান নারী (১৯:২৮) তিনি কন্যার জন্য রবের আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন এবং সেভাবেই তাঁকে লালন-পালন করেছিলেন (:৩৬) ফলস্বরূপ, মারইয়াম বিশ্বজগতের নারীদের জন্য পর্দা শালীনতার এক অনন্য আদর্শ (:৪২)

এতে প্রমাণিত হয় যে একজন চরিত্রবান পর্দানশীল মা- প্রকৃতপক্ষে নেক চরিত্রবান সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম

ছবিটি প্রতীকী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।

শুধু পোশাকী পর্দা নয়; পর্দার সাথে শালীনতা, সতীত্ব রক্ষা আনুগত্যের অনুকরণীয় এক রোল-মডেল:

সূরা মারইয়াম (১৯:১৭-২৩) এবং আত-তাহরীম (৬৬:১২) আয়াতগুলো অধ্যয়ন করলে বোঝা যায়, সালামুন আলা মারইয়াম কতটা সতীত্ব, সংযম, শালীনতা লজ্জাশীলতার প্রতীক ছিলেন। তিনি আল্লাহর বাণীকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিয়েছিলেন এবং তাঁর চরিত্রের এই গুণাবলি কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আল্লাহ তাঁকে বিশ্বের নারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানিত করেছেন, যা তাঁর মহৎ চরিত্র তাকওয়ার পরিচায়ক

সালামুন আলা মারইয়াম আল্লাহর বাণী কিতাবের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য বিশ্বাস রেখেছিলেন, যা প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এটি নারীদের জন্য একটি আদর্শ, যারা পবিত্রতা শালীনতা বজায় রাখতে চান

এহেন চরিত্রবান লজ্জাস্থান সংরক্ষণকারী ছিলেন বলে আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছিলেন এবং আরেকজন চরিত্রবান মানুষের মা হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন (দ্র. ৬৬:১২)

এখন আমরা লক্ষ্য করব, সালামুন আলা মারইয়ামের পর্দা রক্ষার ধরন কেমন ছিল? সূরা মারইয়াম (১৯:২৭-২৯) আয়াতগুলোতে দেখা যায়, যখন মারইয়াম তাঁর গোষ্ঠীর সামনে আসেন, তখন তারা তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে চিনতে পারে। তারা জানতে পারে তিনি হারুনের বোন, অমুক বাবা-মায়ের কন্যা এবং তাঁর কোলে একটি শিশু রয়েছে

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে: যদি একজন নারী সম্পূর্ণরূপে আবৃত থাকেন (appearance), তাহলে কি তাঁকে সহজে চিনতে এবং তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়? এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, শালীনতা পর্দার মধ্যে এমন ভারসাম্য থাকা উচিত, যা নারীর পরিচয় মর্যাদা বজায় রাখে। পরিপূর্ণ আবরণে যদি কেউ পুরোপুরি অচেনা হয়ে যায়, তবে সামাজিকভাবে পরিচিতি রক্ষা করা কঠিন হতে পারে

শুধু পোশাকী পর্দা নয়; পর্দার সাথে শালীনতা, সতীত্ব রক্ষা আনুগত্যের অনুকরণীয় এক রোল-মডেল হয়ে ওঠাই প্রকৃত উদ্দেশ্য। এই শিক্ষা থেকে আমরা বুঝতে পারি, নারীর সতীত্ব শালীনতা কেবল ব্যক্তিগত দায়িত্ব নয়; বরং এটি সমাজে নারীর সম্মান গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মারইয়ামের মতো, আমাদেরও উচিত তাকওয়ার সাথে শালীনতা রক্ষা করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা

পর্দা কেবল শারীরিক আবরণের ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং এটি তাকওয়ার প্রতিফলন। তাকওয়া হলো আল্লাহর প্রতি সচেতনতা তাঁর নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা। শালীনতা রক্ষায় তাকওয়ার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি, কারণ এটি ব্যক্তির অন্তরের অবস্থা মানসিকতা প্রকাশ করে

শুধু বাহ্যিক আবরণ যথেষ্ট নয়, যদি অন্তরে তাকওয়া সতীত্ব না থাকে। প্রকৃত তাকওয়া আচরণ, কথাবার্তা সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় প্রতিফলিত হয়। একজন মেধাবী সচেতন নারী, যার অন্তরে তাকওয়া রয়েছে, তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে শালীনতা বজায় রাখার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন

তাকওয়া নারীর আত্মমর্যাদা আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি তাকে শক্তি সুরক্ষা প্রদান করে এবং সমাজে তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

দেখে  চেনা-পরিচিতি বোঝার উপায় মুত্তাকীর বৈশিষ্ট্য:

প্রমাণ? আমাদের রব বলেন, "হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো। নিশ্চয়ই আল্লাহর দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সে, যে সর্বাধিক মুত্তাকি। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন" (সূরা আল-হুজুরাত: ১৩)

"হে নবী! তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন নিজেদের ওপর তাদের চাদরের (জিলবাব) অংশ নামিয়ে দেয়। এটি তাদের চিনে ফেলার জন্য এবং যেন তাদের উত্ত্যক্ত করা না হয়, সে জন্য উত্তম। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু" (সূরা আল-আহযাব: ৫৯)

পর্দার সহিত শালীনতার আরেকটি কোরআনিক রোল-মডেল: (বিয়ের পূর্বাপর):

বিয়ের পূর্বে যুবক-যুবতীর সাক্ষাৎ বিষয়ে কোরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো সালামুন আলা  মুসা   মাদিয়ান দেশের দুই নারীর ঘটনা, যা সূরা আল-কাসাস (২৮:২৩-২৮) আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

ছবিটি প্রতীকী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।

🔹 ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

সালামুন আলা  মূসা  যখন মিশর থেকে চলে গিয়ে মাদিয়ান এলাকায় পৌঁছান, তখন তিনি একটি কূয়ার কাছে কিছু লোককে পানি তুলতে দেখেন। সেখানে দুই নারী লজ্জায় ও পর্দা বজায় রেখে তাদের পশুকে পানি পান করাতে অপেক্ষা করছিলেন।

📖"আর যখন সে মাদইয়ানের পানির কাছে পৌঁছল, সে সেখানে লোকদের মধ্য থেকে একটি দল পেল, যারা পানি পান করাচ্ছিল, এবং তাদের ছাড়াও সে দুজন নারী পেল, উভয়ে আগলে রাখছিল। সে বলল, তোমাদের দুজনের বক্তব্য কী? তারা দুজন বলল, আমরা পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না রাখালরা সরিয়ে নিয়ে যায়। আর আমাদের বাবা অতিবৃদ্ধ" (সূরা আল-কাসাস ২৮:২৩)

এরপর সালামুন আলা  মূসা নিজেই তাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে দেন এবং বিনিময়ে কিছু আশা না করে একান্তে ছায়ায় গিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন:

📖"তখন সে তাদের দুজনকে পানি পান করাল। তারপর সে ছায়ার কাছে ফিরে গেল। এরপর সে বলল-

 رَبِّ اِنِّیۡ لِمَاۤ اَنۡزَلۡتَ اِلَیَّ مِنۡ خَیۡرٍ فَقِیۡرٌ ﴿۲۴

হে আমার রব! আপনি আমার কাছে কল্যাণ থেকে যা অবতীর্ণ করেছেন, নিশ্চয়ই আমি সেটার জন্য মুখাপেক্ষী" (সূরা আল-কাসাস ২৮:২৪)

এরপর ওই নারীদের একজন লজ্জাশীলভাবে সালামুন আলা  মূসা -এর কাছে আসেন এবং তাকে তাদের পিতার সঙ্গে দেখা করার আমন্ত্রণ জানান।

📖"এরপর তার কাছে তাদের দুজনের একজন শালীনতার সাথে হেঁটে এলো। সে নারী বলল, নিশ্চয়ই আমার বাবা তোমাকে ডাকছেন, তুমি আমাদের পক্ষে যে পান করিয়েছ তোমাকে সেটার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য। এরপর যখন সে তার কাছে এলো এবং তার উদ্দেশে সব বৃত্তান্ত বর্ণনা করল..." (সূরা আল-কাসাস ২৮:২৫)

এই ঘটনার পর, ওই নারীদের পিতা (শাইখুন) মূসা-কে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং নির্দিষ্ট শর্তে তাঁর কন্যাকে বিয়ে দেন।

🔹 শিক্ষণীয় বিষয়:

যুবক-যুবতীর সাক্ষাতে পর্দাশীলতা শালীনতা বজায় রাখার আদর্শ দৃষ্টান্ত:

  • পরিস্থিতির আলোকে যুবক-যুবতীর সাক্ষাতে কীভাবে পর্দাশীলতা শালীনতা বজায় রাখতে হয়, তা সূরা আল-কাসাস (২৮:২৩-২৮) আয়াতে সুন্দরভাবে উঠে এসেছে।
  • অন্যান্য রাখালদের থেকে দুই যুবতী নিজেদের আলাদা করে সরিয়ে অপেক্ষা করছিলেন, যা নারীর সংযম ও পর্দার প্রতীক।
  • তাঁরা বিনয়, লজ্জাশীলতা এবং চরিত্রের পবিত্রতা বজায় রেখেই (সালামুন আলা) মূসা এর সঙ্গে কথা বলেছেন, যা একজন নারীর শালীনতার পরিচয় বহন করে।
  • এই আয়াত অধ্যয়ন করলে পাত্র-পাত্রীর যোগ্যতা সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায়—যেমন শালীন ভাষা, বিনয়, দায়িত্বশীলতা এবং চরিত্রের মাধুর্য
  • "সালামুন আলা মূসা"— কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিঃস্বার্থভাবে তাঁদের সাহায্য করেছিলেন, কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ বা প্রতিদানের প্রত্যাশা ছাড়াই

  • সালামুন আলা মূসা আল্লাহর দরবারে অহংকারহীনভাবে, বিনয়ের সঙ্গে তাঁর প্রয়োজন ব্যক্ত করেছিলেন:
    "হে আমার রব! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাজিল করেছ, আমি তার প্রতি এক নিঃস্ব ব্যক্তির মতো মুখাপেক্ষী।" (সূরা আল-কাসাস ২৮:২৪)
  • আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর প্রতি উত্তম ব্যবস্থা করে দেন—চাকরি, আশ্রয় এবং মর্যাদার সাথে একটি উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর ব্যবস্থা করেন।

মূল শিক্ষা:

যদি কেউ আল্লাহর বিধান মেনে চলে, বিনয় ও শালীনতা বজায় রাখে, তবে আল্লাহই তার জন্য উত্তম ব্যবস্থা করেন, যেমনটি তিনি সালামুন আলা মূসা-এর জন্য করেছিলেন। 

📌তাকওয়া ছাড়া শুধু পোশাকী পর্দার ultimate ফলাফল কী দাঁড়ায়? 

আল কোরআনে সরাসরি "হিজাব" বা "নিকাব" শব্দগুলি উল্লেখ করা হয়নি, তবে পোশাকী পর্দা এবং শালীনতার ধারণা সম্পর্কিত বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে যা মূলত শালীনতা, তাকওয়া এবং সামাজিক নিরাপত্তার ওপর ভিত্তি করে তবে, যদি তাকওয়া ছাড়া এই পোশাকগুলোর ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটা মূল্যহীন হয়ে যায়।

প্রমাণ:

ফাহেশা ও অশ্লীলতা থেকে সুরক্ষা: শালীনতা নির্লজ্জতা :

📖"তোমার বিশ্বাসী পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের গোপন অঙ্গগুলো রক্ষা করে। এটি তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই, আল্লাহ তাদের কাজ সম্পর্কে অবগত" (সূরা আন-নূর: 30)

📖"এবং বিশ্বাসী নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের গোপন অঙ্গগুলো রক্ষা করে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, কিন্তু যা স্বাভাবিকভাবে দৃশ্যমান" (সূরা আন-নূর: 31)

📖কিতাব থেকে তোমার কাছে যা প্রত্যাদেশ করা হয় তা পাঠ করো এবং সলাত প্রতিষ্ঠা করো। নিশ্চয়ই সলাত অশ্লীলতা অন্যায় থেকে বিরত রাখে-সূরা আল আনকাবূত 29:45

হিজাবের উদ্দেশ্য

📖আল্লাহ বলেন, “ওহে নবী! তোমার দাম্পত্যসাথীদের ও তোমার কন্যাদের এবং মুমিনদের নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ তাদের ওপর টেনে দেয়। সেটাই তাদেরকে চেনার নিকটতর। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল, দয়ালু” (সূরা আল-আহজাব: 59)


তাকওয়া ছাড়া পোশাকী-পর্দার যে ফলাফল:

1. অর্থহীনতা: যদি কেউ হিজাব বা নিকাব পরিধান করে কিন্তু সেগুলোর আধ্যাত্মিক (শুধুমাত্র আল কোরআন ভিত্তিক)  নৈতিক উদ্দেশ্যগুলো বুঝতে অনুসরণ করতে না পারে, তাহলে তা অর্থহীন হতে পারে

3. নেক সাজে যদি পোশাক, মেকআপ ও গেটআপধারীদের মাধ্যমে অন্যায়, জুলুম ও অশ্লীলতা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে, তবে এটি ইসলামের ভুল বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছানোর ঝুঁকি তৈরি করে।

4. শ্রেণী-বিভাজন: এমন পোশাকের মাধ্যমে যদি শুধু বাহ্যিক রূপের দিকে নজর দেয়া হয়, তাহলে সমাজে শ্রেণী-বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে, যেখানে কিছু নারীরা শুধুমাত্র বাহ্যিক কারণের জন্য সম্মানিত হতে পারে

5. অশ্লীলতা বৃদ্ধি: হিজাব নিকাব পরিধান করার পরও যদি আচরণে শালীনতা না থাকে, তাহলে এটি অশ্লীলতার সৃষ্টি করতে পারে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে

6. আধ্যাত্মিক ক্ষতি: তাকওয়া ছাড়া পোশাকী পর্দার ফলে একজন মুসলিম নারীর আধ্যাত্মিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এটি আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্যতার জন্য ক্ষতিকর!

সারসংক্ষেপ:

তাকওয়া ছাড়া পোশাকী পর্দা বা হিজাব পরিধান ইসলামী নীতির প্রতি সম্পূর্ণ নিষ্ঠা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে না।  আল কোরআন নির্দেশনা দেয় যে, পোশাকের মূল উদ্দেশ্য হলো শালীনতা এবং নৈতিকতার উন্নয়ন। শুধু বাহ্যিক রূপের জন্য পোশাক পরিধান করা হলেও, এর আধ্যাত্মিক সামাজিক ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ


পর্দা ও হিজাবের বিধান স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে এবং তা অমান্য করা বা বাড়তি কঠোরতা আরোপ করা উভয়ই গর্হিত কাজ: যে আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করবে, তাহলে ওরাই, যারা জালিম-২:২২৯।

Chapter-2

পর্দার বিধান

ইসলামে পর্দার বিধান শুধু নারীর জন্য নয়, বরং পুরুষ নারী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য:

. পুরুষের জন্য পর্দার বিধান:

শুরুতেই মুমিন বা বিশ্বাসী পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত করার নির্দেশনা এসেছে।
সুরা নুর ৩০: বিশ্বাসী-নিরাপদ-ভালো পুরুষদের জানাও (قُلْ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ), তাদের দৃষ্টিশক্তি সংযত রাখতে (يَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ) এবং তাদের যৌনাঙ্গ (وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْۗ) রক্ষা করতে; এটা তাদের জন্যে পবিত্রতর (ذٰلِكَ اَزْكٰى لَهُمْۗ); তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ভালোভাবে জানেন (اِنَّ اللّٰهَ خَبِيْرٌۢ بِمَا يَصْنَعُوْنَ)।  (24:34)

. নারীর জন্য পর্দার বিধান:

📌 এই আয়াত মুসলিম নারীদের জন্য পর্দার পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন দিয়েছে
📌 এটি শুধু পোশাকের পর্দা নয়, বরং দৃষ্টি, আচরণ, কথা বলা এবং চলাফেরার পর্দাও অন্তর্ভুক্ত
📌 পর্দা মানার উদ্দেশ্য হলো নারীদের সম্মান মর্যাদা রক্ষা করা এবং তাদের হয়রানি ফিতনা থেকে নিরাপদ রাখা
📌 যদি আমরা কুরআনের এই বিধান মেনে চলি, তবে সমাজে শালীনতা নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অশ্লীলতা দূর হবে

সুরা নুর ৩১: আর বিশ্বাসী-নিরাপদ-ভালো মেয়ে/নারীদের জানাও (وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنٰتِ) তাদের দৃষ্টিশক্তি সংযত রাখতে (يَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ), তাদের যৌনাঙ্গ রক্ষা করতে (وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ) এবং তাদের ঝিনাত প্রকাশ না করে (وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ)- শুধুমাত্র তা-থেকে যা প্রকাশ পায় (اِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا); আর তারা উপস্থাপন করুক (وَلْيَضْرِبْنَ) তাদের বক্ষের মাদকতা (seductiveness or alluring beauty) (بِخُمُرِهِنَّ عَلٰى جُيُوْبِهِنَّۖ); তারা তাদের ‘ঝিনাত’ প্রদর্শন না করে (وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ) তাদের স্বামী অথবা পিতা অথবা শ্বশুর অথবা ছেলে অথবা স্বামীর ছেলে অথবা ভাই অথবা ভাইয়ের ছেলে অথবা বোনের ছেলে অথবা আপন নারীদের অথবা তাদের অধীনস্থদের অথবা যৌন কামনাহীন পুরুষ অথবা নারীদের গোপনীয়তা সম্পর্কে অসচেতন বালক ছাড়া (اِلَّا لِبُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اٰبَاۤىِٕهِنَّ اَوْ اٰبَاۤءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اَبْنَاۤىِٕهِنَّ اَوْ اَبْنَاۤءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اِخْوَانِهِنَّ اَوْ بَنِيْٓ اِخْوَانِهِنَّ اَوْ بَنِيْٓ اَخَوٰتِهِنَّ اَوْ نِسَاۤىِٕهِنَّ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَيْمَانُهُنَّ اَوِ التَّابِعِيْنَ غَيْرِ اُولِى الْاِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلٰى عَوْرٰتِ النِّسَاۤءِ ۖ); আর তারা তাদের পদদ্বয় পেশ না-করে (وَلَا يَضْرِبْنَ ببِأَرْجُلِهِنَّ) তাদের গোপন ঝিনাত জানানোর জন্য (لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِيْنَ مِنْ زِيْنَتِهِنَّۗ); আর হে বিশ্বাসীরা, তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও (وَتُوْبُوْٓا اِلَى اللّٰهِ جَمِيْعًا اَيُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ)।

. কাদের সামনে পর্দা শিথিল করা যায়?

📌 আল্লাহ নারীদের জন্য মাহরামদের তালিকা দিয়েছেন:
স্বামী
নিজের বাবা
স্বামীর বাবা (শ্বশুর)
নিজের ছেলে
স্বামীর ছেলে (সতীসন্তান)
নিজের ভাই
ভাইয়ের ছেলে (ভাতিজা)
বোনের ছেলে (ভাগ্নে)
নিজের নারীসঙ্গী (যারা মুসলিম বিশ্বস্ত)
যে ক্রীতদাস বা চাকররা অধীনস্থ (তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রযোজ্য)
যেসব পুরুষ যৌনকামনা থেকে মুক্ত (অক্ষম বা বৃদ্ধ)
এমন ছোট শিশু, যারা এখনও নারীদের ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে কিছু বোঝে না

📌 এই তালিকার বাইরে থাকা কোনো পুরুষের সামনে নারীদের জন্য পর্দা বজায় রাখতে হয়।

সংক্ষেপে আয়াত থেকে মূল শিক্ষা:

. নারীদের দৃষ্টি সংযত রাখা
. লজ্জাস্থানের হেফাজত করা (অশ্লীলতা ব্যভিচার থেকে বাঁচা)
. সৌন্দর্য প্রদর্শন না করা (শালীন পোশাক পরা, অহেতুক সাজগোজ না করা)
. বুক মাথা ঢেকে রাখা (ওড়না/চাঁদর দিয়ে বক্ষ আবৃত করতে হবে)।
. কাদের সামনে পর্দা শিথিল করা যায়, তার সুস্পষ্ট তালিকা দেওয়া হয়েছে
. হাঁটার সময় অহেতুক শব্দ বা আকর্ষণ সৃষ্টি না করা
. সর্বদা আল্লাহর দিকে ফিরে আসা (তওবা আত্মশুদ্ধি করা)

💠 আল্লাহ আমাদের সবাইকে পর্দার বিধান মেনে চলার তাওফিক দিন 

বয়স্ক নারীদের জন্য কিছুটা পর্দা শিথিল করার অনুমতি:

📖"আর নারীদের মধ্য থেকে বয়স্ক বন্ধ্যারা, যারা বিয়ের আশা রাখে না, তাহলে তাদের জন্য কোনো দোষ নেই যে, তারা কোনো সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী হওয়া ব্যতীত তাদের কিছু কাপড় খুলে রাখবে। আর তাদের জন্য বিরত থাকাই উত্তম। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।" (সূরা আন-নূর: ২৪:৬০)


🔹 আয়াতের মূল শিক্ষা:

এই আয়াত বিশেষভাবে সেই নারীদের জন্য, যারা বয়সের কারণে বিবাহের আশা রাখে না।
তারা পর্দার সাধারণ বিধান মেনে চললেও, তাদের জন্য কিছু শিথিলতা রয়েছে।
যেমন, তারা তাদেরজিলবাববাবড় চাদরখুলতে পারে, তবে অবশ্যই সাজসজ্জা সৌন্দর্য প্রদর্শন না করার শর্তে

. তবে শালীনতা বজায় রাখা উত্তম

যদিও তাদের জন্য এই ছাড় দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পর্দা পুরোপুরি বজায় রাখাই উত্তম বেশি পুণ্যের কাজ।
আল্লাহ বলেন: আর তাদের জন্য বিরত থাকাই উত্তম অর্থাৎ, তারা যদি পর্দার বিধান পুরোপুরি মানে, তাহলে তা আরও ভালো

. সৌন্দর্য প্রদর্শন করা নয়

এই আয়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, যদি তারা নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে চায়, তাহলে তাদের জন্য পোশাক শিথিল করা জায়েজ নয়।
অর্থাৎ, শুধু বয়স বেশি হয়ে গেলে সাজসজ্জাসহ পর্দা ছেড়ে দেওয়া বৈধ হবে না

. আল্লাহ সব জানেন শোনেন

আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞএই বাক্য দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে,

  • আল্লাহ জানেন কে প্রকৃতভাবে পর্দা করছে আর কে শুধু অজুহাত দিচ্ছে
  • আল্লাহ নারীদের অবস্থা, ইচ্ছা অভ্যাস সবকিছু সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞাত

লক্ষ্য করুন এখানে পথচারীদের মধ্যে ৩জন নারীর তিন রকম আবৃত পোশাক রয়েছে।

🔹
সূরা আহযাব (৩৩:৫৯)

"হে নবী! তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন নিজেদের চাদর দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করে। এতে তারা সহজে চিহ্নিত হবে এবং উত্যক্ত করা হবে না।"

📌 শিক্ষা:

  • নারীদের নিজেদের আবৃত রাখা (হিজাব পরা) ফরজ
  • পর্দা করলে তারা বেশি নিরাপদ থাকবে এবং সম্মানিত হবে

. পুরুষ নারীর পর্দার মূল উদ্দেশ্য:

দৃষ্টিকে সংযত রাখা (চোখের পর্দা)
লজ্জাস্থানের হেফাজত করা (অশ্লীলতা ব্যভিচার থেকে বাঁচা)
সৌন্দর্য প্রকাশ না করা (অপ্রয়োজনে নিজেকে প্রদর্শন না করা)
শালীন পোশাক পরিধান করা (পুরুষের জন্যও ন্যূনতম পোশাকের সীমা রয়েছে)
সামাজিক শালীনতা বজায় রাখা হারাম সম্পর্ক থেকে বেঁচে থাকা

📌 সার সংক্ষেপ:

  • ইসলামে পর্দার বিধান শুধু নারীদের জন্য নয়, বরং পুরুষ নারী উভয়ের জন্য
  • পুরুষদের দৃষ্টি সংযত করা অবশ্য কর্তব্য। নারীদেরও দৃষ্টি সংযত করা অবশ্য কর্তব্য।
  • নারীদের হিজাব পরার বিধান রয়েছে, পুরুষদেরও শালীন পোশাক পরতে হবে
  • পর্দা মানার মাধ্যমে সমাজে শালীনতা বজায় থাকে এবং অশ্লীলতা দূর হয়

আল্লাহ আমাদের সবাইকে পর্দার বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন! 🤲  

📖 তাকওয়ার পোশাক, সেটাই উত্তম:

"হে বনী আদম! অবশ্যই আমরা তোমাদের প্রতি এমন পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থানগুলো ঢেকে রাখবে ও ভূষণস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, সেটাই উত্তম। সেটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করে। হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদের প্রলুব্ধ না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদের উভয় থেকে তাদের উভয়ের পোশাক খুলে ফেলে, যাতে সে তাদের উভয়কে তাদের উভয়ের লজ্জাস্থানগুলো দেখাতে পারে। নিশ্চয়ই সে ও তার দলবল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে যে, তোমরা তাদেরকে দেখ না। নিশ্চয়ই আমরা শয়তানগুলোকে তাদের জন্য সিদ্ধান্তদাতা বানিয়েছি, যারা ঈমান আনে না। আর যখন তারা কোনো অশ্লীল কাজ করে তারা বলে, আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে সেসবের ওপর পেয়েছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এটার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। বলো! নিশ্চয়ই আল্লাহ অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর সম্পর্কে তা বলছ, যা তোমরা জানো না!"-7:26-28


. পোশাক শুধু শারীরিক আবরণ নয়, তাকওয়ার প্রতীক:

আল্লাহ আমাদের জন্য পোশাক দান করেছেন, যা আমাদের লজ্জাস্থান আবৃত রাখে সৌন্দর্য বাড়ায়।
তাকওয়ার পোশাক (শালীনতা পর্দা) সবচেয়ে উত্তম কল্যাণকর।
সত্যিকারের ইজ্জত মর্যাদা আসে আত্মিক বিশুদ্ধতা তাকওয়া থেকে, বাহ্যিক পোশাক থেকে নয়

2. শয়তানের কৌশলমানুষকে উলঙ্গ অশ্লীলতায় লিপ্ত করা

মানবজাতীর পিতা মাতা সালামুন আলা আদম দম্পতি-কে ধোঁকা দিয়ে শয়তান তাঁদেরকে অপ্রকাশিত অঙ্গ প্রকাশিত করে ফেলে, যাতে তাঁদের লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়।

শয়তান আজও মানুষকে অনৈতিক অশ্লীল পোশাকের প্রতি প্রলুব্ধ করে।
শালীন পোশাককে পুরনো ভাবিয়ে আধুনিকতা ফ্যাশনের নামে অশ্লীলতাকে উৎসাহিত করে

3. শয়তান আমাদেরকে দেখে, কিন্তু আমরা তাকে দেখি না

শয়তান তার অনুসারীরা আমাদেরকে অদৃশ্যভাবে কুমন্ত্রণা দেয়।
তাই আমাদের শয়তানের ফাঁদ থেকে বাঁচতে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা ও আল কোরআন তথা হুদা (দ্র: ২:৩৮) ভিত্তিক দোয়া-ইস্তেগফার করা উচিত

4. অশ্লীলতা হারাম এবং আল্লাহ কখনো অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না

অশ্লীল কাজ (যেমন নগ্নতা, ব্যভিচার, অশালীন কথা কাজ) শয়তানের প্ররোচনায় হয়।
কিছু মানুষ অশ্লীলতাকে বৈধতা দিতে এক ধরনের ধর্ম বানিয়ে ব্যবহার করতে চায়, কিন্তু আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেনতিনি কখনো অশ্লীলতার অনুমতি দেন না।
"আল্লাহর নামে এমন কিছু বলো না, যা তুমি জানো না"অর্থাৎ ধর্মের নামে মিথ্যা কথা বলা নিষিদ্ধ


ছবিটি প্রতীকী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।

মুমিন নারীদের বাইয়াত গ্রহণের সময়  যেনা বিষয়ক শর্ত আরোপ:

📖ওহে নবী! যখন মুমিন নারীরা তোমার কাছে আসে, তারা তোমার কাছে এ বিষয়ে বাইয়াত গ্রহণ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোনোকিছু শিরক করবে না এবং চুরি করবে না ও যিনা করবে না আর তাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, এবং তাদের হাত ও তাদের পায়ের মাঝখানের কোনো অপবাদ নিয়ে সেটা রটিয়ে তারা আসবে না এবং ন্যায়কাজের ক্ষেত্রে তোমাকে অমান্য করবে না। তাহলে তাদের বাইয়াত গ্রহণ করো আর তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু- সূরা আল-আহজাব (৬০:১২)

বিবাহিত নারী-পুরষের পর্দার বিশেষ নির্দেশনা:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বিবাহিত নারীদের তাদের স্বামীদের সম্মান, তাদের গোপনীয়তা, এবং বৈবাহিক সম্পর্কের পবিত্রতা সংরক্ষণ করতে বলেছেন। এটি বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে সূরা আন-নিসা (৪:৩৪) আয়াতে:

🔹 আল-কুরআন, সূরা আন-নিসা (৪:৩৪)
"অতএব, সৎকর্মশীল নারীরা আনুগত্যপরায়ণা, গোপনীয়তার সংরক্ষণকারিণী, ওই বিষয়ে যা আল্লাহ সংরক্ষণ করেছেন।"

এছাড়াও, অন্য আয়াতে নারীদের সতীত্ব ও নিজেদের সংরক্ষণ করার বিষয়ে বলা হয়েছে—

🔹 আল-কুরআন, সূরা আন-নূর (২৪:৩১)
"আর মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে..."

🔹 আল-কুরআন, সূরা আহযাব (৩৩:৩৫)
"...এবং সংযমী পুরুষ ও সংযমী নারীরা, যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।"

এগুলি নির্দেশ করে যে, বিবাহিত নারীদের স্বামীদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, তাদের গোপন বিষয় ও পারিবারিক সম্পর্কের মর্যাদা রক্ষা করা এবং অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


নবীর স্ত্রীর পর্দার ধরন ও শিক্ষা:

"হে নবী! তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন নিজেদের ওপর তাদের চাদরের (জিলবাব) অংশ নামিয়ে দেয়। এটি তাদের চিনে ফেলার জন্য এবং যেন তাদের উত্ত্যক্ত করা না হয়, সে জন্য উত্তম। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু" (সূরা আল-আহযাব: ৫৯)

আর তোমরা তোমাদের ঘরের মধ্যে অবস্থান করো এবং পূর্বেকার জাহেলি যুগের প্রদর্শনীর মতো প্রদর্শন কোরো না। আর তোমরা সলাত প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত আদায় করো এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। হে গৃহবাসীরা! প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তোমাদের থেকে কলুষতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান, সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।  আর তোমরা স্মরণ করো আল্লাহর আয়াতসমূহ ও প্রজ্ঞা থেকে যা তোমাদের ঘরের মধ্যে পাঠ করা হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ হলেন সূক্ষ্মদর্শী, অন্তর্নিহিত জ্ঞানসম্পন্ন। নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষরা ও মুসলিম নারীরা এবং মুমিন পুরুষরা ও মুমিন নারীরা এবং অনুগত পুরুষরা ও অনুগত নারীরা এবং সত্যবাদী পুরুষরা ও সত্যবাদী নারীরা এবং ধৈর্যশীল পুরুষরা ও ধৈর্যশীল নারীরা এবং বিনীত পুরুষরা ও বিনীত নারীরা এবং দানশীল পুরুষরা ও দানশীল নারীরা এবং সওম পালনকারী পুরুষরা ও সওম পালনকারী নারীরা এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহ সংরক্ষণকারী পুরুষরা ও সংরক্ষণকারী নারীরা এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণকারী পুরুষরা ও স্মরণকারী নারীরা-আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন-33:33-35

ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদেরকে খাবারের জন্য অনুমতি দেয়া ব্যতিত সেটা প্রস্তুত হবার অপেক্ষা ছাড়াই তোমরা নবীর ঘরসমূহে ঢুকে যেও না। কিন্তু যখন তোমাদেরকে ডাকা হয়, তখন তোমরা প্রবেশ করো। এরপর যখন তোমাদের খাওয়া হয়ে যায়, তারপর তোমরা বেরিয়ে যাও আর কথাবার্তায় মগ্ন হয়ো না। নিশ্চয়ই সেসব নবীকে কষ্ট দিয়ে থাকে, কেননা তিনি তোমাদের হতে সঙ্কোচবোধ করেন আর আল্লাহ সত্যের ব্যাপারে সঙ্কোচবোধ করেন না। আর যখন তোমরা তাদের কাছে কোনো সামগ্রী চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাও। সেটাই তোমাদের অন্তরসমূহের ও তাদের অন্তরসমূহের জন্য পবিত্রতর। আর তোমাদের জন্য হতে পারে না যে, তোমরা আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেবে এবং এটাও নয় যে, তার পরবর্তীতে তোমরা কখনও তার দাম্পত্যসাথীদের বিয়ে করবে। নিশ্চয়ই সেটা হলো আল্লাহর কাছে গুরুতর-33:53

ওহে নবী! তোমার দাম্পত্যসাথীদের ও তোমার কন্যাদের এবং মুমিনদের নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ তাদের ওপর টেনে দেয়। সেটাই তাদেরকে চেনার নিকটতর। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল, দয়ালু। অবশ্যই যদি মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরসমূহের মধ্যে ব্যাধি রয়েছে তারা এবং শহরের মধ্যে গুজব রটনাকারীরা বিরত না হয়, অবশ্যই আমরা তাদের সাথে তোমার উত্থান ঘটাব। তারপর তারা সেখানে তোমার প্রতিবেশী থাকবে না অল্পসংখ্যক ব্যতিত; অভিশপ্ত অবস্থায় যেখানেই তাদেরকে পাওয়া যায়, তাদেরকে বন্দী করো এবং তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করো-33:59-61

ছবিটি প্রতীকী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।

সূরা আন-নিসা (:২৩-২৫) এবং সূরা আন-নূর (২৪:৬১): এগুলো বিবাহ, পর্দা শালীনতার সাথে সম্পর্কিত নির্দেশনা প্রদান করে:

তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে, তোমাদের মায়েদেরকে তোমাদের কন্যাদেরকে তোমাদের বোনদেরকে তোমাদের ফুফুদেরকে তোমাদের খালাদেরকে ভাইয়ের কন্যাদেরকে বোনের কন্যাদেরকে এবং তোমাদের সেসব মায়েদেরকে যারা তোমাদের দুধ পান করিয়েছে তোমাদের দুধ সম্পর্কীয় বোনদেরকে তোমাদের স্ত্রীদের মাতাদেরকে এবং তোমরা যাদের সাথে মিলিত হয়েছ তোমাদের সেসব স্ত্রীদের এমন পালিত সৎ কন্যাদেরকে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানের মধ্যে রয়েছে; তবে যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক, তাহলে তোমাদের ওপর কোনো দোষ নেই আর তোমাদের ঔরসজাতদের মধ্য থেকে তোমাদের পুত্রদের বিবাহিতারা এবং দুই বোনের মাঝে একত্র করা, অবশ্য যা গত হয়ে গেছে সেটা ছাড়া নিশ্চয়ই আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল, দয়ালু;- এবং নারীদের মধ্য থেকে স্বাধীন নারীদেরকেও, তারা ব্যতিত তোমাদের ডান হাত যাদের অধিকারী হয়েছে, তোমাদের ওপর আল্লাহর বিধান অনুসারে আর এদের বাইরে যারা আছে তাদেরকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে, এটাও যে, তোমরা তোমাদের সম্পদের বিনিময়ে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কামনা করবে, ব্যভিচারী হয়ে নয় অতএব, যার বিনিময়ে তোমরা তাদের মধ্য হতে শারীরিক সম্পর্ক করবে তখন তোমরা তাদেরকে আবশ্যক হিসাবে তাদের সে- প্রাপ্য দিয়ে দাও আর নির্ধারণের পরে সে ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো দোষ নেই, যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে নিশ্চয়ই আল্লাহ হলেন বিস্তৃত জ্ঞানসম্পন্ন, প্রজ্ঞাময় । আর যে তোমাদের মধ্য থেকে স্বাধীন মুমিন নারীকে বিয়ে করতে উপকরণের সামর্থ্য রাখে না, তাহলে তোমাদের মুমিন তরুণীদের মধ্য হতে তোমাদের ডান হাত যাদের অধিকারী হয়েছে তাদের মধ্য থেকেই। আর আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। তোমাদের একজন অপরজন থেকেই। অতএব, তাদের অভিভাবকের অনুমতিক্রমে তাদেরকে তোমরা বিয়ে করে নাও। এবং বিবাহিত নারী হিসাবে ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের প্রাপ্য তাদেরকে দিয়ে দাও; ব্যভিচারিণী হিসাবেও নয়, আর না গোপন প্রেমিককে গ্রহণকারিণী হিসাবে। এরপর যখন তারা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হবে, তখন যদি তারা কোনো অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়, তাহলে স্বাধীন নারীদের ওপর শাস্তি হতে যতটুকু তাদের ওপর তার অর্ধেক। সেটা তাদের জন্য, যারা তোমাদের মধ্য হতে ব্যভিচারের ভয় করে। আর তোমাদের ধৈর্যধারণ করা তোমাদের জন্য অধিক উত্তম। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।-4:23-25

অন্ধদের জন্য কোনো বাধা নেই এবং খোঁড়াদের জন্য কোনো বাধা নেই এবং রোগীদের জন্য কোনো বাধা নেই আর নেই তোমাদের নিজেদের জন্যও যে, তোমরা খাবে তোমাদের ঘরসমূহে অথবা তোমাদের বাবাদের ঘরসমূহে অথবা তোমাদের মায়েদের ঘরসমূহে অথবা তোমাদের ভাইদের ঘরসমূহে অথবা তোমাদের বোনদের ঘরসমূহে অথবা তোমাদের চাচাদের ঘরসমূহে অথবা তোমাদের ফুফুদের ঘরসমূহে অথবা তোমাদের মামাদের ঘরসমূহে অথবা তোমাদের খালাদের ঘরসমূহে অথবা যার চাবিসমূহ তোমাদের অধিকারে আছে সেখানে অথবা তোমাদের বন্ধুদেরওতোমাদের জন্য কোনো বাধা নেই যে তোমরা একত্রে খাবে বা আলাদা আলাদাতবে তোমরা যখন ঘরসমূহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের নিজেদের প্রতি সালাম দিবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতময়, পবিত্র অভিবাদনস্বরূপওভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা বুঝতে পারো-24:61

. সূরা আন-নিসা (:২৩-২৫)

এই আয়াতে বিবাহের জন্য কারা বৈধ এবং কারা অবৈধ তা নির্দেশ করা হয়েছে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উল্লেখ করা হলো:

  • বৈধ সম্পর্ক: আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, স্বামী-স্ত্রী, মা-বোন, দুধমাতৃকা সম্পর্ক ইত্যাদি সহ বেশ কিছু সম্পর্কের মধ্যে বিবাহ করা হারাম
  • মহিলা এবং গোপন প্রেম: "অথবা গোপন প্রেমিককে গ্রহণকারী হিসাবে" বলার মাধ্যমে এটি বোঝানো হয়েছে যে, গোপনে কোনো সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত নয়
  • বিবাহের পর শালীনতার দায়িত্ব: বিবাহের মাধ্যমে গোপন সম্পর্ক স্থাপন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা শালীনতা বজায় রাখতে সহায়ক

. সূরা আন-নূর (২৪:৬১)

এই আয়াতে খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে:

  • বৈধতা: যে কোনো ধরনের বৈধ সম্পর্ক (যেমন বন্ধুদের এবং আত্মীয়দের সঙ্গে) একত্রে খাওয়ার অনুমতি রয়েছে
  • আবেগপূর্ণ সম্পর্ক: এই আয়াতটি সামাজিক সম্পর্কের ভেতরে সৌজন্য শালীনতার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে

Chapter-3

কোরআন ভিত্তিক তাকওয়ার অভাব: অন্যায় ভক্ষণ অশালীনতার অপ্রতিরোধ্য এক চ্যালেন্স

. হারাম ভক্ষণ মানুষকে পাপকাজ অশ্লীলতার দিকে নিয়ে যায়:

🔹 সূরা আল-মায়েদা (:৬২-৬৩)
"
তুমি দেখতে পাবে, তাদের অনেকেই পাপ, সীমালঙ্ঘন এবং হারাম ভক্ষণে প্রতিযোগিতা করছে। কতই না নিকৃষ্ট কাজ তারা করে!"

📌 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

  • যারা হারাম খায় অবৈধ সম্পদ উপার্জন করে, তারা অন্যান্য পাপকর্ম সীমালঙ্ঘনের দিকে ধাবিত হয়
  • হারাম উপার্জনের কারণে মানুষের বিবেক আত্মা মরে যায়, ফলে সে অশ্লীলতাসহ বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হয়

. অন্যায়ভাবে সম্পদ ভক্ষণ হারাম ব্যবসা মানুষের নৈতিকতা ধ্বংস করে:

🔹 সূরা আল-বাকারা (:১৮৮)

"তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের সম্পদের কিছু অংশ জেনে-বুঝে অবৈধ উপায়ে গ্রাস করার জন্য বিচারকদের কাছে উপস্থাপন করো না।"

📌 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

  • অন্যায়ভাবে সম্পদ গ্রহণ হারাম ব্যবসার ফলে মানুষ নৈতিকতাহীন হয়ে পড়ে এবং পাপাচারে লিপ্ত হয়
  • অনেক সময় অবৈধ সম্পদ মানুষকে মদ্যপান, ব্যভিচার, বিলাসিতা, অশ্লীলতা নষ্টামির দিকে ঠেলে দেয়

. শয়তান হারাম অশ্লীলতা একসাথে শেখায়:

🔹সূরা আল-বাকারা (:২৬৮)

"শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়, আর আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা দয়া প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।"

📌 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

  • শয়তান মানুষকে হারাম পথে আয় করতে প্রলুব্ধ করে, যেন সে দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে পারে
  • পরে সে মানুষকে অশ্লীলতার প্রতি আকৃষ্ট করে, যেমন: অবৈধ সম্পর্ক, মদ্যপান, জুয়া, নগ্নতা, নাচ-গান ইত্যাদির প্রতি আসক্ত করে

. শয়তান মানুষকে ফাহিশার দিকে আহ্বান করে

🔹সূরা আল-বাকারা (:১৬৯)

"সে (শয়তান) তো তোমাদেরকে শুধু অশ্লীলতা মন্দ কাজের আদেশ দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলাতে চায়, যা তোমরা জানো না।"

📌 এই আয়াত থেকে শিক্ষা: শয়তান চায়, মানুষ নোংরা চিন্তা করুক, অশ্লীল দৃশ্য দেখুক, ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ুক

. অশ্লীলতার প্রসার ঘটানো কঠিন গুনাহ:

🔹সূরা আন-নূর (২৪:১৯)

"যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটাতে চায়, তাদের জন্য দুনিয়া আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।"

📌 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

  • সমাজে অশ্লীলতা ছড়ানো (যেমন: অশ্লীল ছবি-ভিডিও বানানো বা শেয়ার করা, অশ্লীল কথা ছড়ানো) খুব বড় গুনাহ
  • মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, বা যে কোনো মাধ্যমে অশ্লীল কনটেন্ট প্রচার করাও ইসলামে হারাম

. দৃষ্টির সংযম সতীত্ব রক্ষার আদেশ (অশ্লীলতা থেকে বাঁচার উপায়)

"মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। এতে তাদের জন্য পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের কাজ সম্পর্কে জানেন।"


"
আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে, তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে…" সূরা আন-নূর (২৪:৩০-৩১)

📌 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

  • অশ্লীলতা থেকে বাঁচার প্রথম ধাপ হলো চোখের হেফাজত করা
  • বেপর্দা দেখা, অশ্লীল ছবি-ভিডিও দেখা, অবৈধ সম্পর্কএসবই অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে
  • নারী পুরুষ উভয়কেই পর্দার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে

. পবিত্র পুরুষদের জন্য পবিত্র নারীরা

🔹সূরা আন-নূর (২৪:২৬)

"অশ্লীল নারীরা অশ্লীল পুরুষদের জন্য এবং অশ্লীল পুরুষরা অশ্লীল নারীদের জন্য। আর পবিত্র নারীরা পবিত্র পুরুষদের জন্য এবং পবিত্র পুরুষরা পবিত্র নারীদের জন্য।"

📌 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

  • যারা অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়, তারা সাধারণত তাদের মতো মানুষের সঙ্গ পায়

যারা নিজেদের পবিত্র রাখে, আল্লাহ তাদের জন্য পবিত্র জীবনসঙ্গী দান করেন

সংক্ষেপে বলা যায়:

ফাহিশা বা অশ্লীলতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।।
অশ্লীলতা দুই প্রকার: প্রকাশ্য গোপন।
শয়তান মানুষকে অশ্লীলতার দিকে আহ্বান করে।
চোখ, জিহ্বা, চিন্তা আচরণকে সংযত রাখা জরুরি।
যারা সমাজে অশ্লীলতা ছড়ায়, তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা রয়েছে।
নিজেকে পবিত্র রাখলে, আল্লাহ পবিত্র জীবনসঙ্গী দান করেন

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ফাহিশা যেকোনো অশ্লীলতা থেকে হেফাজত করুন। 🤲


পরকীয়া: প্রকাশ্য গোপন অশ্লীলতা- গোপন পাপ:/ বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক (যিনা) সম্পর্কে কী বলে আল কোরআন?

আল-কুরআনে "ফাহিশা" (فاحشة) বা অশ্লীলতা সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অশ্লীলতা বলতে ব্যভিচার (যিনা), নগ্নতা, কুরুচিপূর্ণ কাজ, অশালীন কথা, যৌন অবৈধ সম্পর্কসহ যে কোনো নৈতিক অবক্ষয় বোঝায় আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন আয়াতে ফাহিশা থেকে দূরে থাকার আদেশ দিয়েছেন 

পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ধ্বংসের কারণ তাদের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা (আল-কোরআনের আলোকে)

আল-কোরআনে বিভিন্ন জাতির ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, যারা আল্লাহর বিধান অমান্য করেছিল এবং তাদের অশ্লীলতা/সীমালঙ্ঘনের কারণে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।  এসব ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের সতর্ক করেছেন, যেন আমরা তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলতে পারি। যেমন, আল্লাহ বলেন-

📖 "তাদের কাহিনীতে রয়েছে বুদ্ধিমানদের (উলিল আলবাব্) জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। এটি মনগড়া কথা নয়, বরং এটি পূর্ববর্তী বিষয়সমূহের সমর্থনকারী, সব কিছুর বিস্তারিত বিবরণ, সঠিক পথনির্দেশ রহমত—কওমের জন্য যারা বিশ্বাস স্থাপন করে-১২:১১১

আল-কোরআনে উল্লেখিত অনেক জাতি আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনের কারণে ধ্বংস হয়েছে। তাদের অন্যতম প্রধান পাপ ছিল অশ্লীলতা (ফাহিশা), জিনা-ব্যভিচার এবং অনৈতিক কার্যকলাপ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, অশ্লীলতা সমাজের জন্য মারাত্মক ধ্বংসাত্মক, এবং পূর্ববর্তী অনেক জাতি এই পাপের কারণে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।


১. লূত (আ.)-এর জাতির ধ্বংস: সমকামিতা অশ্লীলতার কারণে

🔹 কোরআনের বর্ণনা:

সালামুন আলা  লূত-এর জাতি ছিল ইতিহাসের অন্যতম দৃষ্টান্ত, যারা সমকামিতার (হোমোসেক্সুয়ালিটি) মতো চরম অশ্লীলতায় লিপ্ত ছিল। তাদের এই অন্যায় আচরণের কারণে আল্লাহ তাদের কঠোর শাস্তি দেন।

📖 আল কোরআন বলে:
"তোমরা তো পুরুষদের কাছে যৌন সম্ভোগের জন্য যাও, নারীদেরকে বাদ দিয়ে! বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী এক জাতি!"(সূরা আল-আ’রাফ ৭:৮১)

সালামুন আলা লূত তাদের বহুবার সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তারা শোনেনি। পরিণামে, আল্লাহ তাদের উপর কঠোর শাস্তি পাঠান—উল্টো করে তাদের জনপদ ধ্বংস করা হয় এবং তাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষিত হয়।

📖 "অবশেষে যখন আমাদের আদেশ এসে পৌঁছাল, তখন আমরা সে জনপদকে উপরকে নিচে করে দিলাম এবং তাদের ওপর স্তরে স্তরে পোড়া মাটির পাথর বর্ষণ করলাম"(সূরা হূদ ১১:৮)

🔹 শিক্ষা:
যখন কোনো সমাজ অশ্লীলতা বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হয়, তখন তা ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে।


২. সামুদ আদ জাতির ধ্বংস: নৈতিক অবক্ষয় বিলাসিতার ফলে:

আদ এবং সামুদ জাতি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী ও উন্নত জাতি। কিন্তু তারা অতিরিক্ত ভোগ-বিলাস, জুলুম এবং নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে ধ্বংস হয়েছে।

📖"আর আদ জাতির ব্যাপারে—তারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অহংকার করত এবং বলত, ‘আমাদের চাইতে শক্তিশালী কে আছে?’..." (সূরা ফুসসিলাত ৪১:১৫)

📖 "আর সামুদ জাতির প্রতি, আমি পথ দেখিয়েছিলাম, কিন্তু তারা সৎপথের পরিবর্তে অন্ধত্বকেই পছন্দ করেছিল" (সূরা ফুসসিলাত ৪১:১৭)

তারা ধ্বংসাত্মক অশ্লীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিল, ফলে আল্লাহ তাদের উপর প্রবল গর্জন ও ভূমিকম্প নিক্ষেপ করেন, এবং তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

📖 "অতঃপর এক প্রচণ্ড আওয়াজ তাদেরকে পাকড়াও করল, ফলে তারা নিজ গৃহে উপুড় হয়ে মারা পড়ল।" (সূরা হূদ ১১:৬৭)

🔹 শিক্ষা:
যখন কোনো জাতি অত্যধিক বিলাসী জীবনযাপন, অবৈধ যৌনাচার অন্যায় কর্মে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহ তাদের কঠোর শাস্তি দেন।


৩. মিসর ফেরাউনের জাতির ধ্বংস: অবাধ্যতা বিলাসিতার কারণে:

ফেরাউনের জাতি আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করেছিল এবং অবাধ ভোগ-বিলাসে মত্ত ছিল।

📖 "আর যখন তারা সীমালঙ্ঘন করল, তখন আমি তাদের শাস্তি দিলাম এবং তাদেরকে সাগরে ডুবিয়ে দিলাম"(সূরা যুখরুফ ৪৩:৫৫)

🔹 শিক্ষা:

যে জাতি আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করে, বিশেষত অশ্লীলতা বিলাসিতায় লিপ্ত হয়, তাদের পরিণতি ধ্বংসই হয়।


৪. বর্তমান সমাজের বাস্তবতা কোরআনের সতর্কতা:

আজকের বিশ্বেও অশ্লীলতা, পরকীয়া, সমকামিতা, অবাধ যৌনাচার ও তাকওয়াভিত্তিক পর্দাহীনতার ব্যাপক বিস্তার দেখা যাচ্ছে। কোরআন আমাদের সতর্ক করেছে যে, যদি এই প্রবণতা বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের সমাজও সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর পরিণতি ভোগ করতে পারে।

📖 "তোমরা এমন ফিতনার ভয় করো, যা বিশেষভাবে শুধু জালিমদের ওপর আপতিত হবে না, বরং তা সবার ওপরই বিস্তার লাভ করবে" (সূরা আল-আনফাল ৮:২৫)


🔹 কিভাবে বাঁচা সম্ভব? (সমাধান করণীয়):

পর্দার বিধান মেনে চলা:

📖 "হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং মুসলিম নারীদেরকে বলো যে, তারা যেন নিজেদের চাদরের কিছু অংশ দিয়ে নিজেদেরকে ঢেকে রাখে। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে এবং তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না"(সূরা আল-আহজাব ৩৩:৫৯)

জিনা থেকে দূরে থাকা:
📖 "আর ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ নিকৃষ্ট পথ" (সূরা আল-ইসরা ১৭:৩২)

নম্র দৃষ্টি রাখা (Lowering the gaze):
📖"মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে"(সূরা আন-নূর ২৪:৩০)

তওবা ইস্তিগফার করা:
যদি কেউ ভুল করে ফেলে, তবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া তওবা করা উচিত।

📖 "যারা অশ্লীলতা করে ফেলেছে বা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে, তারা যদি সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চায়... তবে আল্লাহ পরম দয়ালু, পরম ক্ষমাশীল" (সূরা আলে ইমরান ৩:১৩৫)


🔹 সার-সংক্ষেপ:

কোরআনের দৃষ্টিতে, অশ্লীলতা নৈতিক অবক্ষয় কোনো সমাজের ধ্বংস ডেকে আনে। অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, যেখানে অবাধ যৌনাচার, সমকামিতা, বিলাসিতা, নৈতিকতা-বিধ্বংসী কার্যকলাপ বিস্তার লাভ করেছে, সেখানেই আল্লাহর শাস্তি নেমে এসেছে।


মানবতার কল্যাণে আরও কিছু নির্দেশনা:

. ব্যভিচার/ যিনার জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা

"ব্যভিচারী নারী ব্যভিচারী পুরুষতাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত কর। আর আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে তোমাদের মনে দয়া যেন না আসে, যদি তোমরা আল্লাহ শেষ দিবসে বিশ্বাসী হও। আর তাদের শাস্তি কার্যকর করার সময় মুমিনদের একটি দল যেন উপস্থিত থাকে" সূরা আন-নূর (২৪:)

. ফাহিশা বা অশ্লীলতার কাছেও না যাওয়ার নির্দেশ/ ব্যভিচারের নিষেধাজ্ঞা:

"আর ব্যভিচারের (যিনা) নিকটেও যেও না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ" সূরা আল-ইসরা (১৭:৩২)

📌 এই আয়াত থেকে শিক্ষা: শুধু যিনাই নয়, তার কাছাকাছি যাওয়া, এমন পরিবেশে যাওয়া বা এমন কিছু করা যা যিনার দিকে ধাবিত করতে পারে, সবই নিষিদ্ধ


🔹সূরা আল-'রাফ (:৩৩)

"বলুন, আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য গোপন অশ্লীলতা, পাপাচার, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা, এবং আল্লাহর সাথে এমন কিছু শরিক করা যার কোনো দলিল তিনি নাজিল করেননি।"

📌 এই আয়াত থেকে শিক্ষা:

  • ফাহিশা দুই ধরনের হতে পারে:
  • প্রকাশ্য ফাহিশা: খোলামেলা অশ্লীলতা, ব্যভিচার, নগ্নতা, অশ্লীল পোশাক বা আচরণ
  • গোপন ফাহিশা: লুকিয়ে কুরুচিপূর্ণ কাজ করা, গোপনে পরকীয়া বা যৌন পাপাচার করা
  • ইসলাম উভয় ধরনের অশ্লীলতা নিষিদ্ধ করেছে

. আল্লাহর সীমারেখা:

"এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। অতএব, তোমরা এর নিকটবর্তী হবে না(সুরা আল-বাকারাহ: ১৮৭, 2:229)

👉এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, আল্লাহ যে সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন, তা লঙ্ঘন করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং এটি যে কোনো অপরাধের জন্য শাস্তির ভিত্তি

সূরা আল-বাকারা (:২২৭)

"এবং যদি তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে কেউ অশ্লীলতার কাজ করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের সাক্ষ্য দেবার জন্য চারজন মানুষকে ডাকো।"

আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, বিবাহের সম্পর্ক যতটা স্বাভাবিক, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ শালীনতা পর্দা বজায় রাখা

অতএব, সৎকর্মশীল নারীরা আনুগত্যপরায়ণা, গোপনীয়তার সংরক্ষণকারিণী, ওই বিষয়ে যা আল্লাহ সংরক্ষণ করেছেন-4:34

. পরকীয়া বা গোপন অভিসারের ব্যাপারে সতর্কবার্তা

🔹সূরা আন-নিসা (:২৫)
"
তোমরা গোপনে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করবে না।"

"তুমি কি দেখ না যেআল্লাহ আসমানসমূহে  জমিনে যা কিছু আছেসবই জানেনতিন ব্যক্তির কোনো গোপন পরামর্শ হয় নাযেখানে তিনি চতুর্থ না থাকেনকিংবা পাঁচজনেরযেখানে তিনি ষষ্ঠ না থাকেনকিংবা তারা এর চেয়ে কম বা বেশি হলেওতিনি তাদের সাথে থাকেনযেখানে তারা থাকুক না কেন।

তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা তারা করেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ" (সূরা মুজাদিলাআয়াত )

এখানে গোপনে প্রেম, অভিসার, বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে

. পরকীয়া বা গোপন সম্পর্কের ফিতনা সম্পর্কে হুঁশিয়ারি

🔹সূরা আন-নূর (২৪:৩০-৩১)

"মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য পরিশুদ্ধতা রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের কাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত।"


"
আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।"

এখানে পুরুষ নারীদের যৌনসংযম পর্দার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা অবৈধ সম্পর্ক থেকে বাঁচার উপায়

. গোপন অভিসার গোপন প্রেম সম্পর্কে সতর্কতা

🔹সূরা আল-মায়েদা (:)

"আর যারা ঈমান এনেছে, তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর তবে তাঁর নির্ধারিত বিধান মেনে চলো এবং গোপন অভিসার করো না, যা পাপের দিকে ধাবিত করে।"

এখানে গোপন অভিসারের নিষেধাজ্ঞা এসেছে, যা মানুষকে যিনার দিকে ধাবিত করতে পারে

ব্যভিচার: আর দুনিয়ার জীবনের সম্পদ লাভ করার জন্য তোমরা তোমাদের দাসীদেরকে ব্যভিচারের বিষয়ে বাধ্য কোরো না, যদি তারা কুমারীত্ব রক্ষা করতে চায়। আর যারা তাদেরকে বাধ্য করে, তাহলে ওদের বাধ্য করার পরে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু-24:33

. পরনারী বা পরপুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া থেকে সাবধানতা:

🔹সূরা আহযাব (৩৩:৩২-৩৩)

"হে নবী পত্নীগণ! তোমরা যদি তাকওয়াবান হতে চাও, তবে নম্র ভাষায় কথা বলো না, যাতে কুবাসনা পোষণকারী ব্যক্তি প্রলুব্ধ না হয়। আর তোমরা সুশীল শালীন কথা বলো। আর তোমরা নিজেদের গৃহে অবস্থান করো এবং জাহেলী যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শনী করো না।"

এই আয়াত নারীদের জন্য সতর্কবার্তা দিচ্ছে, যাতে তারা অপরিচিত পুরুষের সাথে নরমভাবে কথা বলে তাদের আকৃষ্ট না করে

. বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বেঁচে থাকার উপায়: দাম্পত্য সাথী সম্পর্ক তাকওয়া:

বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক (যিনা) থেকে বাঁচতে হলে তাকওয়া (আল্লাহভীতি), স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং বৈধ সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে হবে। কুরআনে এটি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে


🔹 . লজ্জাস্থানের হিফাজত করা 

"এবং তারা, যারা তাদের লজ্জাস্থানসমূহের ব্যাপারে সংরক্ষণকারী; তাদের দাম্পত্যসাথীদের ক্ষেত্রে ব্যতীত অথবা তাদের ডানহাত যা অধিকার করেছে। তখন অবশ্য তারা নিন্দিত নয়। সুতরাং সেসবের বাইরে যে কামনা করবে, তাহলে ওরাই সীমালঙ্ঘনকারী" (সুরা আল-মুমিনুন: -)

👉 এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, বিবাহিত জীবন ছাড়া অন্য কোনো অবৈধ সম্পর্কে জড়ানো সম্পূর্ণ সীমালঙ্ঘন


. পারস্পরিক ভালোবাসা দয়া:

 

"আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা দয়া সৃষ্টি করেছেন অবশ্যই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে"📖(সুরা আর-রূম: ২১) 

3. সওম তাকওয়া: দাম্পত্য সাথীদের সম্পর্ক:

"সওমের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের নারীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করছিলে। এরপর তিনি তোমাদের ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদেরকে মার্জনা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা যৌনসম্পর্ক করো এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যেটা অনুমোদন দিয়েছেন সেটাই তোমরা অন্বেষণ করো। আর তোমরা খাও এবং পান করো, যতক্ষণ না তোমাদের কাছে ভোরের কালোরেখা থেকে সাদারেখা স্পষ্ট হয়। এরপর তোমরা রাত পর্যন্ত সওম পূর্ণ করো। আর যখন তোমরা মসজিদসমূহের মধ্যে ইতিকাফরত, তোমরা তাদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন কোরো না। সেসব আল্লাহর সীমারেখা। অতএব, তোমরা এর কাছে যেও না। ওভাবেই আল্লাহ মানুষের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ স্পষ্ট বর্ণনা করেন, যেন তারা তাকওয়া অর্জন করে।" (সুরা আল-বাকারাহ: ১৮৭) 

👉 এই আয়াত থেকে তিনটি শিক্ষা পাওয়া যায়:
স্বামী-স্ত্রীর বৈধ সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া।
তাকওয়া আত্মসংযমের মাধ্যমে পাপ থেকে দূরে থাকা।
আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন না করা
 


 

👉 স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু দৈহিক নয়, বরং এটি মানসিক প্রশান্তি পারস্পরিক দয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত

 

5. স্ত্রীদের প্রতি সদয় আচরণ:


"তাদের সাথে উত্তমভাবে জীবনযাপন করো যদি তোমরা তাদের অপছন্দ করো, তবে হতে পারে, তোমরা কোনো জিনিস অপছন্দ করছ, অথচ আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রেখেছেন"📖(সুরা আন-নিসা: ১৯)


👉 স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত বোঝাপড়ার মাধ্যমে সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখা এবং একে অপরের প্রতি সদয় হওয়া

 

🔹 6. স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বৈধভাবে উপভোগের অনুমতি:

"তোমাদের স্ত্রীদের নিকট তোমরা যখন ইচ্ছা গমন করতে পারো" 📖(সুরা আল-বাকারাহ: ২২৩)

👉 এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক বৈধ এবং পারস্পরিক সম্মতি ভালোবাসার ভিত্তিতে হওয়া উচিত 


7. স্ত্রীদের প্রতি দায়িত্বশীলতা তাদের অধিকার সংরক্ষণ:


"তাদের (নারীদের) জন্য রয়েছে ন্যায়সংগত অধিকার, যেমন তাদের ওপর কর্তব্য রয়েছে, স্বীকৃত রীতি অনুযায়ী আর পুরুষদের তাদের ওপর এক ধাপ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে" 📖(সুরা আল-বাকারাহ: ২২৮)

👉 স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই একে অপরের প্রতি অধিকার দায়িত্ব রয়েছে, যা সম্মান ন্যায়বিচারের সাথে পালন করতে হবে


📌 স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক, যা কুরআনে "পোশাক" বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে
📌 পারস্পরিক বোঝাপড়া, ভালোবাসা, দয়া সম্মানের ভিত্তিতে তাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা উচিত
📌 শারীরিক মানসিক চাহিদার প্রতি মনোযোগ দেওয়া কেবল বৈধই নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব


দৃষ্টির সংযম করা

"মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের খবর রাখেন যা তারা করে" 📖(সুরা আন-নূর: ৩০-৩১) 

আর যাই হোক এ উদ্যোগটি মন্দ নয় বলে মনে হয়। এটি একটি নিউজ আইটেম (প্রথম আলো, ২৫/২/২৫)। বিয়ে না করলে থাকবে না চাকরি! সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট নিউজ। বিয়ের বিষয়ে উৎসাহিত করতে চীন সরকার গৃহীত নীতির কারণেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। (তবে ডানে-বামে ছবি দুটি বাংলাদেশের কোন যায়গার, যেখানে আছে একটু নির্জন পরিবেশও! তবে অভাব একটু তাকওয়ার)

বিবাহকে সহজ করা:

"আর তোমরা বিয়ে দাও তোমাদের মধ্য থেকে অবিবাহিতদেরকে এবং তোমাদের দাসদের ও তোমাদের দাসীদের মধ্য থেকে সৎকর্মশীলদেরকে। যদি তারা দরিদ্র হয়ে থাকে, আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে তাদেরকে ধনী বানিয়ে দিবেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, বিস্তৃত জ্ঞানসম্পন্ন(সুরা আন-নূর: ৩২)

পর্দা মেনে চলা:
"
আর তোমরা নিজেদের গৃহে অবস্থান করো এবং পূর্ববর্তী জাহেলি যুগের ন্যায় নিজেদের প্রদর্শন করো না..."(সুরা আল-আহজাব: ৩৩)
 

যারা বিবাহ করতে পারছে না, তাদের সিয়াম পালন করার নির্দেশ:

আর যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে না তারা যেন বিরত থাকে, যতক্ষণ না আল্লাহ তাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে অভাবমুক্ত করেন- সুরা আন-নূর: 24:33


📌 স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য পোশাকস্বরূপ, তাই বৈধ সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে হবে
📌 বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বাঁচতে তাকওয়া আত্মসংযম জরুরি
📌 রমজান মাসের বিধিনিষেধ মানা রোজার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা উচিত
 


Chapter-4

ইস্তেগফার: দুআ-তাসবিহ-যিকির:

আর তারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে, তারা আল্লাহকে স্মরণ করে, এরপর তারা তাদের পাপের জন্য ক্ষমা চায় আর আল্লাহ ব্যতিত কে পাপসমূহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, তার ওপর অটল থাকে না অথচ তারা জানে-সূরা আল ইমরান 3:135 

অশ্লীলতা ও ফাহেশা কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে গুনাহ করে ফেললে আল-কোরআন ভিত্তিক তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার দুআর ভাষা/দরখাস্তের নির্ধারিত ফরমেট: 

অশ্লীল-অশ্লীলতা (ফাহেশাহ)-গুনাহ: তাওবা-দুআ-যিকির:

তোমরা জুনুবের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো-১২:২৯, ৩৯:৫৩, ৪৬:৩১, ৪৭:১৯, ৪০:৫৫

পৃষ্ঠা নং/ দুআ নং

অধ্যায়

কুরআন রেফা

 

 

 

:২৩ (প্রেক্ষিত-২৯:৪০)

 

 

 

:১৮, ৪০:- (প্রশংসার)

 

 

 

:১৬

 

 

 

:১৪৭ (:৮১)

 

 

 

:১৯৩

 

 

 

২৮:১৬

 

 

 

২৭:৪৪

 

 

 

২১:৮৭

 

 

 

:৪৭

 

 

 

২৩:৯৩-৯৪

 

 

 

১২:২৩ (১২:৭৯), 12:53

 

 

وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ 

অল্লা-হু ওয়া-সিউন্আলীম্ -:২৬৮

১২:৩৩-৩৪

 

 

 

إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

নিশ্চয়ই আল্লাহ যাবতীয় পাপ ক্ষমা করবেন নিশ্চয়ই তিনি, তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু-আল কুরআন ৩৯:৫৩ (৩৯:৫৩-৫৫)

 

 

আরও তওবা ক্ষমা অধ্যায় পাঠ:

 ✨ যদি আমরা নিজেদের ও সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে চাই, তবে অবশ্যই কোরআনের শিক্ষা মেনে চলতে হবে, পর্দার বিধান মেনে চলতে হবে (পুরুষ-নারী উভয়কে স্ব স্ব   অবস্থানে) এবং অশ্লীলতা ও ব্যভিচার থেকে দূরে থাকতে হবে।

📖 "যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে, তারা   সফলকাম" (সূরা আল-মুমিনুন ২৩:৫)

 ইহুদিদের পর্দা প্রথা (তাওরাত বা তোরাহ অনুযায়ী)

বর্তমান ইসরায়েলের তেল আভিভ, জেরুসালেম, আমেরিকার বিশাল ইহুদি কমিউনিটি অথবা ইরানের ইহুদি কমিউনিটির দিকে তাকালে তাওরাতের একনিষ্ঠ অনুসারী বা আহলে কিতাবদের দেখতে পাওয়া যায়।  তোরাহ’র বিধান এবং ইহুদি রাব্বি বা রাবাইদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সারাংশ করলে দাঁড়ায়:

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ইহুদি নারীদের কয়েক স্তরের কাপড় দিয়ে নিজেদের আবৃত করে রাখা বাধ্যতামূলক। শরীরের কোনও অংশ অনাবৃত করার অধিকার তাদের নেই। 

যারা কিছুটা শরীর ঢাকেন না, তাদেরকেও বিবাহিত হলে মাথায় স্কার্ফ বা হিজাব পরতেই হবে- যাতে চুল খোলা রাখা মেয়েদের অবিবাহিত বা ‘অ্যাভেইলেভল’ বলে চেনা ও জানা যায়।

ইসরায়েলের জেরুসালেম, তেল-আভিভ ও মার্কিন ইহুদি নারীদের পর্দা পালনের কিছু ছবি দেওয়া হলো- যাতে তাদের পর্দার বিধি-বিধান বোঝা যায়।



৩. বাইবেল অনুযায়ী খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পর্দা প্রথা

ক্রিশ্চিয়ান নান-গণই এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নিচে তেমনই কিছু ছবি দেওয়া হলো। কপটিক খ্রিষ্টান বা অর্থডক্স খ্রিষ্টান—যাই হোক না কেন, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে নারীরা যে পোশাক পরেন, তাই মূলত বর্তমান ইঞ্জিল বা বাইবেল নির্ধারিত পোশাক।

৬. আফগানিস্তানে প্রচলিত পর্দা প্রথা

আফগানিস্তানে পুরুষদের স্থানীয় পোশাকের পাশাপাশি সাধারণ নারীদের বিশেষ ধরনের পর্দা প্রথার চর্চা করতে দেখা যায়। এই ধারা ব্যাপকভাবে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে শুরু হয় ১৯৯৬ সালে, যখন তালিবান গোষ্ঠী দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করে। 

ফটোজার্নালিস্ট পলা ব্রন্সটিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আফগান নারীদের জীবনকে ফোকাস করে অনেক ছবি তুলেছেন। তা থেকে ‘আফগানি বৈশিষ্ট্যের ইসলামি পর্দার’ দিকে নজর দেওয়া যাক।


আফগান বৈশিষ্ট্যময় পর্দা প্রথার সঙ্গে উপরে উল্লেখিত ইহুদি প্রর্দা প্রথার গভীর মিল রয়েছে। এর কারণ কী? পরবর্তীতে তা আলোচনা করা হবে।

উল্লেখ্য, ইহুদি সমাজে ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই ‘আপাদমস্তক আবৃত পর্দা প্রথা’ প্রচলিত রয়েছে।

৪. প্রাচীন বাঙ্গালি সমাজে পর্দা প্রথা

এবার অবিভক্ত ভারতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে পর্দা প্রথার প্রচলন কেমন ছিল তা বোঝার চেষ্টা করব।

বাংলাদেশের গবেষক জনাব গোলাম মুরশিদের ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ শীর্ষক গবেষণা গ্রন্থের ২৩৩ থেকে ২৩৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত দেখুন।

৫. হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদেও সংশ্লিষ্ট কিছু বিধি-বিধান রয়েছে

It is mentioned in the RigVeda Book no. 8 Hymn no. 33 V. no. 19“When Brahma has made you a woman, you should lower your gaze and should not look up. You should put your feet together and you should not reveal what the garment and the veil conceals.”

Rig Veda Book no. 10 Hymn no. 85 V. no.30:“Unlovely is the person is the husband who covers his thighs with the garment of his wife.” It is further mentioned in the Mahavir Charitra Act 2 Page 71 says:

When Purshuram comes, Rama tells his wife Sita that “He is our elder, please lower your gaze, and put on the veil. “

হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র ধর্মগ্রন্থভগবত গীতায় মহাঋষি ভুয়াস কালযুগে [অন্ধকার যুগে] পৃথিবীর অবস্থা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, নারীরা অনাবৃত মুখে বেশ্যাদের মতো বাজারে ঘুরে বেড়াবে৭. 

হাদীসের আলোকে পর্দা বা হিজাব (Islam of Hadith)

তথ্যসূত্র: পর্দা না পোশাক! কুর’আনের কথা: ওয়েবসাইড: https://islamofquran.com/hijab-of-women/

Powered by Blogger.