যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য কি সময় হয়নি?

যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য কি সময় হয়নি যে, তাদের অন্তরগুলো আল্লাহর স্মরণে ভীত হবে ও সত্য হতে যা নাযিল হয়েছে এবং তারা তাদের মতো হবে না ইতোপূর্বে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল! এরপর তাদের উপর সময় দীর্ঘায়িত হলো। ফলে তাদের অন্তরগুলো শক্ত হয়ে গিয়েছে এবং তাদের মধ্য হতে অধিকাংশই ফাসিক-57:16


কখনো কি ভেবে দেখেছি, আমাদের জীবনের সবচেয়ে নিশ্চিত সত্য – মৃত্যু – সেটাই আমাদের ব্যক্তিগত কেয়ামতের প্রথম সঙ্কেত?  হ্যাঁ, ইসলামী পরিভাষায় প্রতিটি মানুষের মৃত্যুকে "আল-কিয়ামাহ আস-সুগরা" বা ছোট কিয়ামত বলা হয়। সেই মুহূর্ত, যখন আমাদের আমলের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

দুআর জন্য ২টি ভিডিও দেখুন পোষ্টের নিচের দিকে


আল্লাহর সুস্পষ্ট সতর্কবার্তা:

"মানুষের জন্য তাদের হিসাব [এর সময়] নিকটবর্তী হয়ে গেছে, অথচ তারা উদাসীনতার মধ্যে মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।"

"যখনই তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে নতুন কোনো উপদেশ আসে, তারা তা শোনে খেলার ছলে।"

"তাদের অন্তরগুলো [অন্য বিষয়ে] অমনোযোগী অবস্থায় থাকে।" (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২১:১-৩)


একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন! যিনি এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা, তিনি বলছেন, "হিসাবের সময় নিকটবর্তী"। তাঁর কাছে সময় আমাদের মতো সীমাবদ্ধ নয়; হাজার বছরও তাঁর কাছে মুহূর্ত মাত্র। তাই তাঁর "নিকটবর্তী" শব্দটি আমাদের জন্য এক চূড়ান্ত সতর্কবার্তা। অথচ, আমরা অনেকেই এই ডাকে সাড়া না দিয়ে দুনিয়ার মোহে ডুবে আছি। চূড়ান্ত পরিণতির ব্যাপারে আমরা কতটা বেখবর!


উদাসীনতার মায়াজাল:

"বেশি বেশি পাওয়ার প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে উদাসীন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরের দেখা পাবে। কখনও নয়! অচিরেই তোমরা জানবে। আবার বলি, কখনও নয়! যদি তোমরা দৃঢ় প্রত্যয়ের জ্ঞান জানতে! অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম দেখবে। এরপর অবশ্যই তা তোমরা চাক্ষুষ প্রত্যয়ে দেখবে। তারপর সেদিন তোমরা নিয়ামত সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে" (সূরা আত-তাকাসুর, আয়াত: ১০২:১-৮)


এই আয়াতগুলো যেন আমাদের বর্তমান বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। বাড়ি-গাড়ি, সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, নাতি-নাতনি – এসবের পেছনে ছুটতে ছুটতে আমরা এমনভাবে মগ্ন, যেন এখান থেকে কখনোই বিদায় নিতে হবে না। রান্নার ব্যস্ততা, শখ পূরণের পেছনে দৌড়, ফ্যাশনের চাকচিক্য, আর আধুনিক যুগের সংযোজন – সোশ্যাল মিডিয়ার (ফেসবুক, ইউটিউব, মোবাইল, ইন্টারনেট) অন্তহীন স্ক্রলিং – এগুলোর নেশায় আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মূল্যবান সময় নষ্ট করছি।

অতএব তুমি দৃঢ়ভাবে তা ধরো, যা তোমার কাছে ওহী করা হয়েছে। নিশ্চয়ই তুমি সুদৃঢ় পথের ওপরেই। আর নিশ্চয়ই সেটা তোমার জন্য ও তোমার কওমের জন্য অবশ্যই উপদেশ। আর শীঘ্রই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে-43:43-44।

যদি সত্যিই কোরআনকে আমরা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতাম (যেমনটি বলা হয়েছে আয়াত ৪৩:৪৩-৪৪-এ), এর আয়াতগুলো গভীরভাবে অনুধাবন করতাম, তাহলে জাহান্নামের ভয়াবহ চিত্র আমাদের কল্পনায় সদা জাগ্রত থাকত। তখন কি মনে হতো না যে, "আমিও তো সেই দুর্ভাগাদের একজন হয়ে যেতে পারি?" এই উপলব্ধি যদি অন্তরে থাকত, তাহলে ফেসবুক বা অন্য কোনো সাময়িক বিনোদনে এত মাতামাতির সুযোগ কোথায় পেতাম?


"তারা কি কুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা লাগানো আছে?" সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত ২৪ (4:82)


অতর্কিত আগমন:

কেয়ামত বা মৃত্যুর আগমনের বিষয়ে আল্লাহ বলেন:

"...তা (কিয়ামত) তোমাদের উপর হঠাৎ করেই এসে পড়বে..." (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ৭:১৮৭)

কিয়ামতের সুনির্দিষ্ট সময় আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। এটি এমন অতর্কিতভাবে আসবে যে, মানুষ তার জন্য প্রস্তুত হওয়ার বিশেষ কোনো সুযোগ পাবে না, যদি না সে আগে থেকেই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে প্রস্তুত রাখে। এই "হঠাৎ করে আসা" ব্যাপারটি আমাদের ব্যক্তিগত মৃত্যুর ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। কে জানে, পরবর্তী নিঃশ্বাসটিই আমাদের শেষ নিঃশ্বাস কিনা?

কোরআনের আলোয় আত্মশুদ্ধির পথ:

এই আয়াতগুলো থেকে আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি:

১. সতর্কতা ও আন্তরিক প্রস্তুতি: মহাকিয়ামত এবং ব্যক্তিগত মৃত্যু – উভয়ই আসন্ন। তাই সকল প্রকার গাফিলতি ও উদাসীনতা পরিহার করে সর্বদা আল্লাহর স্মরণে (আল কোরআন তথা ওহীর বিধান গভীর মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন ও অনুশীলনে) মগ্ন থাকা অপরিহার্য। আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা প্রতিটি উপদেশকে খেলার ছলে না নিয়ে, পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করা এবং জীবনে বাস্তবায়ন করাই মুক্তির পথ।


২. অপ্রত্যাশিতের জন্য অবিরাম প্রস্তুতি: যেহেতু কিয়ামত ও মৃত্যু অতর্কিতভাবে আসবে, তাই প্রতিটি দিনকেই জীবনের শেষ দিন মনে করে সৎকর্মের পাল্লা ভারী করা, মানুষের হক আদায় করা এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।


আসুন! আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি – আমার 'ছোট কেয়ামত' যদি আজই এসে পড়ে, আমি কি তার জন্য প্রস্তুত? আমার আমলনামা কি আল্লাহর সামনে পেশ করার যোগ্য?

দুআ: সূরা আশ শুআরা ২৬:৭৮-৮৫

Video-1


video-2


রব্বানা ওয়া তাকাব্বাল দু'আ। (হে আমাদের রব, আমাদের দুআ কবুল করুন।)

Powered by Blogger.