সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন? সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধা ও দুশ্চিন্তা? আল্লাহর সাহায্য পেতে পড়ুন...
যখন
আমরা কোনো বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত বা চিন্তিত হই, তখন ইসলামের নির্দেশিকা
অনুসরণ করা অপরিহার্য। আল কোরআন আমাদের জন্য প্রধান পথপ্রদর্শক।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত হলে করণীয় সম্পর্কে সরাসরি একটি নির্দিষ্ট দোয়া বা আয়াত কোরআনে সেভাবে উল্লেখ না থাকলেও, কোরআন সার্বিকভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করতে, তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে এবং তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করতে উৎসাহিত করে। কিছু প্রাসঙ্গিক আয়াত ও মূলনীতি নিচে দেওয়া হলো:
✨প্রাসঙ্গিক কোরআনি দুআসমূহ: ▼
✨কীভাবে এই দুআগুলোকে জীবনে প্রয়োগ করবেন?
Video/Audio: নিচের দিকে দ্র:
১. আল্লাহর উপর ভরসা ও সাহায্য প্রার্থনা (তাওয়াক্কুল ও দোয়া):
কোরআন আমাদের শিক্ষা দেয় যে, সকল বিষয়ে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে। যদিও নির্দিষ্ট কোনো "সিদ্ধান্ত গ্রহণের দোয়া" আয়াতে নেই, তবে সার্বিকভাবে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার নির্দেশ রয়েছে। যেমন: إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা’ঈন-আয়াত 2:৫
অর্থ: আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং একমাত্র আপনার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।
এই আয়াতটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যেকোনো প্রয়োজনে, বিশেষ করে যখন আমরা দিশেহারা বোধ করি, তখন আল্লাহর সাহায্যই কাম্য।
২. আল কোরআনকে সিদ্ধান্ত ও চূড়ান্ত ফয়সালাকারী মানা:
জীবনের সকল ক্ষেত্রে, বিশেষত যেখানে মতপার্থক্য বা সিদ্ধান্তহীনতা দেখা দেয়, সেখানে কোরআনের নির্দেশনাই চূড়ান্ত।➤ আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী
ফয়সালা করে না, তারাই কাফির-৫:৪৪
➤ আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী
ফয়সালা করে না, তারাই যালিম।
➤ আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই ফাসিক-5:47
এই আয়াতগুলো মূলত শাসন ও বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে নাজিল হলেও, এর (broad) শিক্ষা হলো ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহর বিধানকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া।
৩. মূলনীতি: ফয়সালার জন্য কোরআনের দিকে ফেরা:
ওহে যারা ঈমান
এনেছ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রসূলের আর তোমাদের মধ্যকার কর্তৃত্বের
অধিকারীর। তবে যদি তোমরা কোনো বিষয়ে মতভেদ করো তাহলে তা আল্লাহর ও রসূলের কাছে প্রত্যর্পণ
করো, যদি তোমরা আল্লাহর ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান এনে থাক। সেটাই উত্তম ও পরিণামে সুন্দর-4:9
এখানে "আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দাও" অর্থ কোরআনের দিকে এবং "রাসূলের দিকে
ফিরিয়ে দাও" অর্থ: রাসূল (সা.আ.) এর জীবদ্দশায় তাঁর কাছে এবং তাঁর ওফাতের
পর তাঁর ওপর নাজিলকৃত আল কোরআনের দিকে দিকে (দ্র: ৭:৩) ফিরতে বলা বুঝায়।
➤ "আল্লাহ ও রাসূলগনের বিষয়ে/মধ্যে-যারা পার্থক্য করেই প্রকৃত কাফির-৪:১৫০-১৫১
এই আয়াতটি ঈমানের একটি মৌলিক দিক নির্দেশ করে – আল্লাহ এবং তাঁর সকল রাসূলের প্রতি অবিভক্ত বিশ্বাস স্থাপন করা। এটি সরাসরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি না হলেও, সঠিক ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত না থাকলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।
৪. কোরআন
সকল বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনাকারী:
...আর আমরা
আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি প্রত্যেক বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথনির্দেশ,
রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ-16:৮৯
এই আয়াতটি নির্দেশ করে যে, কোরআনে সকল মৌলিক নির্দেশনা বিদ্যমান, যা আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত
নিতে সাহায্য করতে পারে।
৫. পরামর্শ (শূরা):
সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত হলে কোরআন আমাদের পারস্পরিক পরামর্শের প্রতি উৎসাহিত করে।- সূরা আশ-শূরা (الشورى), আয়াত ৩৮:
...وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ
بَيْنَهُمْ...
"...এবং তাদের কার্যাবলী পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়..."
- সূরা আলে ইমরান (آل عمران), আয়াত ১৫৯:
...وَشَاوِرْهُمْ فِي
الْأَمْرِ...
"...এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন..."
জ্ঞানী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহায়ক।
অতএব, যখন আপনি কোনো সিদ্ধান্তে দ্বিধাগ্রস্ত হবেন:
১. আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আপনাকে সঠিক পথ দেখান ও আপনার জন্য যা কল্যাণকর, সেদিকে পরিচালিত করেন
২. বিষয়টি নিয়ে কোরআনের প্রাসঙ্গিক আয়াতসমূহ অধ্যয়ন করুন ও গভীরভাবে চিন্তা করুন।
3. আল্লাহর উপর ভরসা করে, শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে একটি সৎ ও কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নিন।
মূল কথা হলো, কোরআন আমাদের জীবনের সকল দিকের জন্য একটি সামগ্রিক নির্দেশিকা। সরাসরি "এই পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নাও" এভাবে প্রতিটি বিষয়ের সমাধান কোরআনে না থাকলেও, কোরআন আমাদের এমন নীতি ও আদর্শ শিক্ষা দেয়, যার আলোকে আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে সঠিক ও কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
-
- - - - - - - - - - -- - - -- - - - -- - - -
-- - - -
🔗 সিদ্ধান্তহীনতায় প্রাসঙ্গিকতা:
যখন আপনি বুঝতে পারছেন না কোনটা আপনার জন্য ভালো হবে, তখন এই দোয়াটি আন্তরিকতার সাথে পাঠ করলে আপনি আল্লাহর কাছে সকল প্রকার কল্যাণ প্রার্থনা করছেন। আপনি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছেন যে তিনি আপনার জন্য সবচেয়ে উত্তম বিষয়টি নির্বাচন করুন।
🔗 কোরআন তিলাওয়াত ও তাদাব্বুর (অনুধাবন):
নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করুন এবং এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন (তাদাব্বুর)। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তা'আলা মুমিনদেরকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যখন আপনি কোরআন পড়বেন ও বুঝবেন, তখন আপনার অন্তরে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশান্তি আসবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রজ্ঞা লাভ করবেন। আল্লাহ বলেন:
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
"যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয় (সূরা রা'দ, আয়াত ২৮)
🔗 আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল (ভরসা) রাখার পরামর্শ:
যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখুন।
আল্লাহ বলেন: আর যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট" (সূরা ত্বালাক, 65:৩)
আরও
বলেন:
"অতঃপর যখন তুমি কোনো কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ভরসাকারীদের ভালোবাসেন"-3:১৫৯)
সূরা আত-ত্বালাক এর ৩ নং আয়াতটি তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসার এক শক্তিশালী ঘোষণা। এই আয়াত এবং এর মূলভাবকে কেন্দ্র করে আল্লাহর উপর "ভরসা করার মতো ভরসা" করার জন্য ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে এবং কল্যাণকর পথের দিশা পেতে আল-কোরআন থেকে আমরা যে সকল দোয়া, তাসবীহ ও যিকির অনুধাবন করতে পারি, সেগুলো নিম্নরূপ:
সিদ্ধান্ত ও ফয়সালার জন্য কোরআনি দুআসমূহ:
🔖 সূরা আল-ফাতিহা পাঠ ও অনুধাবন:
এই সূরাটি দোয়া এবং আল্লাহর প্রশংসায় পরিপূর্ণ। বিশেষ করে এর আয়াত:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা’ঈন ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাক্বীম-
সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের রব আল্লাহর জন্য। দয়াময়, দয়ালু কর্মফল দিনের মালিক। আমরা শুধু আপনার ইবাদত করি আর আমরা শুধু আপনার কাছে সাহায্য চাই। আমাদেরকে সুদৃঢ় পথ দেখান তাদের পথ, যাদের ওপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন; নয় তাদের যারা ক্রোধাক্রান্ত, আর না তাদেরও, যারা পথভ্রষ্ট।
এই দোয়াটি বারবার আন্তরিকতার সাথে পাঠ করলে আল্লাহ আপনাকে সঠিক ও কল্যাণকর পথের দিশা দেবেন।
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র
হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। সূরা আল-বাকারাহ 2:২০১
------------------------------------------------
رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا
রব্বানা আ-তিনা মিল্লাদুনকা রহমাতাওঁ ওয়া হাইয়্যি’
লানা মিন আমরিনা রশাদা-সূরা আল-কাহফ 18:১০
হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত দান করুন এবং আমাদের কাজের জন্য সঠিক পথের ব্যবস্থা করে দিন’।
সিদ্ধান্তহীনতা ও কল্যাণের পথে এই দোয়ার শিক্ষা ও আমল:
- বিপদ ও অসহায়ত্বে আল্লাহর আশ্রয়: যখন আমরা কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ি, চতুর্দিক থেকে বিপদ ঘিরে ধরে এবং কোনো উপায় খুঁজে পাই না, তখন আসহাবে কাহফের মতো আমাদেরও উচিত আল্লাহর বিশেষ রহমতের জন্য দোয়া করা।
· সঠিক পথের দিশা প্রার্থনা: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় বা কোনো নতুন কাজ শুরু করতে হয়, তখন এই দোয়াটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
· ঈমানের উপর দৃঢ়তা: এই যুবকেরা তাদের ঈমান রক্ষার জন্য সব ত্যাগ করেছিলেন। এই দোয়া আমাদের শেখায় যে, ঈমানের উপর দৃঢ় থাকতে হলে আল্লাহর সাহায্য অপরিহার্য।
· তাওয়াক্কুল ও দোয়া: তারা নিজেদের বুদ্ধি ও শক্তির উপর নির্ভর না করে আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করেছিলেন এবং আন্তরিকভাবে দোয়া করেছিলেন। এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
কখন এই দোয়া পাঠ করবেন:
- যখন আপনি কোনো বিপদ বা কঠিন পরিস্থিতির
সম্মুখীন হন।
- যখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে
দ্বিধাগ্রস্ত হন এবং সঠিক পথের দিশা চান।
- যখন কোনো নতুন কাজ বা উদ্যোগ শুরু
করতে যাচ্ছেন।
- যখন ঈমানের উপর অবিচল থাকতে চান
এবং দুনিয়ার ফেতনা থেকে বাঁচতে চান।
- সাধারণভাবে যেকোনো সময় আল্লাহর
রহমত ও সঠিক পথের জন্য এই দোয়া পাঠ করা যায়।
সূরা আল-কাহফ
এর এই দোয়াটি আমাদের জন্য এক অমূল্য শিক্ষা। এটি আমাদের শেখায় কিভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে
আল্লাহর উপর নির্ভর করতে হয় এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে হয়।
🔖 জ্ঞান ও হিকমা (সঠিক বুঝ)-এর জন্য আবেদন:
رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
রব্বি যিদনী ইলমা
হে আমার রব! আমাকে জ্ঞানে বাড়িয়ে দিন-সূরা ত্বহা 20:১১৪
সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের প্রয়োজন। এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহ আপনার জ্ঞান ও বুঝ বৃদ্ধি করে দেবেন, যা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে।
رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ
রব্বি হাব্ লী হুকমাওঁ ওয়া আলহিকনী বিস সলিহীন।
হে আমার রব, আমাকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করুন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন-26:83-84
সিদ্ধান্তহীনতায়
এই দোয়ার প্রাসঙ্গিকতা:
যখন
আপনি কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত
নিতে পারছেন না, তখন এই
দোয়াটি পাঠ করার মাধ্যমে
আপনি আল্লাহর কাছে মূলত দুটি
জিনিস চাচ্ছেন:
- সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা।
- এমন পথে পরিচালিত হওয়ার তৌফিক, যে পথ আল্লাহর প্রিয় সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের পথ, যা অবশ্যই কল্যাণের পথ।
আপনি যখন আন্তরিকতার সাথে এই দোয়া পাঠ করবেন, আল্লাহ তা'আলা আপনার জন্য সঠিক পথ উন্মোচন করে দেবেন এবং আপনার অন্তরকে সেই সিদ্ধান্তের দিকে ঝুঁকিয়ে দেবেন যা আপনার জন্য ইহকাল ও পরকালে কল্যাণকর হবে ইনশাআল্লাহ।
-
"رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
🔖 রব্বানা লা তুযিগ্ কুলূবানা বা’দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাহ, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহ্হাব
হে আমাদের রব, সরল পথ দেখানোর পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনকারী করো না এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে করুণা দান কর। নিশ্চয়ই তুমি মহাদাতা"-3:8
হেদায়েত পাওয়ার পর যেন অন্তর বিপথগামী না হয় এবং আল্লাহর রহমত লাভ হয়, সেই প্রার্থনা এখানে করা হয়েছে। এটিও সঠিক পথে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
رَّبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুর রা-হিমীন।
🔖
হে আমার রব! ক্ষমা করুন ও দয়া করুন, আর আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু- সূরা আল-মু’মিনূন,
23: ১১৮
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي
ক্বলা রব্বিশ্রহ্ লী সদরী ওয়া ইয়াস্সির লী আমরী
🔖 হে আমার রব, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন
এবং আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দিন-সূরা ত্বহা
আয়াত 20:২৫-২৮
... رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ
فَقِيرٌ
রব্বি ইন্নী লিমা আনযালতা ইলাইয়্যা মিন খইরিন ফাক্বীর।
🔖 হে আমার রব! আপনি আমার প্রতি যে কোনো কল্যাণ নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী-সূরা আল-কাসাস, 28:২৪
তাৎপর্য
ও শিক্ষা:
· পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ ও আল্লাহর মুখাপেক্ষিতা: এই দোয়াটি আল্লাহর প্রতি বান্দার চরম অসহায়ত্ব, বিনয় এবং তাঁর রহমতের প্রতি গভীর আস্থার প্রকাশ। সালামুন আলা মূসা নির্দিষ্ট কোনো কিছু চাননি, বরং বলেছেন "যে কোনো কল্যাণ" (مِنْ خَيْرٍ)। এর অর্থ হলো, আল্লাহ যা কিছুই তাঁর জন্য কল্যাণকর মনে করবেন, তিনি তাতেই সন্তুষ্ট।
· ব্যাপক অর্থবোধক দোয়া: 'খাইর' (خَيْرٍ) বা কল্যাণ শব্দটি ব্যাপক। এর মধ্যে রিযিক, আশ্রয়, সঙ্গী, নিরাপত্তা, হেদায়েত, মানসিক প্রশান্তি – সবকিছু অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
·
তাৎক্ষণিক
ফল: এই দোয়া করার
পরেই আল্লাহ তা'আলা মূসা (আঃ) এর জন্য কল্যাণের ব্যবস্থা করেছিলেন। শোয়াইব (আঃ) এর
কন্যা এসে তাঁকে ডেকে নিয়ে যান এবং পরবর্তীতে তিনি সেখানে আশ্রয় ও পরিবার লাভ করেন।
🔗 তাওয়াক্কুল বৃদ্ধি ও প্রকাশের দোয়া-তাসবীহ-যিকির:
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ
হাসবুনাল্লা-হু ওয়া নিমাল ওয়াকীল
আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম
কঠিন পরিস্থিতিতে ঈমানদারদের এই উক্তি আল্লাহ উল্লেখ করেছেন-সূরা আলে ইমরান 3:১৭৩।
তাৎপর্য: "কর্মবিধায়ক/অভিভাবক/আশ্রয়দাতা" এই যিকিরটি চরম অসহায়ত্ব ও বিপদের মুহূর্তে আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ আস্থা ও ভরসার বহিঃপ্রকাশ। তিনিই তার জন্য যথেষ্ট) এর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়া, আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রব্বুল আরশিল আযীম।
আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। আমি তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করেছি এবং তিনি মহা আরশের রব" -সূরা আত-তাওবাহ, 9:১২৯
إِنْ أُرِيدُ إِلَّا الْإِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ ۚ وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ ۚ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ
ইন উরীদু ইল্লাল ইসলা-হা মাসতাত্বাতু, ওয়া মা তাওফীক্বী ইল্লা বিল্লা-হি, আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইহি উনীব-11:88
আমি তো কেবলই সেটার সংশোধন চাই যা আমি সামর্থ্য রাখি। আর আমার সামর্থ্য তো কেবল আল্লাহর মাধ্যমেই। তাঁর ওপরই আমি নির্ভর করেছি আর তাঁর কাছেই আমি ফিরে যাব।
🔗 সিদ্ধান্তহীনতা ও কল্যাণের পথে এই আয়াতের শিক্ষা:
- যখন আপনি কোনো ভালো কাজ বা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চান, তখন আপনার নিয়ত হবে কেবলই সংশোধন বা কল্যাণকামিতা, আপনার সাধ্য অনুযায়ী।
- মনে রাখবেন, আপনার সকল প্রচেষ্টা ও বুদ্ধিমত্তার পরও চূড়ান্ত সফলতা আসবে কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে (তাওফীক)।
- তাই, আপনার পক্ষ থেকে আন্তরিক চেষ্টা করার পর পূর্ণরূপে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন।
- এবং সকল অবস্থায় তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করুন, তাঁর কাছেই সাহায্য চান ও তাঁর সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্ট থাকুন।
এই আয়াতটি দোয়া হিসেবেও পাঠ করা যেতে
পারে, বিশেষ করে যখন আপনি
কোনো সংস্কারমূলক কাজ করতে যাচ্ছেন,
কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন
অথবা কোনো ভালো উদ্যোগ
গ্রহণ করছেন। এর মাধ্যমে আপনি
আল্লাহর কাছে সঠিক পথের
দিশা, সামর্থ্য, সফলতা এবং তাঁর উপর
পূর্ণ ভরসা রাখার তৌফিক
কামনা করছেন।
এটি সত্যিই একটি চমৎকার আয়াত যা কর্ম, প্রচেষ্টা, আল্লাহর উপর নির্ভরতা এবং তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণের এক সুন্দর সমন্বয় তুলে ধরে।
ؕ رَبَّنَا عَلَیۡکَ
تَوَکَّلۡنَا وَ اِلَیۡکَ اَنَبۡنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ ﴿۴﴾ رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا
فِتۡنَۃً لِّلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ اغۡفِرۡ لَنَا رَبَّنَا ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ
الۡحَکِیۡمُ ۵
রব্বানা
-আলাইকা তাওয়াক্কালনা - ওয়া ইলাইকা আনাবনা ওয়া ইলাইকাল মাসীর রব্বানা লা তাজ'আলনা
ফিতনাতাল লিল্লাযীনা কাফারূ ওয়াগফির লানা রব্বানা
ইন্নাকা আনতাল 'আযীযুল হাকীম -
হে আমাদের রব! আপনার ওপর আমরা নির্ভর করি এবং আপনার দিকে আমরা মুখ ফেরাই আর আপনার কাছেই প্রত্যাবর্তনস্থল। হে আমাদের রব! যারা কুফর করেছে আমাদেরকে তাদের জন্য ফিতনা বানাবেন না। আর আমাদেরকে ক্ষমা করুন। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আপনি, আপনিই পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়-60:4-5
وَأُفَوِّضُ أَمْرِي إِلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ
ওয়া উফাওয়্যিদ্বু আমরী ইলাল্লা-হ, ইন্নাল্লা-হা বাসীরুম বিলইবা-দ
এবং আমি আমার বিষয় আল্লাহর কাছে সমর্পণ করছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দাদের ব্যাপারে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন- আল-মুমিন 40:44
তাৎপর্য: আর আমি আমার ব্যাপার আল্লাহর নিকট সোপর্দ করছি। নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন।" নিজের সকল বিষয় আল্লাহর হাতে সঁপে দেওয়া তাওয়াক্কুলের সর্বোচ্চ পর্যায়। এর মাধ্যমে বান্দা নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার উপর আস্থা স্থাপন করে।
ؕ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَہٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِہٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا وَ اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ
রব্বানা- লা-তুআ-খিয্না- ইন্নাসী- না-আও আখ্ত্বোয়ানা-, রব্বানা- অলা-তাহ্মিল্ আলাইনায় ইছরান কামা-হামাল্তাহূআলাল্লাযীনা মিন্ ক্বাব্লিনা, রব্বানা- অলা-তুহাম্মিল্না- মা-লা-ত্বোয়া-ক্বাতা লানা-বিহ্; অফুআন্না-অর্গ্ফি লানা- র্অহাম্না- আংতা মাওলা-না- ফান্ছুরনা-আলাল্ ক্বাওমিল্ কা-ফিরীন্।
হে আমাদের রব! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি, তবে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেমন বোঝা চাপিয়েছিলেন, আমাদের উপর তেমন বোঝা চাপিয়ে দিবেন না। হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের মাফ করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনিই আমাদের অভিভাবক, সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন-২:২৮৬
🛡️ আত্মরক্ষামূলক সূরাসমূহ (অবশ্যই পাঠ্য):
1.
সূরা
আল-ইখলাস (১১২)
2.
সূরা
আল-ফালাক (১১৩)
3.
সূরা
আন-ناس (১১৪)
কীভাবে এই দুআগুলোকে জীবনে প্রয়োগ করবেন?
১. পরিস্থিতি বোঝা: প্রথমে আপনার সিদ্ধান্ত বা সমস্যার বিষয়টি কী, তা নিজে স্পষ্টভাবে বুঝুন।
২. সালাত সালাতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া অত্যন্ত কার্যকর।
৩. দুআ পাঠ: সিজদায় বা নামাজের পর একাগ্রতার সাথে উপরের দুআগুলো পাঠ করুন। শুধু মুখে উচ্চারণ না করে, এর অর্থ অনুধাবন করে আল্লাহর কাছে আপনার পরিস্থিতি তুলে ধরুন। (দ্র: ৭:৫৪, ৭:২০৫, ৬:৬৩)
৪. কোরআন অধ্যয়ন: যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সে বিষয়ে কোরআন কী বলে তা জানার চেষ্টা করুন।
৫. শূরা বা পরামর্শ: নির্ভরযোগ্য ও আল কোরআনের (ইলমুল কিতাব) জ্ঞানী মুমিনদের সাথে পরামর্শ করুন। এটিও কোরআনের একটি নির্দেশ (সূরা আশ-শূরা ৪২:৩৮)।
৬. তাওয়াক্কুল (ভরসা): নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা ও দুআ করার পর ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখুন।
এইভাবে দুআ, অনুধাবন ও অনুসরণকে একত্রিত করলে আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে আপনার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পথ দেখাবেন।
ধৈর্য (সবর) এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি (রিদ্বা বিল-ক্বাদা):
ধৈর্য (সবর) এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি (রিদ্বা বিল-ক্বাদা) মুমিনের জীবনের দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এই গুণগুলো অর্জনে এবং কঠিন সময়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার জন্য আল-কোরআনে বিভিন্ন দোয়া ও নির্দেশনা রয়েছে।
1. ধৈর্য (সবর) ধারণের জন্য দোয়া ও আয়াত:
রব্বানা আফরিগ ‘আলাইনা সবরাওঁ ওয়া সাব্বিত আক্বদা-মানা ওয়ানসুরনা ‘আলাল ক্বওমিল কা-ফিরীন।
হে আমাদের রব, আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দিন, আমাদের পা সুদৃঢ় রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন-সূরা আল-বাকারাহ, 2:২৫০
শিক্ষা: এই দোয়ায় আল্লাহর কাছে সবর বা ধৈর্য বর্ষণ করার জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে, যা কঠিন পরিস্থিতিতে অবিচল থাকতে সাহায্য করে।
...رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
...রব্বানা আফরিগ আলাইনা সবরাওঁ ওয়া তাওয়াফফানা মুসলিমীন।
...হে
আমাদের রব, আমাদের উপর
ধৈর্য ঢেলে দিন এবং
আমাদেরকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দান করুন-7:126
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিঊন-2:156
নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী-2:156
·
শিক্ষা: এই আয়াতগুলো আমাদের শেখায় যে, বিপদের সময় "ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন" বলা ধৈর্যের পরিচায়ক এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাত (বিশেষ সংযোগ), রহমত ও হেদায়েত লাভ হয়। এটি আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি আত্মসমর্পণেরও একটি বহিঃপ্রকাশ।
2.আল্লাহর
সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি
অর্জনের
জন্য অনুধাবন ও দোয়া:
কোরআনে সরাসরি "আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার" জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া সেভাবে উল্লেখ না থাকলেও, বহু আয়াত রয়েছে যা এই মানসিকতা তৈরি করতে সাহায্য করে এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা স্থাপন করতে শেখায়।
3. 🔗 অপছন্দনীয়
বিষয়ের মধ্যেও কল্যাণ থাকতে পারে
বান্দা
তার সীমিত জ্ঞানে যা অপছন্দ করে, তার মধ্যেই আল্লাহ অসীম কল্যাণ রাখতে পারেন। এই বিশ্বাস
"রিদ্বা" অর্জনে সাহায্য করে।
আর হতে পারে, কোনো বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে, কোনো বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। সূরা: আল-বাকারা, আয়াত: ২১৬
শিক্ষা: এই আয়াতটি আল্লাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উপর আস্থা রাখতে শেখায়। আমরা যা অপছন্দ করি, তার মধ্যেও কল্যাণ থাকতে পারে, আর যা পছন্দ করি, তার মধ্যে অকল্যাণ থাকতে পারে। তাই আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্ট থাকা উচিত।
ধৈর্য এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি অর্জন একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোরআনের এই দোয়া ও আয়াতগুলো নিয়মিত পাঠ, অনুধাবন এবং জীবনে প্রয়োগ করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই গুণগুলো অন্তরে প্রোথিত হয়। আল্লাহ আমাদেরকে ধৈর্যশীল এবং তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার তৌফিক দান করুন।
তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা) অর্জনের সবসময়কার আমল:
১.
কোরআন তিলাওয়াত ও অনুধাবন (তাদাব্বুর):
* নিয়মিত অর্থসহ কোরআন পড়ুন এবং এর আয়াতসমূহের গভীর মর্ম বোঝার চেষ্টা করুন। বিশেষত
যে আয়াতগুলোতে আল্লাহর ক্ষমতা, জ্ঞান, রহমত এবং তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে,
সেগুলো গভীরভাবে অনুধাবন করুন। এটি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরতা বাড়ায়।
২.
আল্লাহর সৃষ্টি ও নিদর্শন নিয়ে চিন্তাভাবনা (তাফাক্কুর):
* আসমান, জমিন, পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর, দিন-রাতের পরিবর্তন এবং নিজের সৃষ্টির মধ্যে
আল্লাহর অসীম জ্ঞান, ক্ষমতা ও নিপুণতার নিদর্শন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এই তাফাক্কুর
আল্লাহর প্রতি আপনার আস্থাকে সুদৃঢ় করবে। (যেমন: সূরা আলে ইমরান, 3:১৯০-১৯১)
৩.
আল্লাহর প্রতিশ্রুতিসমূহে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন:
* কোরআনে আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের জন্য সাহায্য, রিযিক, ক্ষমা ও সাফল্যের যে প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন, সেগুলোর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখুন। (যেমন: সূরা ইবরাহীম, আয়াত ৭; সূরা
আত-ত্বালাক, আয়াত ২-৩)
৪. উপায়-উপকরণ গ্রহণ ও ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভরতা:
দুনিয়ার প্রয়োজনীয় ও বৈধ উপায়-উপকরণ (আসবাব) গ্রহণ করুন, কারণ আল্লাহই এগুলো দিয়েছেন। তবে, এই উপায়গুলোর উপর ভরসা না করে সেগুলোকে আল্লাহর হুকুম পালনের মাধ্যম হিসেবে দেখুন এবং ফলাফলের জন্য একমাত্র আল্লাহর উপরই নির্ভর করুন।
৫. ধৈর্য (সবর) ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি (রিদ্বা বিল-ক্বাদা):
জীবনের যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করুন এবং আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকুন। বিশ্বাস রাখুন যে, আল্লাহ যা করেন তা বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন, যদিও আপাতদৃষ্টিতে তা কষ্টকর মনে হতে পারে। (যেমন: সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ১৫৫-১৫৭)
৬.
দোয়া ও যিকির:
নিয়মিত দোয়া, তাসবীহ ও যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখুন। বিশেষ
করে যে দোয়া ও যিকিরগুলো তাওয়াক্কুল বৃদ্ধি করে।
গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবন:
তাওয়াক্কুল কেবল মুখে উচ্চারণের বিষয় নয়, বরং এটি অন্তরের এক গভীর প্রত্যয় ও অবস্থা।
উল্লেখিত আমলসমূহ আন্তরিকতার সাথে অনুশীলন করলে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর
উপর নির্ভর করলে ধীরে ধীরে অন্তরে "ভরসা করার মতো ভরসা" বা حقیقی توکل (হাকিকী তাওয়াক্কুল)
সৃষ্টি হবে, বিইযনিল্লাহ!
শেষ কথা:
আল্লাহ তা'আলা আপনাকে সঠিক ও কল্যাণকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের তৌফিক দান করুন, আপনার সকল সৎকাজ সহজ করে দিন এবং তাঁর উপর পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুল করার তাওফীক দিন।
رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ
রব্বানা ওয়া তাক্বাব্বাল দু'আ।
হে আমাদের রব, আর আমার দোয়া কবুল করুন-14:40
video/audio
Leave a Comment