মৎস্য আহরণ: 🐟পেশা যখন ইবাদত। প্রতিটি মাছ আল্লাহর করুণার নিদর্শন। আলকুরআনের শিক্ষায় মৎস্য সম্পদের শুকরিয়া ও সংরক্ষণ
কোরআনের আলোকে মাছ ধরা: রিজিক, নিদর্শন ও পরীক্ষার এক গভীর উপাখ্যান 🎣
১. আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ: সামুদ্রিক শিকার-নেয়ামত ও হালাল জীবিকা হিসেবে মাছ🐟
আল কোরআন সমুদ্রের শিকারকে মানুষের জন্য একটি বিশেষ হালাল নেয়ামত হিসেবে ঘোষণা করেছে। এমনকি হজ্জের ইহরাম অবস্থায়ও এটি বৈধ।
সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত ৯৬: তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার এবং তা খাওয়া হালাল করা হয়েছে, তোমাদের এবং ভ্রমণকারীদের ভোগের জন্য।" অনুধাবন: এই আয়াতটি একটি মৌলিক ঘোষণা। আল্লাহ সাগর ও তার প্রাণীজগতকে মানুষের খাদ্যের জন্য বৈধ করেছেন। এর গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হয় যখন আমরা দেখি যে, হজ্জ বা উমরার ইহরাম অবস্থায় স্থলের প্রাণী শিকার করা নিষিদ্ধ হলেও সমুদ্রের শিকার বৈধ রাখা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে, সাগর আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ রহমত, যা মানুষের জীবিকাকে সহজ করে দেয়।
আল্লাহর অপার নিয়ামতের স্মরণ:
আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা তাঁর অপার নিয়ামতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যা তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। সমুদ্র ও নদী থেকে প্রাপ্ত সম্পদ এমনই এক বিশাল নিয়ামত। সূরা আন-নাহল-এর ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
"আর তিনিই সেই সত্তা, যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা গোশত (মাছ) আহার করতে পারো এবং তা থেকে বের করতে পারো অলংকারাদি, যা তোমরা পরিধান করো। আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে যা পানি চিরে চলাচল করে, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো"-16:14
এই আয়াতে বর্ণিত 'তাজা গোশত' বা মাছ আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক বিশেষ অনুগ্রহ। এই অনুগ্রহকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে আমাদের মৎস্য খাত, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার উৎস এবং পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগানদাতা।
২. কোরআনের ভাষায় 'তাজা গোশত' 🐟
সূরা ফাতির, আয়াত ১২: "...আর উভয় (লবণাক্ত ও মিষ্টি পানি) থেকেই তোমরা তাজা গোশত (মাছ) আহার করো..." অনুধাবন: এখানে আল্লাহ মিষ্টি ও লবণাক্ত উভয় প্রকার পানি থেকে প্রাপ্ত "তাজা গোশত" বা মাছের কথা উল্লেখ করে তাঁর ব্যবস্থাপনার এক সুন্দর চিত্র তুলে ধরেছেন। এটি প্রকৃতির ভারসাম্য ও মানুষের জন্য আল্লাহর নিখুঁত পরিকল্পনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।৩. কোরআনে ব্যবহৃত মাছের বিভিন্ন নাম🐟
কোরআনে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মাছের জন্য বিভিন্ন আরবি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে:
🐟 হূত (حوت): সাধারণ মাছ। সালামুন আলা মূসা এর অলৌকিক ঘটনায় এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
🐟 হীতান (حيتان): মাছের বহুবচন। শনিবারের বিধান লঙ্ঘনকারী জাতির ঘটনায় এই শব্দটি এসেছে।
🐟 নূন (نون): একটি বিশেষ বড় মাছ। সালামুন আলা ইউনুস কে গিলে ফেলা মাছটিকে "নূন" বলা হয়েছে, যার কারণে তাঁর উপাধি হয়েছিল "যুন-নূন" বা "মাছওয়ালা"।
4. আল্লাহর কুদরত ও নিদর্শন হিসেবে মাছ🐟
সালামুন আলা মূসা ও জীবিত মাছের ঘটনা (সূরা আল-কাহফ): মূসা (সা.আ.) যখন আল্লাহর প্রদত্ত এক জ্ঞানী বান্দা-এর সন্ধানে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর সফরের নিদর্শন ছিল একটি মাছ। তাঁদের সাথে থাকা ভাজা মাছটি অলৌকিকভাবে জীবিত হয়ে সমুদ্রে চলে যায়। এই অলৌকিক ঘটনাই তাঁদেরকে সঠিক পথের দিশা দেয়।
সালামুন আলা ইউনুস ও মাছের পেটে আশ্রয় (সূরা আস-সাফফাত): সালামুন আলা ইউনুস যখন আল্লাহর হুকুম অমান্য করে নিজের জাতিকে ছেড়ে চলে যান, তখন তাঁকে একটি বিশাল মাছ গিলে ফেলে। মাছের পেট তাঁর জন্য কারাগার এবং একই সাথে আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। সেখানে তিনি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন এবং আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করেন।
5. আনুগত্য ও অবাধ্যতার পরীক্ষা হিসেবে মাছ🐟
( আয়াত ৭:১৬৩-১৬৬ (২:৬৫, ৪:১৫৪)ইয়াওমা সাবত পালনকারী জাতির ঘটনা বনী ইসরাইলের একটি সম্প্রদায়কে আল্লাহ ইয়াওমা সাবতি সব ধরনের জাগতিক কাজ, বিশেষ করে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষার জন্য আল্লাহ এমন ব্যবস্থা করলেন যে, ঠিক ইয়াওমা সাবতিই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ তাদের তীরের কাছে এসে খেলা করত, অথচ অন্য দিনগুলোতে মাছের দেখা পাওয়া যেত না। লোভে পড়ে তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করল এবং বিভিন্ন কৌশলে ইয়াওমা সাবতিই মাছ ধরতে লাগল। এর ফলস্বরূপ, তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন শাস্তি নেমে আসে।
কোরআনের গভীর পাঠ আমাদের শেখায় যে, মাছ ধরা নিছক একটি সাধারণ কাজ নয়। এটি একই সাথে:
আল্লাহর রিজিক ও নেয়ামত: যা আমাদের কৃতজ্ঞ হতে শেখায়।আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন: যা আমাদের তাঁর ক্ষমতার সামনে বিনয়ী করে।ঈমানের পরীক্ষা: যা আমাদের আনুগত্য ও ধৈর্যশীল হতে অনুপ্রাণিত করে।
চ্যালেঞ্জ ও সংকট
করণীয় ও সম্ভাবনা:
শেষ কথা
কোরআনের আয়াতে যেমনটি বলা হয়েছে, আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করার পাশাপাশি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও আমাদের দায়িত্ব। মৎস্য সম্পদ তেমনই এক অনুগ্রহ, যার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের শ্রেষ্ঠ উপায় হলো এর সঠিক পরিচর্যা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। এই নিয়ামতকে রক্ষা করার মাধ্যমেই আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ রেখে যেতে পারব। এই ঐশ্বরিক দানকে টিকিয়ে রাখা আমাদের সকলের ঈমানী ও নৈতিক দায়িত্ব।
─── ・ 。゚☆: *.☽ .* :☆゚. ───
Leave a Comment