📢 একটি লাইক, একটি কমেন্ট, একটি শেয়ার– সবকিছুই রেকর্ড হচ্ছে 😱 এসবই থাকবে আমলনামায়! ✍️

অশ্লীল, অসুন্দর, ফাহেশা, মন্দ কথা, কটুবাক্য ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ, অপবাদ করার পরিণতি কী? -আল-কোরআন কি বলে? 

ফেসবুক, ইউটিউব বা যেকোনো গণমাধ্যমে Comments-এ নর-নারীকে অশ্লীল, মন্দ কথা, গালিগালাজ বা অপবাদ দেওয়া কি সামান্য বিষয়?

এই বিষয়ে কঠোর সতর্কতা জারি করা আছে, জানা আছে কি? আমাদের প্রতিটি কথা লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে, রেকর্ড  হচ্ছে। 

🔥অশ্লীলতা ও অপবাদ: কঠিন হুঁশিয়ারি! ⚠️

১. কঠোর শাস্তি নিন্দাকারীর জন্য (ওয়াইল): 

যে ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায়, পিছনে নিন্দা করে বা ঠাট্টা করে, তার জন্য রয়েছে কঠিন পরিণতি। 

"ওয়াইল (ধ্বংস বা জাহান্নামের একটি উপত্যকা) প্রত্যেক পরনিন্দাকারী, ঠাট্টাকারীর জন্য।"

— সূরা আল-হুমাযাহ, আয়াত ১০৪:১

১টি ভিডিও রয়েছে পোস্টের নিচের দিকে:

📢 লাইক-কমেন্টস, শেয়ার  সাবধান! স-ব লিখিত রেকর্ড হচ্ছে কিন্তু! 😱 এর পরিণতি কী? 📢

আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় যা কিছু করি – একটি লাইক, একটি কমেন্ট, একটি শেয়ার – সবকিছুই রেকর্ড হচ্ছে! আমরা কি ভেবে দেখেছি, এর পরিণাম কী হতে পারে? আল-কোরআন এই বিষয়ে কী বলে?

আল্লাহর সতর্কবাণী: প্রতিটি কথা ও কাজের হিসেব রাখা হয়! ✍️

১. প্রতিটি শব্দ রেকর্ড করা হয়:
আপনার মুখ থেকে যে কথাই বের হোক না কেন, তা রেকর্ড করার জন্য সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।

"সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তার কাছেই সদা প্রস্তুত প্রহরী (ফেরেশতা) রয়েছে।" 
— সূরা ক্বাফ, আয়াত ৫০:১৮

৩. কর্মফল সামনে উপস্থিত হবে:

"কাজেই কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে তা দেখবে। আর কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে তাও দেখবে।" -সূরা যিলযাল, আয়াত ৯৯:৭-৮

৪. জবাবদিহিতার গুরুত্ব:
আমাদের শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তর – এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। লাইক-কমেন্টস-এর পেছনে আমাদের উদ্দেশ্য ও প্রভাবও এর আওতায় পড়বে। 

"আর যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তার পেছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তর—এগুলোর প্রত্যেকটি সম্পর্কে (কিয়ামতের দিন) প্রশ্ন করা হবে।" -সূরা ইসরা, আয়াত ১৭:৩৬

সুতরাং, লাইক, কমেন্টস, শেয়ার করার আগে সতর্ক হোন! 💡

আমরা কী সমর্থন করছি, কী প্রচার করছি, কার প্রতি কী মন্তব্য করছি – প্রতিটি বিষয়ে আমাদের জবাবদিহিতা রয়েছে। ভালো কথার প্রচারে অংশীদার হোন, মন্দ থেকে বিরত থাকুন।

📌সূরা আন-নিসা (৪:৮৫):

কেউ যদি ভালো সুপারিশ করে, তবে তার জন্য তার একটি অংশ থাকবে। আর কেউ যদি মন্দ সুপারিশ করে, তবে তার জন্য তার (মন্দতার) একটি অংশ থাকবে। আর আল্লাহ সকল কিছুর উপর সর্বশক্তিমান তত্ত্বাবধায়ক।"

আপনার ডিজিটাল পদক্ষেপ, আপনার আখিরাতের পাথেয়! 👣

🤲 রাব্বানা লা তুআখিযনা ইন নাসিনা আও আখত্বা'না।

হে আমাদের রব! যদি আমরা ভুলে যাই অথবা ভুল করি, তবে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। সূরা আল-বাকারাহ (২:২৮৬):

২. নারীদের প্রতি অপবাদ ও মিথ্যা অভিযোগের ভয়াবহতা:

🔥নিশ্চয় যারা সচ্চরিত্রা সরলমনা মুমিন নারীদেরকে অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়ার মধ্যে ও আখিরাতে অভিশপ্ত হয়। আর তাদের জন্য রয়েছে বিরাট শাস্তি। সেদিন তাদের জিহ্বাগুলো ও তাদের হাতগুলো ও তাদের পাগুলো তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে সে ব্যাপারে, যা তারা করত-২৪:২৩-২৪

🔥 "আর যারা সচ্চরিত্রা নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশি ঘা বেত্রাঘাত কর এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। তারাই ফাসেক (পাপী)।" -সূরা নূর, আয়াত ৪

🔥 "যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে বিনা কারণে কষ্ট দেয়, তারা অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।" (সূরা আহযাব, আয়াত ৫৮)

এই আয়াতগুলো অপবাদের ভয়াবহতা নির্দেশ করে। এটি শুধু ব্যক্তির সম্মানহানি করে না, বরং পুরো সমাজে অবিশ্বাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। অপবাদকারীরা আল্লাহর কাছে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে।

৩. বিশ্বাসীদের কষ্ট দানকারীদের শাস্তির বিষয়ে: 

"নিশ্চয় যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং দহনকারী শাস্তি।"  -সূরা আল-বুরুজ, আয়াত ৮৫:১০ 

5. মুমিন পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেওয়া সুস্পষ্ট পাপ: 

গালিগালাজ, কটুবাক্য, ঠাট্টা বা অপবাদের মাধ্যমে কোনো বিশ্বাসীকে কষ্ট দেওয়া একটি বড় গুনাহ।

"যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদেরকে বিনা কারণে কষ্ট দেয়, তারা অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।"  -সূরা আহযাব, আয়াত ৩৩:৫৮ 

6. উপহাস ও মন্দ নামে ডাকার নিষেধাজ্ঞা: 

"হে মুমিনগণ! কেউ যেন অন্যকে ঠাট্টা না করে... একে অপরকে দোষারোপ করো না এবং মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা অতি খারাপ কাজ।" -সূরা হুজুরাত, আয়াত ৪৯:১১ 

7. পরনিন্দা ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের নিষেধাজ্ঞা: 

অন্যের অনুপস্থিতিতে তার দোষ চর্চা করা (গীবত) এবং কাউকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করাও কোরআনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

🔴 ওহে যারা ঈমান এনেছ! কোনো জনগোষ্ঠী যেন কোনো জনগোষ্ঠীকে উপহাস না করে, হতে পারে যে, তারা তাদের থেকে উত্তম হবে। আর না নারীরা কোনো নারীদেরকে, হতে পারে যে, তারা তাদের থেকে উত্তম হবে। আর তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে নিন্দা কোরো না এবং তোমরা পরস্পরকে ব্যঙ্গাত্মক উপাধিসমূহ দিয়ে ডাকবে না। ঈমান আনার পর মন্দ নাম কতই না খারাপ! আর যারা তওবা করে না, তাহলে ওরাই জালিম। (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১১) 

"ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা বেশি বেশি অনুমান করা থেকে বিরত থাক। নিশ্চয় কোনো কোনো অনুমান পাপ। আর দোষ খুঁজে বেড়াবে না এবং তোমাদের একজন অপরজনের পিছনে নিন্দা করবে না। তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে যে তার মৃত ভাইয়ের মাংস খাবে? তখন তোমরা তা অপছন্দ করো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়া।" (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১২)

 

৫. অশ্লীলতার প্রচারে কঠিন পরিণতি: 

🔴আর তোমরা অশ্লীল কাজের ধারেকাছেও যেও না, তা প্রকাশ্য হোক বা গোপনীয়।" (সূরা আন'আম, আয়াত ১৫১)

"নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার পছন্দ করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি -সূরা নূর, আয়াত ২৪:১৯

 

📼 আপনার/আমার প্রতিটি শব্দই সাক্ষী! ⚖ 

সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি যা লিখছেন বা বলছেন, তা সবই রেকর্ড হচ্ছে এবং কিয়ামতের দিন এর হিসাব দিতে হবে। আমাদের জিহ্বা নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব অপরিসীম।

অতএব, বিবেচনা আপনার! 🕊 

🤲 রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফির লানা যুনূবানা ওয়াক্বিনা 'আযাবান্নার।"

অর্থ: আমাদের রব! নিশ্চয় আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের জন্য আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন আর আগুনের শাস্তি থেকে আমাদের রক্ষা করুন!' সূরা আলে-ইমরান (৩:১৬)

১. মন্দ কথা থেকে বিরত থাকা:

আল-কোরআনে স্পষ্টভাবে অশ্লীল ও মন্দ কথা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

🟢"আল্লাহ মন্দ কথা প্রকাশ করা পছন্দ করেন না, তবে যার উপর জুলুম করা হয়েছে সে বলতে পারে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।" (সূরা নিসা, আয়াত ১৪৮)

এই আয়াতগুলো শুধু শারীরিক অশ্লীলতা নয়, বরং মুখের অশ্লীলতা থেকেও বিরত থাকতে নির্দেশ করে। কারণ অশ্লীল কথা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে এবং মানুষের আত্মিক পবিত্রতা নষ্ট করে।

২. গালিগালাজ ও কটুবাক্য পরিহার:

অন্যকে গালি দেওয়া বা কটুবাক্য ব্যবহার করা ইসলামে মারাত্মকভাবে নিন্দনীয়। এমনকি বিধর্মীদের দেব-দেবীকে গালি দিতেও নিষেধ করা হয়েছে, যাতে তারা প্রতিশোধমূলকভাবে আল্লাহকে গালি না দেয়।

🟢 আর তোমরা তাদেরকে গালি দিও না, যাদেরকে তারা আল্লাহ ব্যতীত ডাকে। তাহলে তারাও শত্রুতা করে আল্লাহকে গালি দেবে অজ্ঞানতাবশত। এমনিভাবে প্রত্যেক জাতির কাছে তাদের কার্যকলাপকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর তাদের প্রতিপালকের কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন। তখন তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন, যা কিছু তারা করত।" (সূরা আন'আম, আয়াত ১০৮)

এই আয়াতটি একটি গভীর প্রজ্ঞা বহন করে। এটি শুধু মুখের ভাষা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেয় না, বরং অন্যের বিশ্বাস ও অনুভূতিকে সম্মান করার মাধ্যমে বৃহত্তর সংঘাত এড়ানোর পথও দেখায়। একজন মুমিন কখনোই গালিবাজ, অভিশাপকারী বা অশ্লীলভাষী হতে পারে না।

🔥আমার কী অপরাধ? (তাদের অপরাধ শুধু একটিই!)- আর তাদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো বিদ্বেষ ছিল না, কেবল এই ছাড়া যে, তারা পরাক্রমশালী, প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল।" (সূরা বুরুজ, আয়াত ৮৫:৮)।

⚠️ গালিগালাজ, অপবাদ, ঠাট্টা—সবই মুমিনদের কষ্ট দেওয়ার মাধ্যম। আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি।

🕊️ অতএব বিবেচনা আপনার।

🤲হে আমাদের রব! নিশ্চয় আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদের জন্য আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন আর আগুনের শাস্তি থেকে আমাদের রক্ষা করুন!

⚠️তারপরও না থামলে- আমার কী করনীয়:

অশ্লীল, অসুন্দর, ফাহেশা, মন্দ কথা, কটুবাক্য, গালিগালাজ এবং অপবাদ ইত্যাদির মোকাবেলায় বিশ্বাসীদের করণীয় সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বিশ্বাসীদেরকে অত্যন্ত শালীন ও পরিশীলিত জীবনযাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মন্দ কথার মোকাবেলা কীভাবে করতে হবে, সে বিষয়েও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

কুরআনের কয়েকটি প্রাসঙ্গিক আয়াত নিচে দেওয়া হলো:

১. মন্দকে উত্তম দ্বারা প্রতিহত করা:
আল্লাহ তায়ালা বিশ্বাসীদেরকে মন্দকে ভালো দিয়ে প্রতিহত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে শত্রুও বন্ধুতে পরিণত হতে পারে।

সূরা ফুসসিলাত (৪১:৩৪):
"আর ভালো (হাসানাহ) ও মন্দ (সাইয়্যিআত) সমান নয়। মন্দকে উত্তম দ্বারা প্রতিহত করো; ফলে দেখবে, যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল, সে যেন তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে।"

২. মূর্খদের থেকে পাশ কেটে যাওয়া:
যখন অজ্ঞ বা মন্দ লোক অশ্লীল কথা বলে, তখন বিশ্বাসীদের উচিত তাদের সাথে বিতর্কে না জড়িয়ে সম্মানজনকভাবে পাশ কেটে যাওয়া।

সূরা আল-ফুরকান (২৫:৬৩):

"আর রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে আসে, তখন তারা 'সালাম' (শান্তি) বলে।"

৪. ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতা:

আক্রমণাত্মক বা অশ্লীল কথার মুখোমুখি হলে বিশ্বাসীর অন্যতম প্রধান গুণ হলো ধৈর্য ধারণ করা এবং ক্ষমা করা।

সূরা আশ-শুরা (৪২:৪৩):
"তবে যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, তা তো দৃঢ় সংকল্পের কাজগুলোর অন্তর্ভুক্ত।"

৫. মুখ ফিরিয়ে নেওয়া:
অশ্লীল পরিবেশ বা কথোপকথন থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং এর অংশ না হওয়া।

সূরা আল-কাসাস (২৮:৫৫):
আর যখন তারা কোনো অসার কথা শুনে, তখন তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, 'আমাদের জন্য আমাদের আমল, আর তোমাদের জন্য তোমাদের আমল। সালামুন আলাইকুম! আমরা মূর্খদের সাথে বিতর্কে জড়াতে চাই না।'

📌 এসব আয়াত বিশ্বাসীদেরকে একটি শালীন, ধৈর্যশীল এবং মার্জিত আচরণ করার নির্দেশনা দেয়, এমনকি যখন তারা উস্কানির শিকার হয় তখনও।

আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন!

ভিডিও 

ভিডিও