আমরা কি সৃষ্টির সেরা? আমানতদারিতায় পশুদের থেকে কতটা পিছিয়ে? কখন মানুষ তার মর্যাদা হারায়?
সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত ১৭৯
═══════ • ❖ • ═══════
🔗২টি ভিডিও আছে নিচের দিকে: 📺
এক বিশ্বস্ত প্রহরী: মানবতার কল্যাণে কুকুরের ভূমিকা ও আল্লাহর অপার অনুগ্রহ:
আল কুরআনুল কারীম মানবজাতির জন্য এক পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এতে শুধু ইবাদত-বন্দেগীই নয়, বরং মানুষের সামাজিক, নৈতিক এবং ঐতিহাসিক বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও বিদ্যমান। এমনই এক বিস্ময়কর ও শিক্ষণীয় ঘটনা বর্ণিত হয়েছে ১৮ নং সূরা আল- কাহাফে, যা "আসহাবে কাহাফ" বা গুহাবাসীদের ঘটনা নামে পরিচিত। এই ঘটনায় আমরা একদল ঈমানদার যুবকের সাথে তাদের বিশ্বস্ত সঙ্গী একটি কুকুরের উল্লেখ পাই, যা মানবতার কল্যাণে প্রাণীর ভূমিকা এবং আল্লাহর অপার অনুগ্রহের এক জ্বলন্ত প্রমাণ।
কুরআনে কুকুরের উল্লেখ (সূরা কাহাফ):
সূরা কাহাফে "কালব" (كلب) অর্থাৎ কুকুর শব্দটি মোট চারবার ব্যবহৃত হয়েছে, যা এই প্রাণীর গুরুত্ব ও ঘটনাটির সাথে তার সম্পৃক্ততাকে নির্দেশ করে:
আয়াত ৯: "আপনি কি মনে করেন যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল?"
আয়াত ১৮: "...এবং তাদের কুকুরটি (وَكَلْبُهُم) সম্মুখের পা দুটি গুহার প্রবেশপথে প্রসারিত করে রেখেছিল। যদি আপনি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতেন, তবে অবশ্যই পিছন ফিরে পলায়ন করতেন এবং তাদের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়তেন।"
আয়াত ২২ (প্রথমবার): "(কেউ কেউ) বলবে, তারা ছিল তিনজন, তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর (كَلْبُهُمْ)..."
আয়াত ২২ (দ্বিতীয়বার): "...আর (অন্যরা) বলবে, তারা ছিল সাতজন, তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর (وَكَلْبُهُمْ)..."
গুহাবাসী যুবকদের সঙ্গী ও প্রহরী:
ঘটনাটি এমন একদল যুবকের, যারা তাদের সময়ের স্বৈরাচারী শাসকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নিজেদের ঈমান রক্ষার জন্য লোকালয় ত্যাগ করে এক নির্জন গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর তাদের এই কঠিন যাত্রায় ও নিরাপদ আশ্রয়ে সঙ্গী হয়েছিল একটি কুকুর।
কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, যুবকেরা যখন গুহার ভেতরে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে গভীর নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন, তখন তাদের কুকুরটি গুহার মুখে তার সামনের পা দুটি বিছিয়ে প্রহরীর ভূমিকায় ছিল। এটি শুধু একটি সাধারণ দৃশ্য ছিল না, বরং এর মধ্যে আল্লাহর কুদরত ও حکمت নিহিত ছিল। কুকুরটির এই অবস্থান বাইরের যে কোনো আগন্তুকের জন্য ভীতি সঞ্চারকারী ছিল, যা নিদ্রিত যুবকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল।
মানবতার কল্যাণে প্রাণীর ভূমিকা:
আসহাবে কাহাফের কুকুরের ঘটনাটি আমাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেয়:
১. বিশ্বস্ততা ও প্রভুভক্তি: কুকুর তার বিশ্বস্ততা ও প্রভুভক্তির জন্য পরিচিত। এই কুকুরটিও তার মনিবদের প্রতি চরম বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছে, নিজের আরাম ত্যাগ করে তাদের পাহারায় নিয়োজিত ছিল।
২. নিরাপত্তায় প্রাণীর অবদান: প্রশিক্ষিত ও বিশ্বস্ত প্রাণী মানুষের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই কুকুরটি ছিল যুবকদের জন্য এক নীরব কিন্তু কার্যকর প্রহরী।
৩. আল্লাহর সৃষ্টির বৈচিত্র্য ও উদ্দেশ্য: আল্লাহ তা'আলা প্রতিটি সৃষ্টিকে কোনো না কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য ও গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কুকুর, যাকে হয়তো অনেকে অবজ্ঞা করে, সেও তার বিশেষ গুণের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সেবায় নিয়োজিত হতে পারে।
৪. সৎ সঙ্গে থাকার বরকত: ঈমানদার যুবকদের সংস্পর্শে থাকার কারণে এই কুকুরটিও ইতিহাসে অমর হয়ে আছে এবং পবিত্র কুরআনে তার উল্লেখ এসেছে। এটি সৎ সঙ্গের গুরুত্ব ও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।
৫. আল্লাহর অপার অনুগ্রহ: যুবকদের দীর্ঘকাল নিরাপদে নিদ্রায় রাখা, সূর্যের আলোর গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়া এবং একটি কুকুরকে তাদের পাহারায় নিযুক্ত করা—এ সবই ছিল আল্লাহর অপার অনুগ্রহ ও কুদরতের নিদর্শন। তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের যেভাবে ইচ্ছা সাহায্য করতে পারেন।
সূরা কাহাফের এই কুকুরটির ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন কাহিনী নয়, বরং এটি আমাদের জন্য এক গভীর শিক্ষা। এটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো কিছুই অপ্রয়োজনীয় নয়। এমনকি একটি প্রাণীও যদি সঠিক পথে পরিচালিত হয় এবং সৎ মানুষের সঙ্গী হয়, তবে সেও কল্যাণকর কাজে ভূমিকা রাখতে পারে এবং আল্লাহর রহমতের অংশীদার হতে পারে। আসুন, আমরা আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টিকে সম্মান করি এবং তাদের থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো গ্রহণ করি।
═══════ • ❖ • ═══════
🌿 **সভ্যতার পরিচয়: মানবিকতা ও সহাবস্থান
“আর পৃথিবীর মধ্যে বিচরণশীল কোনো প্রাণী নেই ও স্বীয় বাহুতে ওড়ে এমন কোনো আকাশচারী নেই, তবে তোমাদের মতোই নানা প্রজাতি। আমরা কিতাবের মধ্যে কোনো কিছু বাদ রাখি নাই। তারপর তাদের রবের কাছে তাদেরকে সমবেত করা হবে” (আল-আন'আম ৬:৩৮)।
আজ আড়াইটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল সংলগ্ন মাঠে এক অনন্য দৃশ্য দেখা গেল—কুকুরগুলো আরাম করে দুপুরের রোদে ঘুমাচ্ছে, পাশেই ছাগল নিশ্চিন্তে চরছে। সেখানে আশ-পাশ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা চলাচল করছে, কিন্তু কেউই তাদের বিরক্ত করছে না।
ভিডিও: মূল্যবোধ নিয়ে সমাজের চিত্র কিভাবে একজন শিল্পী তুলে ধরেছেন পোষ্টের নিচের দিকে দেখুন:
ইসলামের পরিভাষায় "আয়াত" শব্দটি শুধু আল-কুরআনের আয়াত বা বাক্যকেই নির্দেশ করে না, বরং আল্লাহর সৃষ্টি ও নিদর্শনসমূহকেও বোঝায়। কুরআনে বহুস্থানে প্রকৃতি, প্রাণীকুল এবং বিশ্বজগতের নানা উপাদানকে "আয়াত" বা আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন—
👉 এ থেকেই বোঝা যায়, আল্লাহর সৃষ্টির প্রতিটি জিনিসই তাঁর অস্তিত্ব, মহিমা ও প্রজ্ঞার নিদর্শন বা আয়াত!
এটাই প্রকৃত সভ্যতা! একজন শিক্ষিত ও মানবিক ব্যক্তি শুধু মানুষের জন্য নয়, বরং তার চারপাশের প্রতিটি প্রাণীর জন্য নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করে। আমাদের ছোটবেলায় হয়তো এমন দৃশ্য দেখা অভ্যস্ত ছিল না, কিন্তু এখন আমরা শিখেছি—প্রকৃতির প্রতিটি জীবেরই নিরাপদে থাকার অধিকার আছে।
আর যদি ঈমানদাররা অহীর আলোকে শুধু রবমুখী হয় (রব্বিউনা-দ্র: আয়াত ৩:১৪৬), তবে মানবতা ও করুণার এই সৌন্দর্য আরও আরও কতই না সুন্দর হতে পারে!
আসুন, আমরা শুধু শিক্ষিত না, বরং সত্যিকারের সভ্য ও মানবিক হওয়ার চেষ্টা করি।
**ওয়ামা তাওফিকি ইল্লাহ বিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন!**
ভিডিও: দেখুন- মূল্যবোধ! নিয়ে কী বলেন এই শিল্পী?
Video-2
#কুরআন #সূরা_কাহাফ #আসহাবে_কাহাফ #কুকুর #মানবতার_কল্যাণ #আল্লাহর_অনুগ্রহ #ইসলামিক_শিক্ষা
Leave a Comment